স্টার্কের পেস বিভ্রাট

এখানে একটা টেকনিক্যাল সমস্যাতেও পড়তে হচ্ছে স্টার্ককে। কারণ উইকেট। উইকেটটা গড়পড়তা উইকেটের চেয়ে যে স্লো - সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই স্লো উইকেট স্টার্কের মত স্পিডস্টারকে করে দিয়েছে সাদামাটা। তাঁর বাউন্সারগুলোকে করছে অকার্য্যকর।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হবার আগে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম ছিলেন মিশেল স্টার্ক। শুধু বাংলাদেশ কেন, যেকোনো দলের জন্যই আতঙ্কের নাম হবেন এই পেসার। তাঁর দ্রুত গতির বল, নিখুঁত ইয়োর্কার কিংবা কার্যকর বাউন্সারে বেসামাল হন বিশ্বের নামী-দামী ব্যাটসম্যানরা। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আফিফের কাভার ড্রাইভের যে ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে সেটা দেখে কে বলবে বোলারটার নাম মিশেল স্টার্ক।

অস্ট্রেলিয়ার বোলিং লাইন আপের মূল ভরসার নাম তিনি। এই মুহুর্তে পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই সাদা বলের ক্রিকেটে স্টার্কের চেয়ে ভয়ানক বোলার নেই। ১৪০-১৪৫ গতির ইয়োর্কারে স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেয়ার ছবি নিয়মিতই দেখা যায়। সেই  ভয়াল মিশেল স্টার্ক বাংলার তরুণ ব্যাটসম্যানদের জন্য যেনো শুধুই একজন বোলার। দুই দলের ব্যাটসম্যানরা যেখানে ধুঁকছে সেই উইকেটেও স্টার্ক প্রচণ্ড ব্যয়বহুল। গত দুই ম্যাচের সবচেয়ে খরুচে বোলার।

একটু পিছনে ফিরে তাকানো যাক। বাংলাদেশে আসার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। সেখানে চার ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র ১ টি উইকেট। প্রথম দুই ম্যাচে রান দিয়েছেন যথাক্রমে ৪০ ও ৪৯। চতুর্থ ম্যাচেও দিয়েছেন ৩৭ রান। এই সংখ্যাগুলো মিশেল স্টার্কের সাথে খুবই বেমানান। তবে তিনিই আবার ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন দুর্দান্ত। ফলে স্টার্ক যে ফর্মে নেই সেই কথাও বলা যাচ্ছেনা।

আরেকটা প্রশ্ন উঠতে পারে উপমহাদেশে তাঁর কার্যকারিতা নিয়ে। তবে পরিসংখ্যান বলে এই অঞ্চলেও তিনি যথেষ্ট সফল। এশিয়ায় এখন অবধি এই পেসার খেলেছেন ১৭ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সেখানে ১৭.৫৫ গড়ে নিয়েছেন ২৭ উইকেট। এমনকি এশিয়ায় তাঁর বোলিং গড় অস্ট্রেলিয়ার থেকেও ভালো। অস্ট্রেলিয়ায় স্টার্কের বোলিং গড় ১৯.০৭। সেখানে ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ১৪ উইকেট। ফলে এশিয়ায় তাঁর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই।

তবে মিরপুরের এই পিচ যেন বাড়তি পরীক্ষাই নিচ্ছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৪ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ৩৩ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ ওভার করেই খরচ করে ফেলেছিলেন ২৮ রান। ফলে স্টার্কের মত বোলারকে দিয়ে ৪ ওভার করায়নি অস্ট্রেলিয়া। সোহান ও আফিফ স্টার্কের বল খেলেছেন একেবারে স্বাচ্ছন্দ্যে। মোদ্দাকথা দুই ম্যাচে স্টার্ক নূন্যতম ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারেননি। প্রয়োজনের সময় উইকেট এনে দেয়ায় ওস্তাদ হলেও এই সিরিজে সেটা দেখা যায়নি।

অথচ আরেক অজি পেসার অ্যান্ড্রু টাইকে নিয়ে খুব বেশি আলোচনা না হলেও তিনি এই কন্ডিশনে বেশ ভালো বল করছেন। বিশেষ করে নিজের গতি বৈচিত্র দিয়েই ভুগাচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। বাংলাদেশের মুস্তাফিজ কিংবা শরিফুল ও এই পিচে দারুণ বল করছেন। গত দুই ম্যাচে মোট ৪৮ টি বল করেছেন মুস্তাফিজ।

তার মধ্যে ৪৬ টি বলই স্লোয়ার করেছেন। মাত্র ২ টি বল করেছেন স্বাভাবিক গতিতে। ফলে তাঁর পেস পড়তে ব্যর্থ হচ্ছে অজি ব্যাটাররা। ওদিকে তরুণ শরিফুল প্রথম ম্যাচে কিছু ভুল করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছেন। নজর দিয়েছেন বোলিং বৈচিত্রতে। এছাড়া শরিফুল বেশ কয়েকটি কার্যকর বাউন্সারও করেছেন দ্বিতীয় ম্যাচে।

মিশেল স্টার্ক মূলত পিছিয়ে যাচ্ছেন এই জায়গাটাতেই। মন্থর পিচেও তিনি নিজের স্বাভাবিক গতির বলই করে যাচ্ছেন। জোরে বল করাই যেন তাঁর একমাত্র সূত্র। ফলে স্লো পিচে তাঁর জোরে করা বলগুলো খুব স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে যাচ্ছে। ব্যাটারদের জন্য আলাদা কোন ভোগান্তি সৃষ্টি করছেন না। ওদিকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও এর কৃতিত্ব দিতে হয়। স্টার্কের বাউন্সার কিংবা ইয়োর্কার এখন পর্যন্ত বেশ ভালো ভাবেই সামলেছেন তাঁরা।

এখানে একটা টেকনিক্যাল সমস্যাতেও পড়তে হচ্ছে স্টার্ককে। কারণ উইকেট। উইকেটটা গড়পড়তা উইকেটের চেয়ে যে স্লো – সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই স্লো উইকেট স্টার্কের মত স্পিডস্টারকে করে দিয়েছে সাদামাটা। তাঁর বাউন্সারগুলোকে করছে অকার্য্যকর।

তবে সিরিজের বাকি ম্যাচগুলো নিয়ে নিশ্চই দুশ্চিন্তায় আছে স্টার্ক ও অস্ট্রেলিয়া। দলের মূল বোলার যদি নিজের চার ওভার করতে না পারেন তাহলে তো চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে দুই ম্যাচে স্টার্ক এটাও নিশ্চই বুঝে গিয়েছেন যে শুধু গতি দিয়ে এই পিচে ব্যাটসম্যানদের ভোগানো যাবে না। তবে দিন শেষে তিনি তো মিশেল স্টার্ক। পরের ম্যাচে তিনি কী পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন সেটিও দেখার বিষয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...