দেশের উইকেটের কারণেই ব্যাটিংয়ের এই দশা!

পুনেতে প্রথম ইনিংসের গড় রান কত জানেন – ৩০৭! চমকে উঠবেন না, এই মাঠ এতটাই ব্যাটিং স্বর্গ যে একটু দেখেশুনে খেললেই ৩০০ রানের বেশি করা যায়। অথচ বাংলাদেশ খেলতে নেমে থেমে গেলো ২৫৬ রানে, ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ঘরের মাঠে ভারতকে তাই পরাজয়ের লজ্জা দিতে পারেনি টাইগাররা।

শুরুটা কিন্তু দারুণ হয়েছিল, দুই ওপেনার লিটন দাস এবং তানজিদ হাসান তামিমের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত সূচনা পেয়েছিল টিম টাইগার্স। মাত্র ১৪.৪ ওভারে ৯৩ রানের জুটি গড়েছিলেন তাঁরা দুজনে, কিন্তু ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরি করার পরে আউট হন তামিম। এরপরই বদলে যায় দৃশ্যপট।

নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, মেহেদি মিরাজরা পারেননি মোমেন্টাম নিজেদের পক্ষে রাখতে। আর সেটারই খেসারত দিতে হয়েছে পুরো দলকে।

আর সেজন্য ভাল পিচে নিয়মিত না খেলাকে দায়ী করছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক শান্ত। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের এমন ভালো উইকেটে নিয়মিত ম্যাচ খেলা উচিত। এসব স্পোর্টিং পিচে ব্যাটিংয়ে অভ্যাস আমাদের তুলনামূলকভাবে কম। আমার কাছে দক্ষতার চেয়ে মানসিক দিকটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

পরিসংখ্যানও শান্তর পক্ষে সাক্ষী দিচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ৩৩টি ম্যাচ খেলেছে, যেখানে ১৫টি আয়োজন করা হয়েছে মিরপুর স্টেডিয়ামে। আর সেখানে মাত্র একবার আগে ব্যাটিং করে ৩০০ রানের গন্ডি পেরুতে পেরেছিল কোন দল। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও একই অবস্থা, ১৬৭ ইনিংসে মাত্র ১৫ বার স্কোরবোর্ডে ৩০০ রান দেখা গিয়েছিল।

তরুণ ব্যাটারের সাথে সুর মিলিয়েছেন নাজমুল আবেদিন ফাহিমও। তিনি বলেন, ‘ব্যাটার কি ধরনের ফুটওয়ার্ক ব্যবহার করবে সেটা উইকেটের উপর নির্ভর করে। বড় ইনিংস খেলা তাই অভ্যাসের ব্যাপার। আমাদের পিচে স্বাচ্ছন্দ্যে ২৫০-২৭০ রান করতে পারি। তবে ভালো উইকেট পেলে বড় ইনিংস খেলতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। আসলে যারা বেশি খেতে পায় না, তারা হঠাৎ করে অনেক কিছু পেলেও খেতে পারবে না। ক্রিকেটও অনেকটা সেরকমই।’

এই কোচ আরো যোগ করেন, ‘আপনার যদি অভ্যাস না থাকে, তাহলে ৩৫০ এর পিচ পেলেও আপনি ২৮০ এর বেশি করতে পারবেন না। আমাদের ব্যক্তিগত ইনিংস ১৫০ পর্যন্ত পৌঁছায় না, ব্যাটিংবান্ধব পিচে খেলা হলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হবে।’

ব্যাটিং-বান্ধব উইকেট পাওয়ার পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন বর্ষীয়ান এই ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব। দেশের সব ভেন্যুতে ঘুরে ফিরে খেললেই স্পোর্টিং পিচ তৈরি করা সম্ভব হবে বলে মত তাঁর। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন স্তরের ক্রিকেটের জন্য বেশি সংখ্যক মাঠ প্রয়োজন যাতে সঠিকভাবে উইকেট প্রস্তুত করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।’

সত্যি তাই, সময় দেয়া হলে বাইশ গজ হয়ে উঠে আরো বেশি ব্যাটিং বান্ধব। সিলেট কিংবা চট্টগ্রামের খেলাগুলো দেখলেই ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link