বলে হাত দিয়ে মুশফিকের ইতিহাস

এর থেকেও বিচিত্রভাবে আউট হওয়া যায় কি না, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এমন অদ্ভুত ভঙ্গিমায় আউট হওয়ার নজিরও নিশ্চয়ই ক্রিকেট ইতিহাসে খুব একটা নেই। তবে মুশফিকুর রহিম অপূর্ণতা রাখলেন না। বিচিত্র আউটে তালিকায় তিনিও সামিল হয়ে গেলেন।

হোম অব ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ দল। মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার মাঝেই টসে জিতে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত। মিরপুরের উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া আর গভীর কুয়ো-তে লাফ দেওয়া একই বিষয়।

তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটেনি এর ব্যতিক্রম। প্রথম সেশনেই হারিয়েছে ৪ উইকেট। বোর্ডে কেবল ৮০ রান। তবে মুশফিকুর রহিম মধ্যাহ্নের আগে ভালভাবেই সামলেছেন। বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন দলকে।

লাঞ্চ বিরতির পরও প্রায় ঘন্টাখানেক ব্যাটিং করেছেন মুশফিক। তাতে করে ৩৫ রান অবধি পৌঁছে গিয়েছিলেন মুশফিক। তবে এরপরই যেন খানিকটা অন্যমনষ্ক হয়ে গেলেন ডান-হাতি এই ব্যাটার। কাইল জেমিসনের করা স্ট্যাম্প বরাবর বলটা দারুণভাবেই ডিফেন্স করলেন তিনি।

সেই বলটা পপিং ক্রিজে বাউন্স করে স্ট্যাম্পের বাইরের দিকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তবে মুশফিক সম্ভবত ভেবেছিল সেটা কোনভাবে গিয়ে উইকেটে আঘাত হানতে পারে। তাই হাত দিয়ে সেই বল দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। আর ঠিক সেখানেই বাঁধে গণ্ডগোল।

নিউজিল্যান্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে আম্পায়াররা তৃতীয় আম্পায়ারের শরণাপন্ন হন। তাতে স্পষ্ট হয় যে বল স্ট্যাম্পে আঘাত করার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। তাই ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ নিয়মে আউটের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় মুশফিকুরের বিরুদ্ধে।

তা বড় বিস্ময়ের কারণ বটে। অভিজ্ঞতা বিচারে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে মুশফিক রয়েছে সবার উপরে। ক্রিকেটের সকল নিয়ম যে তার ভাল করেই জানা থাকার কথা। ক্রিকেটীয় নিয়মে, যতক্ষণ পর্যন্ত একটা বল ‘ডেড’ অর্থাৎ পুন:রায় বোলারের হাত অবধি না পৌঁছানো অবধি ব্যাটার সেই বল হাত দিয়ে ধরতে পারবেন না। আবার বল একেবারে থেমে না যাওয়া অবধি বল ব্যাটার কোনভাবে স্পর্শ করতে পারবেন না। যদি না বলটা স্ট্যাম্প বরাবর চলে যেতে থাকে ব্যাট লেগেও।

মুশফিক সে মোতাবেক নিজেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই বল হাতে দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেই বলটি কোনভাবেই তার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করবার কথা নয়। বরং তিনি নিজে থেকেই যেন কুমির ভর্তি নদীতে ঝাঁপ দিলেন।

এমনকি মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তেও এমন আউট হওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন মুশফিক। তবে সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও নিজের খেলার ৮৩ তম বলে আর বাঁচতে পারলেন না মুশফিক। অবচেতন মনে নেওয়া সিদ্ধান্তই কাল হয়ে দাঁড়াল তার জন্য। হতাশার বানের জলে ভাসছেন মুশফিক। দলের চাপের মুহূর্তে মুশফিকুরের এমন বিচিত্র আউট আরও খানিকটা চাপ বাড়িয়েছে বাংলাদেশের শিবিরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link