দ্য মাস্টার অব গুগলি!

মুশতাক আহমেদ পাকিস্থানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার নি:সন্দেহে, তবে তিনি খুবই আন্ডাররেটেড। বিশেষ করে আব্দুল কাদিরের পরেই তাঁর অবস্থান। লেগ স্পিনে যে ধরনের বৈচিত্র দরকার সবই ছিলো বোলিংয়ে। বিশেষ করে গুগলিকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন শিল্পের পর্যায়ে। যাদের সাথে তাঁর লেগ স্পিনের তুলনা করা হয়, তাঁরা হলেন শেন ওয়ার্ন এবং অনিল কুম্বলে।

মুশতাক আহমেদ পাকিস্থানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার নি:সন্দেহে, তবে তিনি খুবই আন্ডাররেটেড। বিশেষ করে আব্দুল কাদিরের পরেই তাঁর অবস্থান। লেগ স্পিনে যে ধরনের বৈচিত্র দরকার সবই ছিলো বোলিংয়ে। বিশেষ করে গুগলিকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন শিল্পের পর্যায়ে। যাদের সাথে তাঁর লেগ স্পিনের তুলনা করা হয়, তাঁরা হলেন শেন ওয়ার্ন এবং অনিল কুম্বলে। ওয়ার্ন কিংবা কুম্বলে দুইজনের থেকেই বেশ এগিয়ে ছিলেন তিনি।

নিজের সময়ে অবশ্যই সেরা লেগ স্পিনার ছিলেন মুশতাক আহমেদ। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ১৯৯০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটেও বেশ সফল ছিলেন। ইংলিশ কাউন্টির অন্যতম সেরা স্পিনারও ছিলেন মুশতাক আহমেদ। কিন্তু নিজের পারফর্মেন্সের বিচারে সঠিক মূল্যায়নটা পাননি তিনি।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মুশতাক আহমেদের অভিষেক ১৯৮৭ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে মুলতানের হয়ে। অভিষেক ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসেই চার উইকেট নিয়ে নিজের জাত চেনান তিনি। এরপর একই মৌসুমেই পাঁচ উইকেট শিকার করেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত পারফর্ম করে সুযোগ ১৯৮৭-৮৮ সালে অনুষ্ঠিত অনুর্দ্ধ ১৯ বিশ্বকাপে। এই বিশ্বকাপে ১৬.২১ গড়ে নিয়েছিলেন ১৯ উইকেট। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মুশতাক আহমেদকে। জাতীয় দলে সুযোগ পাবার আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ দূর্দান্ত পারফর্ম করতে থাকেন তিনি।

১৯৮৯ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের মধ্য দিয়ে অভিষেক হয় মুশতাক আহমেদের। শ্রীলংকার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে ৩৩ রানে দুই উইকেট নিয়ে নিজেকে চেনান মুশতাক আহমেদ। অভিষেকের পর বেশ ভালোই পারফর্ম করতে থাকেন তিনি।

ক্যারিয়ারে সেরা সময় কাটান ১৯৯৫-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। এর আগেও বেশ ভালোই খেলেছিলেন মুশতাক আহমেদ। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের অন্যান্য ক্রিকেটাররা যেভাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন মুশতাক আহমেদ ঠিক সেভাবে পরিচিত পান নি। ১৯৯২ বিশ্বকাপে ইনজামাম উল হকের দুর্দান্ত ব্যাটিং, ইমরান খানের অধিনায়কত্ব কিংবা ওয়াসিম আকরামে ফাইনালে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হবার ঘটনা যতটা আলোড়ন তৈরি করেছিলো সেই দিক থেকে মুশতাক আহমেদের পারফর্ম বেশ ভাটা পড়ে গিয়েছিলো।

তিনি লিগ পর্বে গুরুত্বপূর্ন ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারানো জন্য বেশ ভালো বোলিং করেছিলেন। এছাড়াও মেলবোর্ণে হওয়া ফাইনালেও তিন উইকেট নিয়ে দলকে বেশ এগিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু ওয়াসিম আকরামের ম্যান অফ দ্যা ফাইনাল হওয়ায় লোক চক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন তিনি।

৮০ এর দশকে যখন মুশতাক আহমেদ যখন ক্রিকেট খেলতেন, তখন তিনি পাকিস্তানের আরেক কিংবদন্তী স্পিনার আব্দুল কাদিরকে বেশ নকল করতেন। এমন কি তাঁর বোলিং অ্যাকশন এবং উইকেটের আবেদনও একই ভাবে নকল করতেন মুশতাক আহমেদ। অনুর্দ্ধ ১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার চার বছর পর পাকিস্তান দলের হয়ে জেতেন বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ জেতায় তাঁর ভূমিকা থাকলেও অন্য ক্রিকেটারদের ছায়ায় পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে লর্ডস এবং ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ জেতার জন্য দূর্দান্ত বোলিং করেন মুশতাক আহমেদ। এতো সাফল্যের পরও বিস্ময়কর ভাবে টেস্টে খুব বেশি একটা ভালো করতে পারেননি তিনি।

