ইউরোকে টেক্কা দিয়েছেন মেসি!

সে কারণে দুই মহাদেশের দুই প্রতিযোগিতায় কে সেরা সেটি নিয়ে মুখরোচক আলোচনা চলছে। কারণ আপাতত কোন লিগ কিংবা টুর্নামেন্টের খেলা সাম্প্রতিক সময়ে নেই। তাই আরো কিছুদিন ইউরো আর কোপা নিয়েই ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে জোরদার আলোচনা চলবে। বর্তমান সময়ে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে যাদেরকে বিবেচনা করা হয় তাদের মধ্যে সফলতার দিক থেকে নিশ্চিতভাবে উপরের নামটি থাকবে লিওনেল মেসির।

শিরোনামটাই কেমন যেন একটু অন্যরকম মনে হতে পারে সবার কাছে। কে সেরা সেটি একজন খেলোয়াড় নিজে বাছাই করেন না। যারা খেলা দেখেন তাদের পাশাপাশি বিশ্লেষকরা সেরার সার্টিফিকেট দিয়ে থাকেন। প্রায় কাছাকাছি সময়ে শেষ হয়েছে ইউরো ২০২০ ও কোপা আমেরিকা কাপের আসর।

সে কারণে দুই মহাদেশের দুই প্রতিযোগিতায় কে সেরা সেটি নিয়ে মুখরোচক আলোচনা চলছে। কারণ আপাতত কোন লিগ কিংবা টুর্নামেন্টের খেলা সাম্প্রতিক সময়ে নেই। তাই আরো কিছুদিন ইউরো আর কোপা নিয়েই ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে জোরদার আলোচনা চলবে। বর্তমান সময়ে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে যাদেরকে বিবেচনা করা হয় তাদের মধ্যে সফলতার দিক থেকে নিশ্চিতভাবে উপরের নামটি থাকবে লিওনেল মেসির।

২০১৬ ইউরো জেতা ক্রিশ্চিয়ানা রোনালদো, সর্বশেষ ব্যালন ডি অর জয়ী বরার্ট লোভানডভস্কিরা এবার ব্যর্থ হয়েছেন। সেখানে দীর্ঘ ২৮ বছর পর শিরোপা আলাদা একটা উচ্চ আসনে আসীন হয়েছে এই আর্জেন্টাইন সুপারষ্টার। নিজের প্রথম মেজর আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের কারণে মেসিকে নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে।

সাথে যোগ হয়েছে বার্সোলানায় থাকা না থাকা নিয়ে। কারণ ১ জুলাই থেকে ফ্রি খেলোয়াড় হিসেবে আছেন আর্জেন্টিনা ও বার্সা অধিনায়ক। টাকার অংকে প্রতিদিন কোটির ওপরে লোকসান হচ্ছে তার। কোপা আমেরিকার চাপায় পড়ে তার দলবদল নিয়ে সেভাবে আলোচনা হচ্ছে না।

এরই মধ্যে ফরাসি জায়ান্ট পিএসজিও নাকি মেসিকে দলে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। সে কারণে এখনো মেসিই থাকছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কোপা জিতে কি ইউরোকে টেক্কা দিয়েছেন, সেটি নিয়েও চলছে আলোচনা। ডাচ কিংবদন্তী ইয়োহান ক্রুইফ বলেছিলেন, ‘দারুণ গোল স্কোরার আর দারুণ খেলোয়াড়ের মাঝে ফারাকটা অনেক বেশি।’ লিওনেল মেসি যেন সে কথাটা প্রমাণে মরিয়া হয়েই নেমেছিলেন কোপা আমেরিকা কাপে।

তিন দশকের কিছু কম সময় আগে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জেতানোর পথে কোপার সব পরিসংখ্যানে পাল্লা দিয়েছিলেন প্রতিযোগিতার অন্য সবার সঙ্গে। পাশাপাশি অনেকেই এমনকি গোল বাদে সব ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গেছেন ইউরোকেও!

