বিশাল বিরতিও বাঁধা হয়নি

টেস্ট ক্রিকেট খেলা যেকোনো ক্রিকেটারের স্বপ্ন। টেস্ট খেলুড়ে দেশের অনেক ক্রিকেটারের এই স্বপ্ন পূরণ হয়। কিন্তু টেস্ট খেলার স্বপ্ন পূরণ হওয়া মানে তো আর এটা নয় যে, এক ম্যাচ খেলেই দল থেকে বাদ চলে যাওয়া।

কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ঘটনা অহরহই ঘটে যাচ্ছে। দূর্দান্ত পারফর্ম করে কেউ টেস্ট দলে নিজেকে মেলে ধরছেন আবার কেউ নিজেকে হারিয়ে খুঁজেন। ভালো না খেললে দল থেকে বাদ পড়বেন এটাই স্বাভাবিক,ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করে বেশ দ্রুতই জাতীয় দলে ফিরে আসবেন সেটাই প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু অনেক ক্রিকেটার আছেন যারা একবার টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছেন। দল থেকে বাদ পড়ার পর দীর্ঘ সময় পর জাতীয় দলে ফিরে এসেছেন।

যেসব ক্রিকেটারের দুই টেস্ট খেলতে বেশ সময় অতিবাহিত হয়েছে তাঁদেরকে নিয়ে খেলা ৭১ এর আজকের এই আয়োজন।

  • গ্যারেথ ব্যাটি (ইংল্যান্ড)

২০০৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক এই অফ স্পিনারের। কিন্তু নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি গ্যারেথ ব্যাটি। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মোট চার টেস্ট খেলে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন। এরপর আরো তিন বার জাতীয় দলে ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু কখনোই বলার মত কোনো পারফর্মেন্স করতে পারেননি।

২০০৩ সালের পর ২০০৪ সালে এক টেস্ট এবং ২০০৫ সালে দুই টেস্ট খেলে বাদ পড়েন গ্যারেথ ব্যাটি। এরপর দীর্ঘ ১১ বছর ১৩৭ দিন ২০০৬ সালে ইংল্যান্ড দলে ফেরেন গ্যারেথ ব্যাটি। এই সময়ের মধ্যে ইংল্যান্ড দল খেলে ফেলেছিলো ১৪২ টেস্ট। ১৪২ টেস্ট পর দলে ফিরে মাত্র দুই টেস্ট খেলেই বিদায় নেন তিনি।

  • মার্টিন বিকনেল (ইংল্যান্ড)

মার্টিন বিকনেলকে বলা হয় ইংল্যান্ডের অন্যতম আন্ডাররেটেড একজন পেসার। জাতীয় দলের হয়ে খুব বেশি ম্যাচ না খেললেও কাউন্টি ক্রিকেটে সবসময় পারফর্ম করে গেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অন্যসব পেসারদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পাননি তিনি।

মার্টিন বিকনেলের টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ১৯৯৩ সালে অ্যাশেজ সিরিজে। কিন্তু ভালো পারফর্ম করতে না পারার কারণে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন। এরপর যখন জাতীয় দলে সুযোগ পান ততদিনে ইংল্যান্ড দল খেলে ফেলেছিলো ১১৪ টেস্ট এবং সময়ের ব্যবধান ছিলো ১০ বছর ১৩৭ দিন। এতো দিন পরে ৩৪ বছর বয়সে জাতীয় দলে দুই টেস্টে মোটামুটি মানের পারফর্ম করেছিলেন। কিন্তু বয়স হয়ে যাওয়ায় আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন মার্টিন বিকনেল।

  • ফ্লয়েড রেইফার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা তৈরি করে জাতীয় দলে আসেন ফ্লয়েড রেইফার। ১৯৯৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। কিন্তু দুই টেস্টে প্রত্যাশা মত পারফর্ম করতে না পারার কারণে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। এরপর ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে আরো দুই টেস্ট খেলে দল থেকে বাদ পড়েন ফ্লয়েড রেইফার।

এরপর ১০ বছর ১৭২ দিন পর আবারো ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ফেরেন রেইফার। কিন্তু সেটা নিজের যোগ্যতায় নয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের আগে দলের নিয়মিত ক্রিকেটাররা আন্দোলন করলে তাঁদের অনুপস্থিতিতে দলে সুযোগ পান তিনি।

ফ্লয়েড রেইফারের এই দীর্ঘ বিরতির এই সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল খেলেছিলো ১০৯ টেস্ট। ২০০৯ সালে দলে ফিরে মাত্র দুই টেস্ট খেলে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। এরপর আর জাতীয় দলে ফেরা হয়ে উঠেনি তাঁর।

  • ইউনিস আহমেদ (পাকিস্থান)

পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান ইউনিস আহমেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ১৯৬৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্ট খেলে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।

এরপর আবারো জাতীয় দলে ফেরেন ইউনিস আহমেদ, সেটা ১৯৮৭ সালে। মাঝখানে কেটে গিয়েছিলো ১৭ বছর ১১১ দিন। আর এই সময়ের মধ্যে পাকিস্থান দল খেলেছিলো ১০৪ টেস্ট।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বেশ ভালো পারফর্ম করলেও জাতীয় দলে সেই পারফর্মেন্সের ছিটেফোটাও দেখাতে পারেননি ইউনিস আহমেদ।

  • ড্যারেক শ্যাকেলটন (ইংল্যান্ড)

কাউন্টি ক্রিকেটে বেশ নিয়মিত পারফর্মার ছিলেন ড্যারেক শ্যাকেলটন। নিয়মিত এবং আক্রমণাত্মক বোলিংয়ের জন্য পরিচিতি ছিলো তাঁর।

এই পরিচিতির উপর ভিত্তি করেই জাতীয় দলে সুযোগ পান ড্যারেক শ্যাকেলটন। ১৯৫০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক। কিন্তু ভালো পারফর্ম করতে না পারায় দল থেকে বাদ পড়েন। এরপর ১৯৫১ সালে আবারো সুযোগ পান তিনি, এই বার মাত্র ২ টেস্ট খেলেই বাদ পড়েন শ্যাকেলটন।

এরপর জাতীয় দলে ফিরে আসেন ১৯৬৩ সালে। ততদিনে ইংল্যান্ড দল খেলেছিলো ১০৩ টেস্ট এবং সময়ের ব্যবধান ছিলো ১১ বছর ২২৫ দিন। এইবার টানা চার টেস্ট খেলেছিলেন কিন্তু জাতীয় দলে নিজের জায়গা ঠিক ধরে রাখতে পারেননি। কারণ তিনি একটি উইকেটের পিছনে অনেক বেশি রান দিতেন। এই কারণেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার দীর্ঘ হয়নি তাঁর।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link