উন্মুক্ত গগনের উদ্বেলিত ফরাসি মৃদুবায়

গত বছরখানেক ধরেই সময়টা ভালো যাচ্ছিল না ফ্রান্সের। ইউরোর পাশাপাশি নেশন্স লিগেও ব্যর্থ ছিলেন দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরা। কিন্তু বছর ঘুরে দুয়ারে বিশ্বকাপ হাজির হতেই যেন পুরনো রূপে ফরাসিরা। কাতার বিশ্বকাপে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-১ গোলের সহজ জয়ে শেষ আটের টিকিট কেটেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। 

গত বছরখানেক ধরেই সময়টা ভালো যাচ্ছিল না ফ্রান্সের। ইউরোর পাশাপাশি নেশন্স লিগেও ব্যর্থ ছিলেন দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরা। কিন্তু বছর ঘুরে দুয়ারে বিশ্বকাপ হাজির হতেই যেন পুরনো রূপে ফরাসিরা। কাতার বিশ্বকাপে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-১ গোলের সহজ জয়ে শেষ আটের টিকিট কেটেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। 

পোল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করে থিয়েরি অঁরিকে পেছনে ফেলে ৫২ গোল নিয়ে ফ্রান্সের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন অলিভার জিরুদ। অথচ করিম বেনজেমা ইনজুরির কারণে ছিটকে না গেলে একাদশে সুযোগই পাবার কথা নয় তাঁর। অন্যদিকে জোড়া গোল করে কিলিয়ান এমবাপ্পে জানান দিয়েছেন মেসি-রোনালদোর রেখে যাওয়া জুতোয় পা গলানোর সামর্থ্য তিনি রাখেন ভালোভাবেই।

কোয়ার্টার ফাইনালে আল বায়েত স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ফুরফুরে মেজাজে থাকা ফ্রান্স। দেশমের শিষ্যদের সামনে হাতছানি দিচ্ছে ৬০ বছর বাদে ব্রাজিলের পর বিশ্বকাপ ধরে রাখার বিরল অর্জনের। সেটা করতে পারলে দেশম হবেন ভিক্টোরিও পোজ্জোর পর বিশ্বকাপ ধরে রাখা দ্বিতীয় কোচ। ১৯৩৪ এবং ১৯৩৮ সালে ইতালির হয়ে এই কৃতিত্ব গড়েন পোজ্জো। 

হতাশাজনক এক ইউরো কাটানোর পর এবারের বিশ্বকাপ ফ্রান্সের কাছে পুর্নজাগরণের মঞ্চ। ইউরোতে সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ডে থেকেই ছিটকে গিয়েছিল ফরাসিরা। টাইব্রেকারে পেনাল্টি মিস করে হাস্যরসের পাত্র হয়েছিলেন এমবাপ্পে।

অন্যদিকে জিরুদ তো বেনজেমার কাছে একাদশের জায়গা খুইয়ে পুরো টুর্নামেন্টেই বেঞ্চে বসে ছিলেন। এমনকি স্টেডিয়ামে থাকা খেলোয়াড়দের পরিবারও বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। স্বাগতিক হাঙ্গেরির দিকেও আঙুল তুলেছিলেন অনেকে, ফ্রান্স দলকে নাকি নিম্নমানের হোটেলে রাখা হয়েছিল। 

অন্যদিকে চাকরি হারানোর শংকায় ভুগছিলেন ২০১২ সালে ফ্রান্সের দায়িত্ব নেয়া দিদিয়ের দেশ্যম। ২০১৮ বিশ্বকাপ জিতে নিজের সামর্থ্যের জানান দিলেও চাকরি ধরে রাখতে সেটাই যথেষ্ট ছিল না। কে না জানে, জিনেদিন জিদান তীর্থের কাকের মতোই অপেক্ষায় আছেন জাতীয় দলের কোচ হবার জন্য। শোনা যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপের পরই দেশ্যমের স্থলাভিষিক্ত হবেন কিংবদন্তি এই ফুটবলার।

একপর্যায়ে পল পগবার ভাই ম্যাথিয়াস পগবা দাবি করেন পগবা নাকি এমবাপ্পের খারাপ ইনজুরির জন্য জাদুটোনা করেছেন। পগবা সেই দাবি উড়িয়ে দিলেও সংবাদমাধ্যমে বেশ আলোচনা ছড়িয়েছিল। কেবল তাই নয়, বিশ্বকাপ যত এগিয়ে এসেছে ফ্রান্সের ইনজুরি লিস্ট তত লম্বা হয়েছে।