কোপা আমেরিকার সর্বোচ্চ গোলদাতা এবার হয়েছেন এই খেলোয়াড়। কোপা আমেরিকার পোডিয়াম-পর্বেই জেনে গেছেন কিভাবে সেরাদের সেরা হয়েছেন। সেখানে মেসি একাই করেছেন ৪ গোল। ইউরোয় সর্বোচ্চ গোল ছিল ক্রিশ্চিয়ানা রোনালদোর ৫ টি।

দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত খেলেই গোল্ডেন বুটের পুরস্কার জিতেছেন। গোলের সংখ্যায় এই এক জায়গাতেই কেবল পরাজিত হয়েছেন মেসি। আর বাকি সব জায়গায় মেসিকে টেক্কা দেওয়াটাও হয়ে গেছে। ইউরোতে ষ্টিফেন জুবেরে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট ছিল ৪ টি। আর কোপা আমেরিকায় মেসির অ্যাসিস্ট তার চেয়ে একটি বেশি, ৫টি। ফ্রি কিকে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক গোল করেছেন দুটো।

অন্যদিকে ইউরোয় একমেবা দ্বিতীয়ম ফ্রি কিক গোলটি মিকেল ড্যামসগার্ডের। ৩৫-এ পা দিলেও প্লে মেকিংয়ে মেসি এখনো আছেন বিশ্ব সেরার মানেই। আর এ কথাটি হরহামেশাই শোনা যায় ইউরোপীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক আসরে তার ছাপ না ফেললে এ কথার যৌক্তিকতা কতটা সেই প্রশ্নও রয়েছে। কিন্তু মেসি ছাপ রেখেছেন নিজের দ্যুতি ছড়িয়ে।

পুরো কোপার আসরেই পাস, গোলের সুযোগ তৈরি, সফল ড্রিবলিং আর নিখুঁত থ্রু বলের ক্ষেত্রেও পেছনে ফেলেছেন ইউরোকে। চারটি ঘরানায় ইউরোর সর্বোচ্চ সংখ্যাগুলো যথাক্রমে ছিল মার্কো ভেরাত্তি (১৪), কেভিন ডি ব্রুইনা (১৬), রাহিম স্টার্লিং (২৩), পেদ্রি গঞ্জালেসের (৪)। এই চারটি বিভাগে মেসিও পেছনে ফেলা সংখ্যাগুলো ছিল যথাক্রমে ২২, ২৬, ৩৬ এবং ৪।

সব ক্ষেত্রেই পেছনে পড়ে রয়েছে ইউরোকে। সব ক্ষেত্রেই যে সংখ্যাগুলো কোপার সর্বোচ্চ তা পরিসংখ্যান দিয়েই স্পষ্ট হয়ে গেছে। সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পর মেসির হাতেই য়ে আসছে গোল্ডেন বুট আর বল তা জানা হয়ে গিয়েছিল ফাইনাল শেষ হওয়ার পরই। আর ওপরের সব পরিসংখ্যান তাকে পাইয়ে দিয়েছে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতিও।

সঙ্গে যখন যোগ হয়েছে টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়নের সোনার পদকটা, পাশাপাশি অনন্য এক কীর্তিও গড়ে বসেছেন এলএম টেন। সর্বোচ্চ গোলদাতার পাশাপাশি সর্বোচ্চ গোলে যোগানদাতা, সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার আর চ্যাম্পিয়নশিপ পদক, ফুটবল ইতিহাসে কোনো টুর্নামেন্টে এমন সব অর্জন এক সঙ্গে কেউ করতে পারেনি কখনোই। এখানে মেসিই প্রথম হয়েছেন।

তবে ‘ইতিহাস’ কথাটায় হয়তো তার এ অর্জন আঁচ করাটা কিছুটা কঠিনই হতে পারে আপনার জন্য। কারণ এমন ‘ইতিহাস’ যে মেসির জন্য আগেও হয়েছে, তবে সেখানে চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা জেতা হয়ে ওঠেনি। ফুটবলে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ ২১টি, কোপা আমেরিকা ৪৫টি, ইউরোর আসরটা ছিল ১৬তম। আফ্রিকান নেশন্স কাপ ৩২ টি, কনকাকাফ গোল্ডকাপ ১৬টি, ১৮টি এশিয়া কাপের সাথে ১০টি ওশেনিয়ান নেশন্স কাপ মিলিয়ে কোনো টুর্নামেন্টই এমন কিছু দেখেনি বিশ্ব।

ফুটবল ইতিহাসের ১৫৯তম আসরে এসে এ কীর্তি নিজের করে নিয়েছেন লিও মেসি। তবে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তিটা যে শিরোপাটাই দিয়েছে, তা বোধহয় আর বলে না দিলেও সবাই বুঝে নেবে। পরিসংখ্যানটা বারবারই প্রমাণ দেবে মেসি কেন এবারের সেরা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...