ক্যারিয়ারে মুশতাক আহমেদের প্রিয় প্রতিপক্ষ ছিলো নিউজিল্যান্ড। তিনি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সব সংস্করণ মিলে খেলেছেন ২৫ টি ম্যাচ। এতে শিকার করেছিলেন ৫৫ উইকেট। এর মধ্যে চার বার পাঁচ উইকেট এবং দুই বার ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছিলেন মুশতাক আহমেদ।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ছয় টেস্টে নিয়েছিলেন ৩৫ উইকেট। ওয়ানডেতেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ সফল ছিলেন মুশতাক আহমেদ। ১৯ ওয়ানডেতে নিয়েছিলেন ২০ উইকেট। এর মধ্যে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে দুই উইকেট পাওয়া ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। এছাড়াও একই বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালেও নিউজিল্যান্ডকে একাই ধসিয়ে দিয়েছিলেন মুশতাক আহমেদ।

তিনি পাকিস্তান খেলা কালীন সময়ে পাকিস্তান দলে এসেছিলেন আরেকজন মুশতাক। তিনি হলেন বিখ্যাত অফ স্পিনার সাকলাইন মুশতাক। দুই জন পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন ১৬ টেস্ট এবং ৪০ ওয়ানডে। একজন অধিনায়কের কাছে একজন অফ স্পিনার এবং একজন লেগ স্পিনারের জুটি সবসময়ই বেশ কার্যকর। কিন্তু এই জুটি বেশিদিন পাকিস্তানের হয়ে একসাথে খেলতে পারেননি।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেটে বেশ ধীরে সাফল্য পাচ্ছিলেন মুশতাক আহমেদ। উইকেট নিতে তাঁকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো। এটা প্রমাণিত যে, তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা তাঁকে উইকেট নিতে তাঁকে বেশ কষ্ট পেতে হচ্ছিলো। কখনো কখনো তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা তাঁকে সাফল্য এনে দেয় নি।

কাউন্টি ক্রিকেটে সামারসেটের হয়ে খেলাকালীন সময়ে বেশ ভালোই খেলেছিলেন। এখানে থাকাকালীন সময়ে গুগলি দিয়ে বেশ সাফল্য পাচ্ছিলেন। কিন্তু একসময় নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ক্রিকেটার মার্টিন ক্রো বেশ ভালো ভাবেই তাঁকে খেলেন। আর এরপর গুগলি দিয়ে আর সাফল্য পাননি।

এরপর তিনি সাবেক পাকিস্তানি অফ স্পিনার তৌসিফ আহমেদের কাছে গিয়ে বেশ কিছুদিন ট্রেনিং করেন। এরপরেই বেশ সফল হয়ে উঠেন মুশতাক আহমেদ। ১৯৯৫ সালের অস্ট্রেলিয়া সফর থেকেই আগের থেকে বেশি কার্যকর হয়ে উঠেন মুশতাক আহমেদ।

১৯৯৪-৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করাচি টেস্ট ছিলো সেলিম মালিকের জন্য বেশ কুখ্যাত। এই ম্যাচেই সেলিম মালিক অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন এবং টিম মেকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন। এই ম্যাচেই ইনজামামের সাথে ২৫৮ রানের জুটি গড়ে পাকিস্তানকে জয় এনে দেন মুশতাক আহমেদ।

তবে বোলিংয়ে মোশতাক আহমেদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছিলো একই বছর শীতে অস্ট্রেলিয়া সফরে। সেখান থেকেই সাফল্যের শুরু হয় মুশতাক আহমেদের। এরপর আর উইকেট পেতে কষ্ট করতে হয়নি মুশতাক আহমেদকে। এই সিরিজে হোবার্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১৫ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন মোশতাক আহমেদ। এটি ছিলো তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট শিকার। একই সিরিজে সিডনিতে প্রথমবারের দুই ইনি ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেন তিনি।

এরপর থেকেই টেস্ট ক্রিকেটে বেশ সফল ছিলেন মুশতাক আহমেদ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটেও বেশ সফল একজন ক্রিকেটার ছিলেন মুশতাক আহমেদ। বিশেষ করে ইংলিশ কাউন্টিতে। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ইংলিশ কাউন্টি দল সামারসেটের হয়ে। সামারসেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। এরপর কিছুদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলে ২০০২ সালে আবারো ফিরে আসেন কাউন্টিতে।

এবার খেলেন সারের হয়ে। কিন্তু সারের হয়ে এই মৌসুমে বলার মত কিছুই করতে পারেন নি তিনি। এরপর জাতীয় দলকে বিদায় জানানোর পর ২০০৩ সাল থেকে নিয়মিত হন সাসেক্স কাউন্টি দলে। দূর্দান্ত পারফর্ম করে সাসেক্সকে তাদের প্রথম কাউন্টি শিরোপা জেতান ।পরবর্তীতে আবারো ২০০৬ সালে সাসেক্সকে কাউন্টি শিরোপা জেতান তিনি। ২০০৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত খেলেছেন কাউন্টি দল সাসেক্সের হয়ে।

২০০৭ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। অবসর নেবার পর ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যাননি তিনি। এরপর কোচিং পেশায় চলে আসেন। কোচিং করিয়েছেন কাউন্টি দল, ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান জাতীয় দলকে।

শিল্প থাকলেও মুশতাকের সাফল্যের পাল্লা ভারী না হওয়ার কারণে তাঁকে নিয়ে এতো আলোচনা হয় না। তাঁর সমসাময়িক অনিল কুম্বলে এবং শেন ওয়ার্নের থেকে স্কিলের দিক থেকে বেশ এগিয়ে ছিলেন তিনি। কুম্বলে-ওয়ার্নদের মত ক্যারিয়ারটা দীর্ঘ হলে হয়তো আজো একই ভাবে সমাদৃত হতে পারতেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...