আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই;
দূরে যাবে তুমি,
দেখা হবে না আর কোনোদিনই।
এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। রীতিমত আকাশ ভেঙে পড়লো ফুটবলের দুনিয়ায়। চারিদিকে হাহাকার, হৈ চৈ!
গতকাল পর্যন্ত খবর ছিল মেসি বার্সায় ফেরার পর আজকে রাতেই চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার আনুষ্ঠানিক আসতে পারে। কিন্তু আশায় গুঁড়েবালি, প্রায় দুই দশক আগে ন্যাপকিনে স্বাক্ষরের পর যেই ঐতিহাসিক যুগের সূচনা হয়েছিল তারই সমাপ্তি ঘটলো। দিনটা হল ২০২১ সালের পাঁচ আগস্ট। বার্সেলোনার ইতিহাসের কালো একটা দিন। অফিসিয়াল এক বিবৃতিতে বার্সা জানিয়েছে – ‘আজ থেকে বার্সা এবং মেসির পথ আলাদা।’
গত মৌসুমেই ভালো স্পোর্টিং প্রজেক্ট না থাকা, ইউরোপ সেরার লড়াই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ক্রমাগত খারাপ ফলাফল, ক্লাবের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি সবমিলিয়ে ক্লাব ছাড়তে ব্যুরোফ্যাক্স পাঠিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু বার্তোমেউয়ের পদত্যাগ এবং মেসির বার্সায় আগমনকালীন প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তা ক্লাবে আসলে ক্লাবে থাকার সম্মতি জানান মেসি। ফলত মৌসুম শেষ হওয়ায় বিগত তিন মাস যাবতই ক্লাবহীন ছিলেন মেসি।
অন্যদিকে বার্তোমেউয়ের রেখে যাওয়া ঋণের বোঝা সামলাতে ব্যস্ত ছিলেন লাপোর্তে। ইউয়েফার অর্থনৈতিক নীতিমালা ভঙ্গ না করে কিভাবে মেসিকে রাখা যায় সেটা নিয়ে দফায় দফায় মেসির এজেন্টের আলোচনা করে গেছেন তিনি। সর্বশেষ আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা জয়ের পর খবর ছিল মেসি বেতন অর্ধেক কমিয়ে বার্সাতেই থাকছেন। কিন্তু এরপরেই উলটে যায় পাশার দান।
লা লিগার নিয়মানুসারে কোনো দল খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ ১৬০ মিলিয়ন ইউরো বেতন দিতে পারবে। বার্তোমেউয়ের আমলে কৌতিনহো, উমতিতি, ওসমান ডেম্বেলে, গ্রিজম্যানদের সাথে অতিরিক্ত বেতনে চুক্তি করায় কোনোভাবেই বার্সা বেতন ১৬০ মিলিয়নের মাঝে আনতে পারছিলো না।
এমতাবস্থায় গত সপ্তাহে আশা আলো হয়ে আসে লা লিগা থেকে প্রাপ্ত ১৭০ মিলিয়ন ইউরোপ্রাপ্তির সংবাদ। কিন্তু সে আশা উবে যেতেও সময় নেয়নি, বিদ্রোহী সুপার লিগ আয়োজনের চেষ্টা করায় লা লিগা কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই মনোক্ষুন্ন ছিল লাপোর্তার উপর। ফলশ্রুতিতে অর্থপ্রাপ্তির সাথে শর্ত জুড়ে দেয় ক্লাবের ১০% মালিকানা থাকবে লি কর্তৃপক্ষের। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি বার্সা বোর্ডের।
আজ সন্ধ্যার পর থেকেই ফুটবলবিশ্বে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে মেসি বার্সা ছাড়ছেন। অবশেষে বার্সা তাদের অফিশিয়াল টুইটারে জানিয়ে দেয়, ‘বার্সা এবং লিও মেসি উভয়পক্ষই নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি ও ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক সমস্যা এবং প্রতিবন্ধকতার কারণে এই সম্মতিকে আনুষ্ঠানিক করা সম্ভব হচ্ছে না।’
মেসি এবং বার্সেলোনা ছিলেন একে অপরের পরিপূরক। একজনকে ছাড়া আরেকজনকে কল্পনায় আনাও দূরহ। মেসি আর মেরুন বার্সা জার্সি গায়ে জড়াবেন না কল্পনা করেই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছেন কোটি দর্শকের। এখন দেখার বিষয় মেসি কোন ক্লাবে নতুন যাত্রা শুরু করেন।
আবার অন্যরকম একটা গন্ধও খুঁজে পেয়েছেন কেউ কেউ। বলাবলি হচ্ছে, লা লিগার কর্তৃপক্ষকে চাপে ফেলতেই ‘মেসিকে বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিতে হচ্ছে’ এমন একটা বার্তা আনুষ্ঠানিক ভাবে দিতে চেয়েছে বার্সেলোনা। তবে, সেই মতের পক্ষের লোক খুবই কম।
আমাদের গেছে যে দিন, একেবারেই কি গেছে, কিছুই কি নেই বাকি?