Social Media

Light
Dark

নতুন দূর্গ নিউক্যাসেল

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ যে বিশ্ব ক্লাব ফুটবলের প্রধান আকর্ষণ এ বিষয়ে সন্দেহের খুব বেশি একটা অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। একবাক্যে অনেকেই হয়ত বলে বসবেন প্রিমিয়ার লিগই সেরা। কেন সেরা? তার প্রশ্নের প্রথম এবং একমাত্র উত্তর হতে পারে খেলার মান। এছাড়াও আরো বেশকিছু ক্ষেত্রে ইংলিশ লিগ বেশ এগিয়ে এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষেই আছে।

যদি মানের কথাই চিন্তা করা হয়, তাহলে মনে হয় না যে প্রিমিয়ার লিগের মতো এত পরিমাণ প্রতিযোগিতা অন্য কোন লিগে সচারচর হয়ে থাকে। সাধারণত অন্যান্য ইউরোপিয় লিগ গুলোতে হয় একটি কিংবা দু’টি দল প্রভাব বিস্তার করে খেলে, সর্বোচ্চ গেলে তিনটি দল। মৌসুমের শুরুতেই ধারণা করে ফেলা যায় এই দুই কিংবা তিন দলের কেউ একজন হবে লিগের চ্যাম্পিয়ন।

কিন্তু চরম অনিশ্চয়তার খেলা ফুটবল। তার থেকেও বেশি অনিশ্চিত যেন প্রিমিয়ার লিগ। পাঁচ-ছয়টি পরাশক্তির পাশাপাশি যেকোন সময়ে নবাগত কোন ক্লাব অবাক করে দিয়ে হয়ে যেতে পারে চ্যাম্পিয়ন। কিংবা হয়ে যেতে পারে চ্যাম্পিয়নদের পথের কাঁটা। এই মৌসুমেও ব্রেন্টফোর্ড এফ সি তেমনই এক চমকের নাম। লিভারপুলের মতো দলকে ৩-৩ গোলে রুখে দিয়ে নবাগত ব্রেন্টফোর্ড রয়েছে আলোচনায়।

তবে খেলার মান কিংবা কে চ্যাম্পিয়ন হবে কিংবা কে হারিয়ে দিচ্ছে কাকে এসব কিছু ছাপিয়ে প্রিমিয়ার লিগে আলোচনার বিষয়বস্ত এখন নিউক্যাসেল ইউনাইটেড। সম্প্রতি নিউক্যাসেলের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। বিষয়টা ছড়িয়ে যাবার মতোই। কিন্তু এই খবরের পেছনে রয়েছে আরো একটি খবর।

যা সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তা হলো নিউক্যাসেলের বর্তমান মালিক সৌদিভিত্তিক পাবলিক ইনভেস্ট ফান্ড নামক একটি প্রতিষ্ঠান। সৌদি রাজতন্ত্রের আওতাধীন এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার দেশটির রাজপুত্র মোহাম্মদ বিন সালমান।

নিউক্যাসেলের স্বত্বাধিকার স্থানান্তরের গুঞ্জনে সৌদির নাম বেশ জোড়ালো ভাবেই শোনা যাচ্ছিলো গেলো বছরগুলোতে। তবে কাতার ভিত্তিক ব্রডকাস্ট মিডিয়া বেইন স্পোর্টসের সাথে ঝামেলার কারণে তা বাস্তবে রুপ নিতে কালক্ষেপণ হয়। মধ্যপ্রাচ্যে প্রিমিয়ার লিগ প্রচারের স্বত্ব বেইন স্পোর্টসের অধিনস্ত ছিল।

কিন্তু, সৌদির বিরুদ্ধে বেইন স্পোর্টস অভিযোগ তুলেছিল যে তাঁরা অবৈধ উপায়ে প্রিমিয়ার লিগ সম্প্রচার করে আসছিলো, যা কপিরাইট আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য এছাড়াও এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সৌদি তাদের দেশে বেইন স্পোর্টসের সকল সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল।