২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ের দুই কাণ্ডারি এনগোলো কান্তে এবং পল পগবা খেলতে পারবেন না জানা ছিল আগেই। এছাড়াও প্রেসনিল কিমপেম্বে, ক্রিস্টোফার এনকুকু, করিম বেনজেমা ছিটকে গেছেন ইনজুরির কারণে। ফলে বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকায় ছিলেন অনেকেই। 

কিন্তু, বিশ্বকাপ শুরু হতেই অন্য রূপে ফ্রান্স। সিনিয়রদের অনুপস্থিতিতে পাওয়া সুযোগটা ভালোভাবেই কাজে লাগাচ্ছেন তরুণরা। রক্ষণে ভরসা জোগাচ্ছেন দুই তরুণ দায়োট উপামেকানো এবং জুলস কুন্ডে। মিডফিল্ডে ভারসাম্য এনে দিয়েছেন এবারের মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেয়া অরেলিয়ের শুয়ামেনি। ক্লাব ফুটবলে ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবে খেলা ফুটবলারদের এক সুতোয় গাঁথার কাজটা করেছেন অভিজ্ঞ দেশম।

গত বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচে খেললেও কোনো গোল পাননি অলিভার জিরুদ। এবারের বিশ্বকাপ তাঁর জন্য ছিল শাপমোচনের, ভাগ্যের জোরে পাওয়া সুযোগটা কি দারুণভাবেই না কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। ৩৬ বছর বয়সেও সেই পুরনো ধারটা যেন ফিরে পেয়েছেন!

তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছেন নাম্বার নাইন পজিশনে খেলা আতোয়ানে গ্রিজম্যান। ক্লাবে যেমনই ফর্মে থাকুক, জাতীয় দলের জার্সিতে গ্রিজম্যান বরাবরই উজ্জ্বল। মিডফিল্ডে তরুণ শুয়ামেনির সাথে ভারসাম্য এনে দিয়েছেন আদ্রিয়ান রাবিওট। অন্যদিকে দ্বিতীয়ার্ধে বেঞ্চ থেকে নেমে খেলায় গতি এনে দেবার কাজটা করছেন বার্সার উসমানে দেম্বেলে। 

অন্যদিকে গত বিশ্বকাপে যেখানে শেষ করেছিলেন, কাতার বিশ্বকাপে যেন সেখান থেকেই শুরুটা করেছেন এমবাপ্পে। তারকাঠাসা ফ্রান্স দলের সবচেয়ে বড় তারকা পিএসজির এই তরুণই। পোল্যান্ডের বিপক্ষেও করেছেন জোড়া গোল। ম্যাচের পর পোলিশ রাইটব্যাক ম্যাট ক্যাশ জানান এমবাপ্পে মুগ্ধতার কথা।

তিনি বলেন, ‘সে অবিশ্বাস্য, আমার মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। আমি সারা বিকেল তাঁর ভিডিও দেখে কাটিয়েছি এবং তাঁকে সামলানোর কৌশল বের করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যখন সে বলের দখল পায় এবং দৌড় শুরু করে, তাঁকে আটকানোর কোনো উপায় থাকে না।’ 

এমবাপ্পে ছাড়াও হুগো লরিস, রাফায়েল ভারানে, আতোয়ানে গ্রিজম্যান, অলিভিয়ের জিরুড ২০১৮ বিশ্বকাপ ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে একাদশে ছিলেন। পোল্যান্ডের বিপক্ষেও একাদশে ছিলেন এই পঞ্চরত্ন। দারুণ বিল্ডআপ হোক কিংবা দুরন্ত গতির কাউন্টার অ্যাটাক দুই ক্ষেত্রেই ফ্রান্স অপ্রতিরোধ্য। 

ফরাসি অধিনায়ক হুগো লরিস তাই স্বপ্ন দেখছেন টানা দুবার বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরার। তাঁর ভাষায়, ‘আপনি যখন বিশ্বকাপে আসবেন, সাফল্যের কোনো সীমা রাখতে চাইবেন না। যতটা সম্ভব সামনে এগিয়ে যেতে চাইবেন।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...