দিনের শুরুতে খানিকটা মেঘলা আকাশ। পিচে ঘাস। দুই মিলিয়ে দারুণ সিমিং কন্ডিশন। অধিনায়ক লিটন দাস আগের দিনই আভাস দিয়ে রেখেছিলেন টসে জিতে বল করবার। তবে ভাগ্য সহায় হয়নি বাংলাদেশের ১২ তম টেস্ট অধিনায়কের। টসে জিতে আফগানিস্তান শুরুতেই বল করবার সিদ্ধান্ত।
সেই সিদ্ধান্তের সফলতাও পেতে খুব একটা সময় লাগেনি। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই সফলতা আফগানদের হাতে ধরা দেয়। বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ২২ তম বোলার হিসেবে অভিষেকের প্রথম বলেই উইকেট শিকার করেন নিজাত মাসুদ। জাকির হাসানকে ফেরান তিনি। ব্যাটের আলতো ছোঁয়া লেগে বল গিয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক আফসার জাজাইয়ের দস্তানায়।
খানিকটা উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা আফগান শিবিরে। যে ফায়দাটা তুলে নিতে চেয়েছিল বাংলাদেশ সেটাই এবার আফগানদের পক্ষে। যদিও এরপর লাঞ্চের আগে পর্যন্ত আর কোন সাফল্যের দেখা পায়নি আফগানিস্তান। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয় প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নেন। পাশাপাশি রানের চাকাও সচল রাখেন এই দুই ব্যাটার।
১১৬ রানে এক উইকেট হারিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। এরপরের গল্পে কেবলই শান্তর তুলির আঁচড়। মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফেরার পর খানিকটা নড়বড়ে হয়ে যায় ব্যাটারদের মনোযোগ। তেমন কোন বিষয়ই যেন ঘটেনি বাংলাদেশি ব্যাটারদের।
বরং আরও বেশি মনোযোগী হয়ে ব্যাট চালাতে থাকেন মাহমুদুল হাসান জয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দুইজনে মিলে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন টাইগারদের দলীয় সংগ্রহ। আফগান বোলারদের রীতিমত বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছিলেন জয়-শান্ত।
জয় একদিকে যখন অর্ধ-শতকের দেখা পেয়েছেন অন্যদিকে, শান্ত তুলে নিয়েছেন শতক। ঘরের মাটিতে এটিই শান্তর তিন অংকের ইনিংস। জয়ের ৭৬ রানের ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধ-শতক। দুইজনের মেলবন্ধনটা জমে উঠেছিল বেশ।
২১২ রানের জুটি গড়েন শান্ত ও জয়। নিজের দ্বিতীয় শতকের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন শান্ত। তবে মাঝপথে রহমত শাহয়ের বিপক্ষে কাট শট খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন জয়। ১৩৭ বলে ৭৬ রান করে আউট হয়ে যান জয়। নিখুঁত এক টেস্ট ইনিংসের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় একটি মাত্র কাট শট। এরপর মুমিনুল হককে সঙ্গী করে চা বিরতিতে যান শান্ত।
চা-বিরতিতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২৩৫; দুই উইকেট হারিয়ে। চা-বিরতি শেষে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বড় সংগ্রহের দিকে, তেমনটাই ছিল প্রত্যাশিত। কেননা ভরসা জোগাচ্ছিল হাতে থাকা উইকেট। কিন্তু তৃতীয় সেশনের প্রথম ভাগেই মুমিনুল হকের বিদায়। লেগ সাইড দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়া বলে, খানিক ব্যাটের স্পর্শ। ডিআরএস সিদ্ধান্ত আফগানদের পক্ষে।
অন্যদিকে, ১৪৩ রানের মাথায় নিজাত মাসুদের বলের বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা ধরেন শান্ত। যদিও নো-বল করে বসেন মাসুদ। তাতে দ্বিতীয় জীবন পান শান্ত। সেই দ্বিতীয় জীবনের ফায়দা মোটেও তুলতে পারেননি শান্ত। তিন রান বাদেই আগ্রাসী এক শট খেলেন তিনি। তাতে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ আউট হয়ে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে।
অধিনায়ক লিটন দাসও এদিন ছিলেন অনুজ্জ্বল। বেশকিছু সুন্দর শটের পসরা কেবলই সাজিয়ে বসছিলেন তিনি। সেই মুহূর্তে স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। বাংলাদেশের তখন বেগতিক অবস্থা। ২৯০ রানেই নেই পাঁচ উইকেট। সেখান থেকে পরিস্থিতি সামলে দিন শেষ করার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন মুশফিকুর রহিম ও মেহেদি হাসান মিরাজ।
তারা দু’জনে মিলে রানের চাকা সচল রাখেন। পাশাপাশি সচেষ্ট ছিলেন উইকেট বিলিয়ে না দেওয়ার বিষয়ে। শেষমেশ প্রথম দিনে আর কোন উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। ৩৬২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে প্রথম দিন শেষ করে টাইগাররা।