নব ডাচ বিপ্লবের অপেক্ষা

আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে অভাগা দলটির নাম বলতে পারবেন? একটু এদিক সেদিক ভেবে দলটার নাম হবে নেদারল্যান্ডস। নিজেদের ইতিহাসের সেরা দুই দল নিয়ে তিনবার ফাইনাল খেলে বিশ্বকাপের ছোঁয়া পায়নি তারা। ইউরোপে তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য ১৯৮৮ সালে, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ উঁচিয়ে ধরে।

‘টোটাল ফুটবল’-এর ধারক-বাহক খ্যাত নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক পথচলাটা বেশ কয়েকবছর ধরেই সুখকর নয়। রোবেন-স্নাইডার ব্যাচটার বিদায়ের পর কোনোভাবেই নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারছিলেন না। শেষ দুই ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্ট (২০১৬ ইউরো ও ২০১৮ বিশ্বকাপ) তাদের থাকতে হয়েছে দর্শক হিসেবে।

এরপরই রোনাল্ড কোম্যানের হাতে দায়িত্ব সঁপে দেয় নেদারল্যান্ড বোর্ড। অপেক্ষাকৃত তরুণ ও ট্যালেন্টের দল নিয়ে আবারও ইউরোতে সুযোগ করে দিয়েছেন দলকে। যদিও বার্সেলোনার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যাওয়ায় তার জায়গাটা নিয়েছেন ফ্রাঙ্ক ডি বোর। তার হাত ধরেই ইউরো জয়ের মিশনে নামবে নেদারল্যান্ডস।

গোলরক্ষক

টিম ক্রুল (নরউইচ সিটি), মার্কো বিজোত (এজেড), মার্তেন স্তেকেলেনবার্গ (আয়াক্স)

ডিফেন্ডার

ম্যাথিয়াস ডি লিট (জুভেন্টাস), স্তেফান ডি ভ্রেই (ইন্টার মিলান), নাথান আকে (ম্যানচেস্টার সিটি), ডেলি ব্লিন্ড (আয়াক্স), জোয়েল ভেল্টম্যান (ব্রাইটন), ইউরিয়েন তিম্বার (আয়াক্স) ডেনজেল ডামফ্রাইজ (পিএসভি) প্যাট্রিক ফন আনহল্ট (ক্রিস্টাল প্যালেস), ওয়েন উইনদাল (এজেড আলকমার)

মিডফিল্ডার

জর্জিনিও ভাইনালদম (লিভারপুল), ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং (বার্সেলোনা), মার্টেন ডে রুন (আতালান্তা), ডেভি ক্লাসেন (আয়াক্স), টিউন কুপমাইনার্স (এজেড) রায়ান গ্রাভেনবার্চ (আয়াক্স), ডনি ফন ডি বিক (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)

ফরোয়ার্ড:

কুইন্সি প্রোমেস (স্পার্তাক মস্কো), স্টিভেন বের্গুইস (ফেইনুর্দ), কোডি গাকপো (পিএসভি) ভাউট ভেগহর্স্ট (ভলফসবুর্গ), লুক ডি ইয়ং (সেভিয়া), মেম্ফিস ডিপাই (অলিম্পিক লিওঁ), ডোনিয়েল মালেন (পিএসভি)

কোচ: ফ্রাঙ্ক ডি বোর

অধিনায়ক: জর্জিনিও ভাইনালদম

  • শক্তিমত্তা

নেদারল্যান্ডসের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হলো তাদের নতুন উঠে আসা ট্যালেন্ট। ২০১৮—১৯ মৌসুমে সেমি ফাইনাল খেলা আয়াক্স দল থেকেই উঠে এসেছে এই দলের অনেক খেলোয়াড়। তাদের উপরে ভর করেই দল সাজিয়েছিলেন রোনাল্ড কোম্যান। তার ফলাফলও পেয়েছেন। তরুণ খেলোয়াড়দের ম্যানেজ করতে পটু কোম্যান। যে কারণে তড়তড় করে সাফল্যের সিড়ি বেয়ে উঠছিল নেদারল্যান্ডস।

