ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি ফুটবলারের তিন বছর

বেশ অনেকদিন ধরেই দলবদলের বাজারে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। অবশেষে ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে, ২২২ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফির বিনিময়ে বার্সেলোনা থেকে পাড়ি জমাচ্ছেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনে। আর এর মাধ্যমে ওই সময়ে ২৫ বছর বয়সী নেইমার বনে যান একক ট্রান্সফারে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবল খেলোয়াড়। কেননা এর আগে একক ট্রান্সফারে বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের মুকুট ছিল পল পগবার মাথায়। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট তাঁকে দলে ভেড়াতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ১০৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়েছিল জুভেন্টাসকে।

নেইমারের এই অবিশ্বাস্য ট্রান্সফার ফি আরো অনেক রেকর্ডেরই জন্ম দেয়। যেমন এটিই এখন পর্যন্ত ফুটবল দলবদলের ইতিহাসে সর্বাধিক ট্রান্সফার ফি’র হার বৃদ্ধির রেকর্ড। ১৯৩২ সালে ২৩,০০০ পাউন্ডের বিনিময়ে রিভার প্লেটে যোগদানের মাধ্যমে বারনাবে ফেরেরিয়া পেছনে ফেলেছিলেন ১৯২৮ সালে ডেভিড জ্যাকের ১০,৮৯০ পাউন্ডের বিনিময়ে আর্সেনালে যাওয়ার রেকর্ডকে। এক্ষেত্রে ফেরেরিয়ার ট্রান্সফার ফি ছিল জ্যাকের ২.১১২ গুণ। কিন্তু নেইমারের ট্রান্সফার ফি ছিল পগবার ২.১১৪ গুণ। অর্থাৎ নেইমারকে দলে নিতে পিএসজির যে খরচ হয়েছে, ওই সমপরিমাণ খরচে তারা অনায়াসে দুইটি পগবাকে কিনে নিতে পারত!

২২২ মিলিয়ন ইউরো যে ঠিক কী বিশাল অঙ্ক, তা হয়তো অনেকে কল্পনাও করতে পারেন না। তাদের সুবিধার জন্য বিবিসি দিয়েছিল এই হিসাব: একজন নেইমারের দামে আপনি কিনতে পারেন তিনটি বোয়িং ৭৩৭-৭০০ প্যাসেঞ্জার প্লেন, কিংবা ৭৯৭ মিলিয়ন ফ্রেডো চকোলেট বার, অথবা পুরো বার্সেলোনা শহরকে ঢেকে দেয়ার মতো স্প্যাগেট্টি (এক ধরনের পাস্তা)।

নেইমারের পিএসজিতে যাওয়ার পর ফুটবল বিশ্ব দেখেছে আরো বেশ কয়েকটি শত মিলিয়ন ইউরোর দলবদল। এমনকি পগবাকেও টপকে গেছে পাঁচজন, যাদের মধ্যে সবার উপরে আছেন কিলিয়ান এমবাপে। মোনাকো থেকে তাকে নিজেদের দলে ভেড়াতে পিএসজি খরচ করেছে ১৩৫ মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু এতদিনেও ২০০ তো দূরে থাক, ১৫০ মিলিয়ন ইউরোর কোনো দলবদলও আর দেখা যায়নি।

এদিকে নেইমার শুধু একক ট্রান্সফার ফিতেই বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার নন, তিনি সবগুলো ট্রান্সফার ফি মিলিয়েও বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার। ২০১৩ সালের জুনে তিনি যখন সান্তোস থেকে বার্সেলোনায় এসেছিলেন, তখন কাতালান ক্লাবটিকে গুনতে হয়েছিল ৮৬.২ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মাত্র দুইবার দলবদল করেই নেইমারের মোট ট্রান্সফার ফি দাঁড়িয়েছে ৩০৮.২ মিলিয়ন ইউরো।

এখানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তিনি এখন পর্যন্ত মোট তিনবার দলবদল করেছেন। ২০০৩ সালে তাকে ১৯ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে স্পোর্টিং সিপি থেকে নিয়ে এসেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ২০০৯ সালে রোনালদো ৯৪ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফিতে রেড ডেভিলদের থেকে চলে এসেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদে। আবার ২০১৮ সালে তিনি ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে পাড়ি জমান জুভেন্টাসে। মোটমাট তিনবার দলবদলে তার মোট ট্রান্সফার ফি ২১৩ মিলিয়ন ইউরো।

ট্রান্সফার ফি ছাড়াও নেইমারের রয়েছে আরেকটি বিশ্বরেকর্ড, যেজন্য তিনি নাম তুলেছেন গিনেজ বুক অভ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। সেটি হলো অলিম্পিকে পুরুষদের ফুটবল ম্যাচে দ্রুততম গোলের রেকর্ড। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকের সেমিফাইনালে হন্ডুরাসের বিপক্ষে সেমিফাইনালে কিক অফের মাত্র ১৪ সেকেন্ড পরই গোল করেন নেইমার।

এখন প্রশ্ন হলো, রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে যে নেইমারকে দলে নিয়েছে পিএসজি, সেই খরচ কি উসুল করতে পেরেছে ফরাসি ক্লাবটি? খুব সম্ভবত না। কারণ ইনজুরি জর্জরিত নেইমার মিস করেছেন পিএসজির প্রায় অর্ধেক ম্যাচ। এখন পর্যন্ত তিনি পিএসজির জার্সিতে খেলেছেন ৮২ ম্যাচ, যেখান থেকে তার গোলসংখ্যা ৭০, এবং অ্যাসিস্ট ৩৯। প্রতিটি ম্যাচের জন্য নেইমার পেয়েছেন ১,৪০০,০০০ ইউরো করে। অর্থাৎ ৮২ ম্যাচ খেলে তিনি পেয়েছেন ১১৪.৮০ মিলিয়ন ইউরো। যেহেতু এখন পর্যন্ত তার গোলে অবদান ১০৯টি, অর্থাৎ সেগুলোর প্রতিটির দাম ১,০৫৩,২১১ ইউরো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link