মরক্কোর রুপকথা ছাপিয়ে ফ্রান্সের জয়গান

মরক্কোর রুপকথার অবসান ঘটলো অবশেষে। ফ্রেঞ্চ জয়রথের গল্পে মরক্কোর রুপকথা ফিকে পরে যায়। অশ্রুসিক্ত নয়নে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হল অ্যাটলাস টাইগারদের।

মরক্কোর রুপকথার অবসান ঘটলো অবশেষে। ফ্রেঞ্চ জয়রথের গল্পে মরক্কোর রুপকথা ফিকে পরে যায়। অশ্রুসিক্ত নয়নে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হল অ্যাটলাস টাইগারদের। তবে ম্যাচের একেবারে শেষ অবধি, এক চুল পরিমাণ ছাড় দেয়নি আফ্রিকার দেশটি। এক কিলিয়ান এমবাপ্পের অতিমানবীয়তাই স্বপ্ন যাত্রার সমাপ্তি ঘটায়।

বিশ্বকাপে দু’টো দলের পথযাত্রা ভিন্ন। একদল যখন নিজেদের শিরোপা রক্ষায় মগ্ন, তখন অন্য দলের লক্ষ্য কেবলই ইতিহাস রচনা। প্রথমবারের মত কোন আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে যাবার হাতছানি মরক্কোর সামনে। অন্যদিকে দারুণ ছন্দে থাকা ফ্রান্সের সামনেও ইতিহাস রচনার সুবর্ণ সুযোগ। ইতালি ও ব্রাজিলের পর টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগটা হেলায় হারিয়ে ফেলার পাত্র নয় দিদিয়ের দেশমের দল।

তাইতো শুরু থেকেই আগ্রাসী কিলিয়ান এমবাপ্পে, অলিভার জিরুডরা। এই টুর্নামেন্টের শুরু থেকে সেমিফাইনাল অবধি মরক্কোর জালে কেবল একটিবার বল জড়িয়েছে। তাও আবার আত্মঘাতি গোলে। অর্থাৎ কোন দল মরক্কোর রক্ষণ দূর্গে ছেদ ঘটাতে পারেনি। তবে ফ্রান্সের গতির সামনে সেমিফাইনালের প্রথমার্ধে খুব বেশি সময় প্রতিরোধ গড়তে পারেনি মরক্কো। মাত্র পাঁচ মিনিটের মাথায় মরক্কোর রক্ষণের জটলা কাজে লাগিয়ে বল জালে জড়ান থিয়ো হার্নান্দেজ।

নিজেদেরকে গুছিয়ে নেওয়ার আগেই ১-০ গোলে পিছিয়ে যায় অ্যাটলাস টাইগাররা। এরপরই যেন হুশ ফিরে আসে ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের শীর্ষ্যদের। তাঁরা নিজেদের খেলাটা গুছিয়ে নিতে শুরু করে। হাকিম জিয়েচ, আশরাফ হাকিমিরা সুযোগ পেলেই হানা দিয়েছেন ফ্রেঞ্চ রক্ষণে। তবে সফলতা পায়নি দলটি। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে রীতিমত মুহুর্মুহু আক্রমণ চালাতে থাকে মরক্কো। জাওয়াদ এল ইয়ামিকের দুর্দান্ত বাইসাইকেল শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ম্যাচে সমতা ফেরানোর সবচেয়ে বড় সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে যায় মরক্কোর।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের চেপে ধরে মরক্কো। বলের দখল থেকে শুরু করে, আক্রমণ সাজানো সবখানেই ফ্রান্সের থেকে এগিয়ে ছিল ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের দল। তবে অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে কাজের কাজটি করতে ব্যর্থ হয় মরক্কান খেলোয়াড়রা। দারুণভাবে সাজানো আক্রমণের প্রতিটিই ফিরে এসেছে ফ্রেঞ্চ রক্ষণের দৃঢ়তায়। সেখানে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন লেস ব্লুস ডিফেন্ডার ইব্রাহিমা কোনাটে। রক্ষণে অভাবনীয় পারফরমেন্স করে অক্ষত রেখেছেন গোলবার।

তবুও মাত্র এক গোলের ব্যবধানে আশাহত হয়নি মরক্কো। তাঁরা একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে। তবে স্রোতের বিপরীতে ফ্রান্স পেয়ে যায় নিজেদের দ্বিতীয় গোলের দেখা। ম্যাচের ৭৯ মিনিটের মাথায় র‍্যান্ডাল কোলো মুয়ানি ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। বদলি হিসেবে নামার পর প্রথম টাচেই গোলটি আদায় করেন তরুণ এই আক্রমণভাগের খেলোয়াড়। তবে এই গোলের পেছনেও অবদান রেখেছিলেন এমবাপ্পে। ডি-বক্সের মধ্যে চারজন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে শট চালান এমবাপ্পে।

তবে সে শট প্রতিহত হয়। ফাকায় দাঁড়িয়ে থাকা মুয়ানি ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়ালে মরক্কোর ম্যাচে ফেরার সব আশা ক্রমশ বিলীন হতে থাকে। শেষ অবধি নিজেদের সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে দিয়েও ইতিহাসের অন্যপাশেই রয়ে গেল মরক্কো। মরক্কান রুপকথা থেমে গেল সেমিফাইনালেই। আগামী ১৮ ডিসেম্বর ফাইনালে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা। এবারের বিশ্বকাপে হোচট খেয়ে শুরু করা আর্জেন্টিনা ঘুরে দাঁড়িয়েছে অবিশ্বাস্যভাবে।

মানসিকভাবে উৎফুল্ল আর্জেন্টিনা দলটাকেই হারিয়ে তবেই বিশ্বকাপ শিরোপা রক্ষা করতে হবে লেস ব্লুসদের। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে ফাইনালে ফ্রান্স পাচ্ছে ইনজুরিমুক্ত করিম বেনজেমার সার্ভিস। জম্পেশ একটা ফাইনালের আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। এখন অপেক্ষা কেবল আগামী রবিবারের।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...