শুধু তাই নয়, তার সাথে অভিজ্ঞতার মিশ্রণও আছে। অধিনায়ক ভাইনালদম, মেম্ফিস ডিপাই, ডি ভ্রেই; অনেকদিন ধরেই ইউরোপিয়ান ফুটবলে আধিপত্য তাদের। বড় বড় দলে প্রেশার সামলানোর ব্যাপারটা তাদের আয়ত্ত্বে। এমনকি ডি লিট, ডি ইয়ঙ্গরাও শিখছেন। পুরো প্যাকেজ মিলিয়ে নেদারল্যান্ডস নিজেদের দিনে বেশ ভয়ানক প্রতিপক্ষ।

  • দুর্বলতা

দলের মূল শক্তিকে ছাড়াই ইউরো মিশন শুরু করতে হচ্ছে তাদের। এর থেকে বড় দূর্বলতা আর কী-ই বা হতে পারে? নতুন করে নেদারল্যান্ডসের জাগরণের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভার্জিল ফন ডাইক।

অথচ চোটের কারণে ৮ মাস ধরে মাঠে নেই তিনি। এখনও রিকোভারিতে ব্যস্ত তিনি। এমনকি দলের নিয়মিত গোলরক্ষক জ্যাসপার চিলেসেনও চোটের কারণে মাঠের বাইরে। নিজেদের ডিফেন্সের মূল স্তম্ভ হারিয়ে তারা নামবে ইউরোতে।

শুধু মাঠের ভেতরে নয়, মাঠের বাইরেও নিজেদের সেরা তারকাকে হারিয়েছে তারা। গত দুই বছরে নেদারল্যান্ডসের দুর্দান্ত ফর্মের পেছনের কারিগর ছিলেন রোনাল্ড কোম্যান। এভারটনে খুব ভালো কিছু করে দেখাতে না পারলেও নেদারল্যান্ডসের ডাগআউটে বসে খেলার চিত্রই পাল্টে দিয়েছিলেন কোম্যান।

কিন্তু গত মৌসুমের শুরুতে নিজের প্রিয় দল বার্সেলোনার ডাকে সাড়া দিয়ে চাকরিটা ছেড়ে দেন কোম্যান। তার জায়গা দেওয়া হয় আয়াক্সের প্রাক্তন কোচ ফ্রাঙ্ক ডি বোরকে। এখনও নিজের সেরা খেলাটা দেখাতে পারেননি বোর। খর্বশক্তির স্কটল্যান্ড, তুরস্কের কাছেও পয়েন্ট হারিয়েছেন তিনি।

  • সম্ভাব্য একাদশ

নেদারল্যান্ডসের এই দল মূলত ৪-৩-৩ ফরমেশনকে মোডিফাই করে ৪-২-১-৩ ফরমেশনে খেলে। তবে সময়বিশেষে ৫-৩-২ ফরমেশনেও যায়। ৫-৩-২ ফরমেশনে গেলে এক্সট্রা ডিফেন্ডার হিসেবে নাথান আকে অথবা প্যাট্রিক ফন আনহল্টকে নামানো হয়। তখন স্ট্রাইকার হিসেবে লুক ডি ইয়ংকে খেলানো হয়।

প্রতিপক্ষ ও ম্যাচ: (বাংলাদেশ সময়)

ইউক্রেন, ১৪ জুন, ১টা

অস্ট্রিয়া, ১৮ জুন, ১টা

উত্তর মেসিডোনিয়া, ২১ জুন, ১০টা

ইউরোতে নেদারল্যান্ডসের চান্স নিয়ে খোদ নেদারল্যান্ডবাসীও বড় স্বপ্ন দেখবেন না। ৭ বছর পর আবারও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ফিরে কতদূর যেতে পারে নেদারল্যান্ডস সেদিকেই নজর থাকবে তাদের। নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা দিতে পারলে কোয়ার্টার পর্যন্ত যাওয়া ইয়োহান ক্রুইফের শিষ্যদের জন্য স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link