এমির বিদ্রূপ, মেসির নিষ্ক্রিয়তা!

আশ্চর্যের বিষয় যে, কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে এমন ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের সময় পাশেই ছিলেন লিওনেল মেসি। বিশেষ করে এমবাপ্পের পুতুল সাজিয়ে এমি মার্টিনেজ তাঁর অধিনায়কের সাথেই দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু মেসি এসব ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপই করেননি, অথচ এই আর্জেন্টাইন সুপারস্টার ক্লাব ক্যারিয়ারে এমবাপ্পের সঙ্গে পিএসজিতে খেলে থাকেন।

তিন যুগ, পুরোপুরি ৩৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে একটি বিশ্বকাপের জন্য; সবচেয়ে সুন্দরতম সময়েই সেই অপেক্ষা ফুরিয়েছে আর্জেন্টিনার। ফুটবল ইতিহাসের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির হাত ধরেই আরাধ্য সেই সোনালী ট্রফি জয় করেছে দেশটি। শ্বাসরুদ্ধকর আর বিস্ময় জাগানিয়া এক ফাইনাল ম্যাচ শেষে শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে আলবিসেলেস্তারা।

দুই সমশক্তির প্রতিপক্ষ ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনা যখন শিরোপার শেষ লড়াইয়ে নেমেছিল তখনই আঁচ করা গিয়েছে উত্তাপ। তবে ম্যাচের অধিকাংশ সময় সেই উত্তাপ টের পাওয়া যায়নি। ৭৯ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা, বিপরীতে ফ্রান্স ছিল ছন্নছাড়া। কিন্তু এরপরই ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পের শরীরে যেন ভর করেছিল আসুরিক শক্তি। মাত্র ৯৭ সেকেন্ডের ব্যবধানে দুই গোল করে দলকে সমতায় ফেরান এই তরুণ।

আক্রমণ আর প্রতি আক্রমণে যখন জমে উঠেছিল অতিরিক্ত সময়ের খেলা, তখনই গোল করে আর্জেন্টিনাকে পুনরায় চালকের আসনে আনেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। অন্যদিকে, অবশ্য থেমে যাননি এমবাপ্পে নিজেও; ম্যাচের প্রায় শেষভাগে পেনাল্টি থেকে গোল করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তিনি। সেই সাথে ফাইনাল ম্যাচকে পৌঁছে দেন টাইব্রেকারে।

পেনাল্টি শুট আউটে নিজে গোল করলেও আরো একবার সতীর্থদের নিষ্প্রভতা হতাশ করে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। ফলে পরাজিত সৈনিক হিসেবেই মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। পুরো ম্যাচ জুড়েই কিলিয়ান এমবাপ্পে ছিলেন নিঃসঙ্গ শেরপা, আর্জেন্টিনার বিরূদ্ধে একাই প্রতিরোধ গড়েছিলেন তিনি। আর এই এমবাপ্পেকে নিয়েই ম্যাচ শেষে বিদ্রুপে মেতে ওঠে আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা।

কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সূচনা ঘটে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের হাত ধরে। এই গোলরক্ষক ড্রেসিংরুমে প্রথম এমবাপ্পেকে নিয়ে মজা করতে শুরু করেন। সতীর্থদের উচ্ছ্বাস থামিয়ে ফরাসি স্ট্রাইকারের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করার প্রস্তাব দেন তিনি; বাকিরাও তাঁর কথায় সম্মতি জানিয়ে যোগ দেয় অ্যাস্টন ভিলার এই ফুটবলারের সাথে।

এমিলিয়ানো মার্টিনেজের এমন আচরণ ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়। ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই প্রশ্ন তোলেন তাঁর মানসিকতা নিয়ে; কেউ কেউ আবার কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন। তবে এসবে থোড়াই কেয়ার এমি মার্টিনেজের। তাঁর বুনো উদযাপন এরপর পায় অন্য মাত্রা।

খোলা বাসে প্যারেড করার সময় পুতুল হাতে করে নিয়ে আসেন ত্রিশ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক। ভাল করে লক্ষ্য করতেই দেখা যায় ওই পুতুলের মুখের জায়গাতে রয়েছে কিলিয়ান এমবাপ্পের ছবি। স্বাভাবিকভাবেই এমন কিছু মেনে নিতে পারেননি অনেকে।

এমিলিয়ানো মার্টিনেজ এবং কিলিয়ান এমবাপ্পের মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল মূলত বিশ্বকাপের আগে। সে সময় একটি সাক্ষাৎকারে এমবাপ্পে বলেছিলেন যে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলো বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে তেমন কষ্ট করে না, যতটা ইউরোপীয়ানদের করতে হয়। এছাড়া আধুনিক ফুটবলে ইউরোপ এগিয়ে আছে বলেও জানান তিনি। আর এমন কথা মেনে নিতে পারেননি এমি মার্টিনেজ।

আশ্চর্যের বিষয় যে, কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে এমন ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের সময় পাশেই ছিলেন লিওনেল মেসি। বিশেষ করে এমবাপ্পের পুতুল সাজিয়ে এমি মার্টিনেজ তাঁর অধিনায়কের সাথেই দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু মেসি এসব ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপই করেননি, অথচ এই আর্জেন্টাইন সুপারস্টার ক্লাব ক্যারিয়ারে এমবাপ্পের সঙ্গে পিএসজিতে খেলে থাকেন।

নতুন চুক্তি অনুযায়ী ফরাসি জায়ান্টদের অঘোষিত বস এখন কিলিয়ান এমবাপ্পে। বলা যায়, ক্লাবের যেকোনো সিদ্ধান্তে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা আছে তাঁর। আর তাই ক্লাব ক্যারিয়ারে মেসির জন্য জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে কারণ জাতীয় দলের সতীর্থরা মেসির উপস্থিতেই এমবাপ্পেকে উপহাস করেছিল।

আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হওয়া সত্ত্বেও ক্লাব সতীর্থের পক্ষে দাঁড়াননি লিওনেল মেসি। চাইলে হয়তো ডি পল, মার্টিনেজদের বুনো উল্লাসের লাগাম কিছুটা হলেও টেনে ধরতে পারতেন তিনি। তাই তো পিএসজিতে সাবেক বার্সা তারকার ভবিষ্যত কেমন হবে সেটি নিয়ে পুনরায় গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে ফুটবল পাড়ায়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...