করোনা মহামারীর কারণে গত দুই বছরে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে ক্লাবগুলো। তবে সবচেয়ে বড় ঝড়টা বোধহয় গিয়েছিল স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনার উপর দিয়ে। ক্লাবের অর্থনৈতিক সংকট এতটাই প্রকট হয়ে দাঁড়ায় যে ছেড়ে দিতে হয়েছিল লিওনেল মেসিকেও।
এরপর অবশ্য হুয়ান লাপোর্তার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ক্লাবটি। তবে গ্রীষ্মকালীন দলবদলে সরব থাকলেও এবারের শীতকালীন দলবদলে কাউকে দলে ভেড়াতে পারেনি কাতালানরা। ব্লু গ্র্যানারা তাই অপেক্ষা করছে আরো একটি সফল গ্রীষ্মকালীন দলবদলের।
দানি আলভেস বার্সা ছাড়ার পর থেকেই হন্যে হয়ে একজন রাইটব্যাকের খোঁজে আছে দলটি। গত ছয়বছরে অনেক ফুটবলারকেই রাইটব্যাক হিসেবে চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু কেউই থিতু হতে পারেননি। নেলসন সেমেডু, হেক্টর বেলেরিন, সার্জিনিও ডেস্ট, এমারসন রয়েল, অ্যালেক্স ভিদালরা কেবল দীর্ঘশ্বাস বাড়িয়েছেন সমর্থকদের।
এই মৌসুমেও একই সমস্যায় ভুগছে দলটি। যদিও লা লিগায় সর্বনিম্ন সাত গোল হজম করে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেই আছে জাভির দল। সেন্টারব্যাক থেকে রাইটব্যাক বনে যাওয়া জুলস কুন্দে এখনো পর্যন্ত আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন ভালোভাবেই। তবে মাত্র তিনজন যোগ্য সেন্টারব্যাক এবং অধারাবাহিক রাইটব্যাক সার্জি রবার্তো নিয়ে এবারে বোধহয় আবারো ভাবতে হবে বার্সাকে।
কুন্দেকে খেলিয়ে হয়তো সাময়িক সাফল্য পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ফরাসি এই তারকা ইতোমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন ডিফেন্সের মাঝে খেলতেই তিনি বেশি স্বাছন্দ্যবোধ করেন। নতুন মৌসুমে এই সমস্যার সমাধান না করলে এই ফরাসির নারাজ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
দলবদলের বাজারে গুঞ্জন আছে দুইজন রাইটব্যাকের দিকে নজর রাখছে দলটি। তাঁরা হলেন বায়ার্ন মিউনিখের বেঞ্জামিন পাভার্ড এবং ভিয়ারিয়ালের হুয়ান ফয়েথ। এদের মাঝে পাভার্ডকে চাইলে কম দামেই ভেড়াতে পারবে বার্সা যেহেতু বায়ার্নের সাথে তাঁর বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
তবে পাভার্ড নিজেও সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলতেই বেশি পছন্দ করেন। তাছাড়া রবার্ট লেওয়ানডস্কিকে নিয়ে ঝামেলার পর থেকে বায়ার্ন বোর্ডের সাথে বার্সার সম্পর্কও ভালো নয়। অন্যদিকে ভিয়ারিয়াল পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে ফয়েথকে ছেড়ে দেয়ার কোনো পরিকল্পনাই তাঁদের নেই। যদি তাঁকে নিতে হয়ে তবে ৪২ মিলিয়নের রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করেই নিতে হবে।
তবে শোনা যাচ্ছে রিয়াল ভায়াদোলিদের ১৮ বছর বয়সী রাইটব্যাক ইভান ফ্রেসান্দাকে মনে ধরেছে জাভির। তরুণ এই রাইটব্যাক ইতোমধ্যেই নজর কেড়েছেন বড় দলগুলোর। আর্সেনাল, নিউক্যাসল ইউনাইটেড, বরুশিয়া ডর্ট্মুন্ডের মতো ক্লাবগুলো আগ্রহী ফ্রেসান্দাকে দলে ভেড়াতে।
তবে প্রতিযোগিতা থাকলেও কিছু বিষয় বাকিদের চাইতে এগিয়ে রাখবে বার্সাকে। কাতালান এই ক্লাবে খেলা বেশিরভাগ স্প্যানিশ ফুটবলারেরই স্বপ্ন। এছাড়া জাভি তো ইঙ্গিত দিয়েই রেখেছেন তাঁকে খুশি করতে পারলে, একাদশে জায়গা পেতে কোনো সমস্যাই হবে না এই তরুণের। গাভি, পেদ্রি, বালদে, ফাতির মতো তরুণরা তো বেড়ে উঠছেন তাঁর ছত্রছায়াতেই। একমাত্র আর্সেনালই বার্সার মতো তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে দল সাজাচ্ছে ইউরোপের বড় দলগুলোর মাঝে।
বার্সেলোনার দিক থেকে দেখলে ফ্রেসান্দাই তাঁদের জন্য সেরা অপশন। তুলনামূলক কম ট্রান্সফার ফি এবং বেতনেই দলে ভেড়ানো যাবে তাঁকে। তাছাড়া অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে প্রতিষ্ঠিত কোনো রাইটব্যাককে দলে ভেড়ানো কষ্টকর বার্সেলোনার জন্য। ফ্রেসান্দার উপর বাজিটা তাই ধরতেই পারে কাতালানরা।