ক্রিকেটের দুনিয়ায় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ভিন্ন একটা আবহ সৃষ্টি করেছে অনেক দিন হল। আইপিএল মানেই ক্রিকেট বিশ্বের জন্য আলাদা আবেদন, আলাদা উত্তেজনা।
আর শুরু থেকেই আইপিএলে চলে দল বদলের খেলা। প্রত্যেক আসরের মত এইবারের আসরেও কিছু ক্রিকেটাররা দল পরিবর্তন করেছেন। আইপিএলের ইতিহাসে অনেক ক্রিকেটারই দল পরিবর্তন করে সফল হয়েছেন, আবার অনেকেই ব্যর্থ হয়েছেন।
আইপিএলের নিলামে দল পরিবর্তন করা ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেক আগের দলের থেকে নতুন দলে এসে বেশ ভালো খেলেছেন। এই পরিবর্তনটা অনেকের ক্ষেত্রেই কাজ করেছে টনিকের মত। কারা তাঁরা? – চলুন খেলা ৭১-এর সাথে দেখে নেওয়া যাক।
- লোকেশ রাহুল (ভারত)
আইপিএলের ২০১৫ সালের আসরে বেশ খারাপ অবস্থায় ছিলেন লোকেশ রাহুল। এই মৌসুমে খেলেছেন হায়দ্রাবাদ কেন্দ্রিক ফ্রাঞ্চাইজি সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদে। পুরো মৌসুমে ২৮.৪ গড়ে করেছিলেন ১৪২ রান। আর এই মৌসুমে কোনো হাফ সেঞ্চুরিও করতে পারেননি তিনি।
২০১৫ মৌসুমের ব্যর্থতার কারণে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ দল তাঁকে দলে রাখেনি। এর ফলে ২০১৬ সালের আইপিএলের আগে আবারো নিলামে নাম লেখান লোকেশ রাহুল। ২০১৬ সালে আইপিএল নিলামে তাঁকে দলে ভিড়ায় রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। এখানে এসেই নিজেকে নতুন করে চেনান তিনি। পুরো মৌসুমে ৪৪.১১ গড়ে ১৪৬.৪৯ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩৯৭ রান।
দূর্ভাগ্যবশত ইনজুরির কারণে ২০১৭ সালের আইপিএলে খেলতে পারেননি তিনি। পরের মৌসুমে আবারো নিলামে নাম উঠে রাহুলের। ২০১৮ মৌসুম থেকে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের ডেরায় আছেন তিনি।
- ট্রেন্ট বোল্ট (নিউজিল্যান্ড)
ট্রেন্ট বোল্ট যখন ২০১৯ সালে আইপিএলে আসেন তখন তিনি ছিলেন ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের সেরা বোলার। এই মৌসুমে আইপিএলে ছিলেন ছিলেন দিল্লি ক্যাপিট্যালসের ডেরায়। কিন্তু হায়দ্রাবাদ থেকে দিল্লিতে এসেও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি ট্রেন্ট বোল্ট। মাত্র ৫ম্যাচ খেলে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন। আর এই সময়ে তাঁর ইকোনমি রেট ছিলো ৮.৫৮।
উচ্চ মূল্যে দলে এসে ভালো পারফর্ম করতে না পারায় ২০২০ সালের আইপিএল মৌসুমের আগে তাঁকে ছেড়ে দেয় আইপিএলের দল দিল্লি ক্যাপিট্যালস। ২০২০ সালের আইপিএলের আগে নিলাম থেকে তাঁকে দলে ভেড়ায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। মুম্বাইয়ে এসেই আইপিএলে নিজের সেরা ক্রিকেট খেলা শুরু করেন তিনি। ২০২০ মৌসুমের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার ছিলেন তিনি। ৩.৭৬ স্ট্রাইক রেটে ২৫ উইকেট শিকার করে মুম্বাইকে তাঁদের পঞ্চম শিরোপা জয়ে অবদান রাখেন ট্রেন্ট বোল্ট। এই বারের আইপিএলেও তাঁকে দেখা যাবে মুম্বাইয়ের জার্সিতেই।
- কুইন্টন ডি কক (দক্ষিণ আফ্রিকা)
আইপিএল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ট্রান্সফার হলো কুইন্টন ডি ককের ট্রান্সফার। ২০১৯ সালে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু থেকে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ডেরায় যোগ দেন কুইন্টন ডি কক। আইপিএলের ২০১৮ মৌসুমে ৮ ম্যাচ খেলে মাত্র ২০১ রান করেছিলেন কুইন্টন ডি কক। সাধারণ মানের এই পারফর্মেন্সে কারণে তাঁকে দল থেকে বাদ দেবার সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাঙ্গালুরু।
২০১৯ সালের আইপিএলের আগে নিলাম থেকে তাঁকে দলে ভিড়ায় মুম্বাই। ২০১৯ সালের আইপিএলে ৫২৯ রান করে মুম্বাইয়ের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন তিনি। এরপরেও আসরে নিজের দূর্দান্ত ফর্ম ধরে রাখেন তিনি। ৩৫.৯৩ গড়ে সংগ্রহ করেন ৫০৩ রান। আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জয়ে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ রাখেন তিনি।
- শিখর ধাওয়ান (ভারত)
শিখর ধাওয়ান সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ছিলেন। ২০১৯ আইপিএলের আগ মুহুর্ত্বেও দূর্দান্ত ফর্মেও ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের আইপিএল মৌসুমে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে ৩৮.২৩ গড়ে করেছিলেন ৪৯৭ রান। কিন্তু এরপরও হঠাৎ করেই তাঁকে দিল্লি ক্যাপিট্যালসে পাঠানো সিদ্ধান্ত নেয় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ টিম ম্যানেজমেন্ট।
দিল্লিতে হায়দ্রাবাদের ফর্ম টেনে নিয়ে এসে খেলতে থাকেন তিনি। ২০১৯ আইপিএল মৌসুমে ৩৪.৭৩ গড়ে করেছিলেন ৫২১ রান। ২০২০ মৌসুমে দিল্লির হয়ে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন তিনি। এছাড়াও ২০২০ মৌসুমে আইপিএলের ফাইনালের তুলতেও ভূমিকা ছিলো শিখর ধাওয়ানের। তিনি এই মৌসুমে করেন ৬১৮ রান।
- আশিষ নেহরা (ভারত)
আইপিএলের উদ্বোধনী আসরে মুম্বাইয়ের খেলেছিলেন আশিষ নেহরা। এই মৌসুমে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ১৪ ম্যাচ খেলে ১২ উইকেট শিকার করেন তিনি।এই পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট ছিল না মুম্বাইয়ের টিম ম্যানেজমেন্ট।
২০০৯ মৌসুমের আগে শিখর ধাওয়ানের সাথে পরিবর্তন করে তাঁকে পাঠানো হয় দিল্লী ডেয়ারডেভিলস (বর্তমান দিল্লী ক্যাপিট্যালস) দলে। এখানে এসেই দূর্দান্ত পারফর্ম করেন তিনি। ২০০৯ মৌসুমে ৬.৫১ ইকোনমি রেটে শিকার করেন ১৯ উইকেট। আর ১৯ উইকেট নিয়ে আইপিএলের দ্বিতীয় মৌসুমের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন তিনি।