মুমিনুলের ফেরার চিত্রনাট্য

তিন নাম্বার পজিশনে ভুগতে থাকা বাংলাদেশ আজ তাঁদের সেরা ইনিংসটা পেল এই পজিশন থেকেই। ফিরে এসে মুমিনুল খেললেন ৮৪ রানের ইনিংস। মিরপুরের যে উইকেটে আর কেউই করতে পারেনি অর্ধশতকও। ফিরে আসতে হলে তো স্রোতের বিপরীতেই তরীটা বাইতে হয়।

একটা সময় তিন নাম্বার পজিশন মানেই তাঁর নামটা উচ্চারিত হত। দেশের ক্রিকেটের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক রথী-মহারথীদের সাথেও তাঁর তুলনা শুরু হল। এতটা চাপের ভার সামলেও তিনি রান করে যাচ্ছিলেন।

ক্যারিয়ারের শুরুটা চারে, তারপর তিন, শেষ বেলায় আবার চার নাম্বার পজিশনে বাংলাদেশকে সার্ভিস দিয়েছেন। তবে সবাই যেখানে শেষ ভেবে ফেলেছিল, সবাই যেখানে বসিয়ে দিয়েছিল একটা বড় ‘না’। সেখান থেকেই মুমিনুল হকের ব্যাট আবার গান গাইলো। তিনি যেন বলতে চাইলেন, তারপর ভোরবেলা ডিঙিয়েছি চৌকাঠ ভয়ানক সতর্কতায়, এভাবেও ফিরে আসা যায়।

সেই ২০১৩ সাল থেকে শুরু। টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হবার পর থেকেই রান করা শুরু। তবে বিস্ফোরণটা ঘটলো সে বছরই চট্টগ্রামে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮১ রানের ইনিংস। এরপর ঢাকায় ফিরে অপরাজিত ১২৬। তখনই বোঝা গেল মুমিনুলের আসল পরিচয়, আসল তকমা। যত দিন গড়িয়েছে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের এক ব্রাত্য চরিত্র হয়ে উঠেছেন তিনি।

সাদা পোশাকের ক্রিকেট মানেই মুমিনুল হক। প্রতিপক্ষের কঠিন পরীক্ষা নিয়ে ভয়ানক সতর্কতায় রান করে যাওয়া মানেই মুমিনুল হক। বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রথম সাদা পোশাকের তারকা তিনি।

চার নাম্বার পজিশনে রানের বন্যায় ভাসিয়ে দেয়ার পর মুমিনুলকে দেয়া হল গুরুদায়িত্ব। তিন নাম্বার পজিশন সামলাতে হবে তাঁকে। সেই দায়িত্বও মুমিনুল সামলেছেন হেসে খেলে। এরপর তাঁর কাঁধে এলো অধিনায়কত্বের ভার। সেটাও মুমিনুল পালন করলেন হাসি মুখেই।

শুধু মাঠের অধিনায়কত্বই না। একটা টেস্ট বিমুখ জাতিকে নতুন করে টেস্টের মায়ায় আটকানোর দায়িত্বও তাঁর কাঁধে। শুধুই স্পিন নির্ভর একটা দলে পেসারদের বিপ্লব ঘটালেন তিনি। মুমিনুল বিশ্বাস করালেন ম্যাচ জিততে হলে পেসারদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তাঁর হাত ধরে এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদরা এগিয়ে আসলেন।

তাঁর নেতৃত্বেই মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক সেই টেস্ট জয়। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য। বেশিদিন আগের কথা নয়, এই তো এবছরই। তবে হঠাৎই উল্টে পাল্টে গেল সবকিছু। অধিনায়কত্ব হারালেন, একাদশেও জায়গা হারালেন মুমিনুল।

সেটা নিশ্চয়ই তাঁর পারফর্মেন্সের কারণে। গত বছর থেকেই তাঁর ব্যাটের ধার কমতে শুরু করেছিল। এ বছর তো একেবারেই বাজে সময় কাটিয়েছেন। আজকের আগে শেষ নয় ইনিংসে তিনি দুই অংকের স্কোরই করতে পারেননি। শেষ অর্ধশতকও ছিল সেই মাউন্ট মঙ্গানুইতে। এগারো ইনিংস আগে।

এমন অফ ফর্মের কারণেই প্রথমে অধিনায়কত্ব হারান। তারপর জায়গা হারান একাদশ থেকেও। সেই সময়ও মুমিনুল সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছিলেন তিনি মনে করেন না অফ ফর্মে আছেন। মুমিনুলের বিশ্বাসটাই হয়তো তাঁকে আবার ফিরিয়ে এনেছে।

সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন জুনে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। মাস ছয়েক বাদে আবার একাদশে ফিরলেন মুমিনুল। আবার তাঁকে পরীক্ষা দিতে হবে তিন নাম্বার পজিশনে। তাঁর পুরনো জায়গা, ফেলে আসা স্থান।

পৌষের শীত কাটিয়ে সূর্যটা উঁকি দিতে একটু সময় নেয়। তিন নাম্বার পজিশনে মুমিনুল যখন ব্যাট করতে নামলেন তখন সূর্যটা সবে উঁকি দিচ্ছে। এরপর সারাদিনে সূর্য ও মুমিনুল একই সাথে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন।

তিন নাম্বার পজিশনে ভুগতে থাকা বাংলাদেশ আজ তাঁদের সেরা ইনিংসটা পেল এই পজিশন থেকেই। ফিরে এসে মুমিনুল খেললেন ৮৪ রানের ইনিংস।  মিরপুরের যে উইকেটে আর কেউই করতে পারেনি অর্ধ শতকও। ফিরে আসতে হলে তো স্রোতের বিপরীতেই তরীটা বাইতে হয়।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...