এই নাঈমকে থামাবে কে!

টানা তিনটা অর্ধশতক। এতেও আসলে মাহাত্মটা বোঝা গেল না। কেননা তিনটি ইনিংসই ছিল নব্বইয়ের ঘরে। টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি না পাওয়ার আফসোস অবশ্য তিনি মিটিয়েছেন। চতুর্থ ম্যাচে লিগের অন্যতম শক্তিশালী দল আবাহনীর বিপক্ষেই অবশেষে সেঞ্চুরিটা এলো। বিকেএসপির দুইটা মাঠেই নাঈম ইসলামের ব্যাট যেন তরবারি হয়ে উঠেছে। এই নাঈমকে থামাবে কে?

যখন বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন তখনো তাঁকে নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। আর এখন তো সেই প্রশ্নই আসেনা। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে একটা নাম প্রতি মৌসুমেই ঘুরে ফিরে আসে। সেটা হলো নাঈম ইসলাম। ভিন্ন ফরম্যাটে, ভিন্ন দায়িত্বে, ভিন্ন পরিস্থিতে অভিন্ন এক ক্রিকেটার। বলা ভালো ইউটিলিটি ক্রিকেটার, যারা যেকোন দলে পার্থক্যটা গড়ে দেন।

এইতো কিছুদিন আগেও বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে দলের চাহিদা মিটিয়েছেন। শেষ দিকে ব্যাট হাতে নেমে দ্রুত রান করে দিয়েছেন। বল হাতেও দলকে সাপোর্ট দিয়েছেন।  তবুও নাঈম ইসলাম ঠিক শিরোনামে থাকেননা। শুধু বিপিএলের মত টি-টোয়েন্টি লিগই নয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে যেকোন ফরম্যাটের টুর্নামেন্টেই নিয়মিত পারফর্মার এই নাঈম ইসলাম।

মাত্র ৮ টি টেস্ট ম্যাচেই থেমে গেছে তাঁর ক্যারিয়ার। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ যেই টেস্ট সিরিজটা খেলেছিলেন সেখানেও তাঁর একটা সেঞ্চুরি ছিল। তবে এরপর আর বাংলাদেশ ক্রিকেট তাঁকে টেস্টে প্রয়োজন মনে করেনি কখনোই। এরপর বছর দুয়েক ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তবে সেখানেও নিজের জায়গা তৈরি হয়নি কখনোই। ২০১৪ সালেই বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ মাঠে নেমেছিলেন।

ওয়ানডে ফরম্যাটেও একইরকম চিত্র। বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট, বল দুই ডিপার্টমেন্টেই পারফর্ম করেছেন। বাংলাদেশ প্রথম যেবার নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশ করলো তাঁর অন্যতম কারিগর ছিলেন নাঈম ইসলাম। তবে সেসময় সাকিবের কারণে তাকে নিয়ে আলোচনাটা সেভাবে হতো না।

তবে এতে নাঈমের ক্রিকেট ব্রতটা থেমে যায়নি কখনোই। জাতীয় দলে ডাক না পড়লেও ঘরোয়া ক্রিকেটে লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছেন। এখন হয়তো বাংলাদেশ ক্রিকেট তাঁকে পরিকল্পনায়ও রাখেনা। ঘরোয়া ক্রিকেটে বছরের পর বছর এভাবে পারফর্ম করলেও হয়তো জাতীয় দলে ডাক আসেনা। তবুও নাঈম ক্রিকেটটাকে ভালোবেসে গিয়েছেন। ব্যাট, বল হাতে নামবেন বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিপিএলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে পারফর্ম করার পর এখন আবার খেলছেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। মাশরফির দল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে খেলেছেন তিনি। সেখানে প্রথম ম্যাচ থেকেই ব্যাটসম্যান নাঈম ইসলাম তাঁর উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।

প্রথম ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে ১১৪ বলে ৯২ রানের ইনিংস। এরপর বল হাতেও ৮ রান খরচ করে নিয়েছেন এক উইকেট। হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচও। পরের ম্যাচে শেখ জামালের বিপক্ষে আবারো নাঈম ইসলাম শো। এবার খেললেন ১১১ বলে ৯৫ রানের ইনিংস। তবে ইমরুল কায়েসের সেঞ্চুরিতে অবশ্য দলকে জেতাতে পারেননি।

টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে তৃতীয় ম্যাচেও আবার একই জায়গা থেকে শুরু করেছেন। প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষেও নাঈমের ৯১ রানের ইনিংস। টানা তিন ম্যাচের এই আক্ষেপ বোধহয় আর সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি।

ফলে আবাহনীর বিপক্ষে চতুর্থ ম্যাচে আগ্রাসী এক চরিত্র হয়ে উঠলেন। সাভারে নাঈমের ব্যাটে রীতিমত ঝড় উঠলো। ১০৯ বলে ১২৪ রানের বিশাল এক ইনিংস। আক্ষেপ মেটানোর ইনিংস। ১৪ টি চার ও ৪ টি ছয় দিয়ে সাজিয়েছেন এই ইনিংস। আবারো প্রশ্নটা থাক, এই নাঈমকে থামাবে কে?

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link