অভিজ্ঞতায় ঠাঁসা অর্জনহীন ক্যারিয়ার

মুশফিকুর রহিম অবশেষে বিদায় জানালেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে। বাংলাদেশের হয়ে ১০২ টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি এই ফরম্যাটে। প্রায় পনেরো বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। প্রায় পুরো সময়টাতেই তাঁকে বাংলাদেশের অন্যতম নির্ভোরযোগ্য ব্যাটসম্যান ভাবা হতো। কিন্তু তিনি সত্যিই নির্ভর করার মত টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান ছিলেন? নাকি মুশফিকুর রহিম ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটি ভুল বিনিয়োগ।

টেস্ট ও ওয়ানডে এই দুই ফরম্যাটে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সফল ব্যাটার। এই বিষয়ে দ্বিমত পোষন করার সুযোগ নেই। এমনকি এখনো টেস্ট ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফর্মার। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে চিত্রটা একেবারেই উল্টো। তবে টেস্ট ও ওয়ানডের সাথে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের মুশফিককে।

আর এই ভুলের খেসারত বাংলাদেশ খুব ভালো করেই দিয়েছে। লম্বা এই ক্যারিয়ারে মুশফিক কখনৈ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের প্রাণ ভোমরা হয়ে উঠতে পারেননি। এতগুলো ম্যাচ খেলার পরেও মুশফিকের ভালো টি-টোয়েন্টি ইনিংস একেবারেই হাতে গোনা। আর শেষের সময়টাতে তো তাঁর মন্থর ব্যাটিং বাংলাদেশকে রীতিমত ভুগিয়েছে।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মুশফিক আসলে কেমন ব্যাটসম্যান সেটার একটা ছোট্ট উদাহরণ দেয়া যাক। এই ফরম্যাটে মুশফিক ১৫০০ রান করেছেন। এটাকে অনেকেই খুব বড় করে দেখতে চাচ্ছেন। তবে ১০২ টা ম্যাচ খেলা ব্যাটসম্যানের জন্য কী এটা সত্যিই কোন সাফল্য? নাকি এই ১৫০০ রানই মুশফিকের ব্যর্থতাটা ফুটিয়ে তোলে।

মুশফিকুর রহিমের সমান ১০২ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন বিরাট কোহলিও। মুশফিক যেখানে করেছেন মাত্র ১৫০০ রান সেখানে কোহলির ঝুলিতে আছে ৩৪৬২ রান। মুশফিকের ব্যাটিং গড় যেখানে ১৯.৪৮ সেখানে কোহলি ব্যাটিং করেছেন ৫০.৯১ গড়ে। ফলে ব্যবধানটা কত বড় সেটা বোঝাই যাচ্ছে। আরো বেশি অবাক হতে হয় দুজনের স্ট্রাইকরেটে পার্থক্যটা দেখলে। বিরাট কোহলির টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইকরেট ১৩৭.১০, আর মুশফিকের মাত্র ১১৫.০৩।

অবশ্য বিরাট কোহলি ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ফলে সবাই বিরাট কোহলিকে ছুঁতে পারবে সেটা ভাবাও ভুল। সেজন্য তুলনাটা একটু অন্যভাবে করা যাক। মুশফিকের সমান ১০২ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন রস টেলরও। নিউজিল্যান্ডের এই ব্যাটসম্যানও ক্রিকেট ইতিহাসের সেরাদের একজন।

তবে টেস্ট ও ওয়ানডের মত উজ্জ্বল ছিল না টেলরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার। এমনকি টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ায়ে সমালোচনাই বেশি শুনেছেন এই ব্যাটার। তবুও মুশফিকের চাইতে অনেকটাই এগিয়ে তিনি। রান করেছেব প্রায় দুই হাজার। ব্যাটিং গড় ২৬.১৫। এমনকি ব্যাটিং স্ট্রাইকরেটেও মুশফিকের চেয়ে ঢের এগিয়ে টেলর।

এছাড়া টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ১৫০০ রান করেছেন এমন ব্যাটারদের মধ্যেও সবচেয়ে কম ব্যাটিং গড় মুশফিকের। অন্তত ১০০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন এমন ব্যাটারদের মধ্যেও সবচেয়ে কম ব্যাটিং গড় তাঁরই। আর স্ট্রাইকরেটে পিছিয়ে থাকা তো আছেই। এমনকি তাঁরই সতীর্থ সাকিব আল হাসানও তাঁর চেয়ে কম ম্যাচ খেলে ইতোমধ্যে করেছেন দুই হাজারের বেশি রান।

প্রায় ১৫ বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে মুশফিক অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন মাত্র ছয় বার। সর্বোচ্চ ইনিংস আছে ৭২ রানের। আর ১৯.৪৮ গড়ে সর্বসাকুল্যে ১৫০০ রান। লম্বা এই ক্যারিয়ার সেই মুশফিক যদি তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটা আয়না দেখতে চান তাহলে লজ্জাই হয়তো পাবেন? বিশেষ কিছু কী খুঁজে পাবেন মুশফিক, অভিজ্ঞতা ছাড়া।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link