জম্মু-কাশ্মীর থেকে উঠে আসা আইপিএল তারকা বলতে এতদিন উমরান মালিককেই জানতো সবাই। এবারের আসরে উমরানের সেই রাজত্বে ভাগ বসালেন বাঁ-হাতি এক ওপেনার। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে নিজের অভিষেক ইনিংসেই নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন এই তরুণ ব্যাটার।
আইপিএলে শুরুটা এবারের আসর দিয়ে হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার ভিভ্রান্ত। ক্যারিয়ারের শুরুতে পেসার হওয়ার বাসনা থাকলেও সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে স্বপ্নটা। বল হাতে আগুন ঝরানোর চাইতে বরং বলকে সীমানার ওপারে পাঠাতেই তাঁর প্রশান্তি। এছাড়া মাঝের ওভারে তাঁর লেগস্পিনও দারুণ কার্যকরী।
২০২১ মৌসুমে সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে আবির্ভাব ভিভ্রান্তের। যদিও সেবারে চার ইনিংসে মাত্র ৬৩ রান করেন এই তরুণ। তবে মৌসুম গড়াতেই নিজের সামর্থ্যের জানান দেন ভিভ্রান্ত। জম্ম-কাশ্মীরের ভঙ্গুর ব্যাটিং লাইন আপকে টেনেছেন একা হাতে। ইনিংসের শুরু থেকেই মারকুটে ব্যাটিং করতে সিদ্ধহস্ত এই তরুণ। স্ট্রাইক রেটটাও দুর্দান্ত, ১৪৫।
বল হাতেও দারুণ সাশ্রয়ী ভিভ্রান্ত। নিয়মিত উইকেট তুলে নেবার সুখ্যাতি না থাকলেও ইকোনমি রেটটা মাত্র ৪.৮০। ফর্মটা ধরে রাখেন বিজয় হাজারে ট্রফিতেও, আট ম্যাচে সংগ্রহ করেন ৩৯৫ রান। উত্তরাখন্ডের বিপক্ষে তো খেলেছিলেন ১২৪ বলে অপরাজিত ১৫৪ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস।
আইপিএলে তাঁর উত্থানটা মূলত ঘরোয়া ক্রিকেটের সতীর্থ আব্দুল সামাদের হাত ধরে। গত মৌসুমে সামাদের পরামর্শেই মূলত নেট বোলার হিসেবে তাঁকে দলে ভেড়ায় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। সেবারে অবশ্য কোনো ম্যাচে তাঁকে মাঠে নামায়নি হায়দ্রাবাদ। তবে ভিভ্রান্ত আলাদা করে নজর কেড়েছিলেন নিশ্চিয়ভাবেই।
হায়দ্রাবাদের নেট বোলার হিসেবে থাকার সময়েই কাজ করেছেন নিজের ব্যাটিং নিয়ে। বিশ্বসেরা সব তারকাদের কাছে থেকে পরামর্শ নিয়েছেন, বাড়িয়েছেন নিজের শটের সংখ্যা। গত মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফর্ম করার সুবাদেই কিনা এবারের আইপিএল তাঁকে দলে নিয়ে আগ্রহী ছিল বেশ কয়েকটি দলই।
তাঁকে দলে ভেড়াতে রীতিমতো যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং হায়দ্রাবাদ। মাত্র ২০ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্য হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে দলে ভেড়াতে হায়দ্রাবাদকে গুণতে হয়েছিল ২.৬০ কোটি রুপি।
আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে অভিষেক হলেও নিজের প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি ভিভ্রান্ত। উদ্বোধনী জুটি নিয়ে গোটা টুর্নামেন্টে ভুগতে থাকা হায়দ্রাবাদ তাই শেষ ম্যাচে এক প্রকার বাধ্য হয়েই ব্যাটিং করতে পাঠায় ভিভ্রান্তকে। সুযোগটা আর হেলায় হারাননি এই তরুণ, নিজের প্রথম ইনিংসেই বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁকে না খেলিয়ে কি ভুল করেছে হায়দ্রাবাদ ম্যানেজমেন্ট।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ইনিংসের শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। শট খেলেছেন উইকেটের চারপাশে, প্রতিপক্ষের বোলারদের সুযোগ দেননি বিন্দুমাত্র। সময় যত গড়িয়েছে, ততই চড়াও হয়েছেন বোলারদের উপর। শেষ পর্যন্ত নয় চার এবং দুই ছক্কায় ৪৭ বলে ৬৯ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন এই তরুণ।
২৩ বছর বয়সী ভিভ্রান্তের শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। তবে ক্যারিয়ারে এখনো বহু পথ পাড়ি দেয়া বাকি এই তরুণের।