সেই ঘটনাকে কেন্দ্রে করেই এত দিন স্থগিত অবস্থায় ছিল নিউক্যাসেলের মালিকানা পরিবর্তন প্রিমিয়ার লিগের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে। কিন্তু বেইন স্পোর্টসের সাথে ঝামেলার সমঝোতা হয়ে যাবার পরে সৌদির সামনে আর কোন বাঁধা রইলো না নিউক্যাসেলের মালিকানা নিজেদের করে নিতে। যার ফলস্বরুপ নিউক্যাসেলের ৮০ শতাংশ শেয়ারের মালিক বনে যায় পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড।

ফান্ডের গভর্নর ইয়াসির আল-রুমাইয়ান হবেন কার্যনির্বাহী সভাপতি নিউক্যাসেল ক্লাবের। বাকি ২০ শতাংশের মালিকানা সমানভাবে ভাগ করে নিয়েছেন ব্রিটিশ ব্যবসায়িক আমান্ডা স্টেইভ্লি ও রুবেন ব্রাদার্স নামক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।

এই মালিকানা স্থানন্তরের সাথে সাথে নিউক্যাসেল বনে গেলো সবচেয়ে ধনী ক্লাব। শুধু যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবদের মধ্যেই তা কিন্তু নয়। ইউরোপিয়ানন ক্লাব ফুটবল দলগুলোর মধ্যে নিউক্যাসেলই এখন সবার উপরে। নিউক্যাসেল থেকে অর্থের বিচারে একই লিগের শেখ মনসুরের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি পিছিয়ে আছে প্রায় দশগুণ ও ফ্রেঞ্চ ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই আছে প্রায় ত্রিশ গুণ। ক্লাবটির ফান্ড এখন গিয়ে দাঁড়াবে ৩২০ বিলিয়ন ইউরোতে। তাদের ধারেকাছে নেই কোন ক্লাব।

এখন সবার মনে প্রশ্ন তবে কি সব সেরা খেলোয়াদেরকে মধ্য মৌসুমের দলবদলেই দেখা যাবে দলটিতে? এমনটা হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া দুষ্কর। তবে কিলিয়ান এমবাপ্পে, পল পগবা, পাওলো ডিবালার মতো খেলোয়াদের এখনই নিউক্যাসেল জার্সি গায়ে জড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম। কেননা ক্লাবটি লিগে অবনমনের দাড়প্রান্তে রয়েছে। ১৯ তম স্থানে রয়েছে ক্লাবটি। তাছাড়া তাঁরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা কোন দল নয় বিধায় তারকা ফুটবলারদের এখনই দলের ভেড়াতে পারছে না নিউক্যাসেল।

তবে জানুয়ারির দলবদলে বেশকিছু পরিবর্তন নিশ্চয়ই আসতে চলেছে নিউক্যাসেল শিবিরে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সেক্ষেত্রে নিউক্যাসেলের লক্ষ্য হতে পারে সম্ভাবনাময়ী খেলোয়াদেরকে দলে ভিড়িয়ে দলটাকে লড়াই করবার রসদ জোগান দেওয়া। অতি শীঘ্রই নতুনকরে নিয়োগ প্রাপ্ত ক্রীড়া পরিচালক হয়ত সেরকম পরিকল্পনা নিয়েই ঢেলে সাজানোর প্রচেষ্টা চালাবেন।

আর্থিক স্বচ্ছলতাই যে একটি ক্লাবের উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক বিষয়টা কিন্তু তেমন নয়। একটি ক্লাবের সামগ্রিক উন্নয়নে চাই সঠিক পরিকল্পনা ও অর্থের যথাযথ প্রয়োগ। নিউক্যাসেল ইউনাইটেড উন্নয়নের ধারা অগ্রগামী হবে কি সেটা সময়ের হাতে ন্যস্ত। তবে সঠিক পরিকল্পনা যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের প্রতিযোগিতায় আরো একটি ক্লাবের সংযোজন ঘটাতে পারে তা নিয়ে সন্দেহের কোন জায়গা নেই।

নিউক্যাসেল অর্থ হল নতুন দূর্গ। নিজেদের ইতিহাসের এতগুলো বছর কাটিয়ে এখন নামকরণের স্বার্থকতা প্রমাণ করতে চলেছে ক্লাবটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link