যত দিন যাচ্ছে এবাদত হোসেনকে নিয়ে শঙ্কা ততই বাড়ছে। দেড় মাস পুনর্বাসন চললেও তাঁর সেরে ওঠার নাম নেই। বরং, এই ফাস্ট বোলারের অবস্থা এখন অবনতির দিকে। এমনকি বিশ্বকাপ খেলাটাও হুমকির মুখে পড়তে পারে তাঁর।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালেই এবাদত ইনজুরিতে পড়েন। সফরকারীদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে গত আট জুলাই হাঁটুতে চোট পেয়ে সিরিজ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন এবাদত। সেই ম্যাচে বল ছাড়ার ঠিক আগে আম্পায়ারের গাজী সোহেলের সঙ্গে হালকা ধাক্কা লাগায় ‘ফ্ল্যাট ফুট ল্যান্ডিং’ করতে বাধ্য হন। যার ফলে, হাঁটুতে চোট পান।
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জানিয়েছিল চোট গুরুতর নয়। তবে, লম্বা সময় বিশ্রামে থাকতে হবে। এশিয়া কাপের ক্যাম্পেই ছিলেন ব্যাথা কাটিয়ে উঠে। তবে, ক্যাম্প চলাকালে আবারও ব্যাথা ফিরে আসে। আর বর্তমানে ইনজুরি জটিল আকার ধারণ করেছে।
দল যখন শ্রীলঙ্কায়, তখন এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে যাওয়া এবাদত যাবেন লন্ডনে। সেখানে অস্থি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করবেন। তাঁর বাঁ হাঁটুর ‘এসিএল রিকনস্ট্রাকশন’ করা লাগবে কি না, সেটা ওই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিশ্চিত করবেন।
স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা এবাদতকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছেন। এখন ব্রিটিশ ডাক্তার কি বলেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) রিহ্যাব সেন্টারের প্রধান হিসেবে যোগ দেওয়া ফিজিও কাইরন থমাস থাকবেন এবাদতের সঙ্গে। তিনিও এমআরআই রিপোর্ট দেখে অস্ত্রোপচারের মত দিয়েছেন।
আর অস্ত্রোপচার করা হলে, বিশ্বকাপ খেলার কোনো সম্ভাবনা নেই এবাদতের। আবার অস্ত্রোপচার না করালেও বিশ্বকাপ খেলার নিশ্চয়তা নেই।
বিসিবির প্রধান চিকিৎসক ডাক্তার দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘অস্ত্রোপচার করালে অবশ্যই ওর বিশ্বকাপ খেলা হবে না। কারণ এতে ছয় থেকে আট সপ্তাহ চলে যাবে। তা ছাড়া রিকনস্ট্রাকশন করানোর পর আপনার হাঁটু কেমন আচরণ করবে, সেটি আগে থেকে বলা অসম্ভব। পুনর্বাসন করেও যে খেলতে পারবে, নিশ্চয়তা নেই সেটিরও। কারণ পুনর্বাসনের পর ইনটেনসিটি ৬০ থেকে ৭০ শতাংশে নিয়ে গেলে দেখা যাচ্ছে সে আর নিতে পারছে না।’
যদিও, এর আগে পুনর্বাসনেই তাঁকে ওই আসরের আগে সারিয়ে তোলা সম্ভব বলে নির্বাচকদের আশ্বস্ত করেছিলেন ফিজিও এবং চিকিৎসকরা। কিন্তু, সেটা হয়নি। তাহলে আগেই কেন বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হল না এবাদতকে?
দেবাশীষ বলেন, ‘এখানে দুটি ইস্যু। একটি হচ্ছে, ওর প্রথম যে এমআরআইটি করানো হয়, এর রিপোর্টে আসে গ্রেড ওয়ান এসিএল ইনজুরি। এই ইনজুরিতে অস্ত্রোপচার করানো হয় না সাধারণত। এটির ক্ষেত্রে রক্ষণশীল ব্যবস্থাপনায় যাওয়া হয়। সেটিই সে করছিল। দ্বিতীয়ত অস্ত্রোপচারের বিষয়টি আসেনি কারণ, ওকে তো আমরা এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে চাচ্ছি। অস্ত্রোপচার করালে এই দুটির কোনোটিতেই আমরা ওকে পাব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্রোপচার আমাদের প্রাথমিক ভাবনায় ছিল না দুটি কারণে। একটি হচ্ছে সময়ের ব্যাপার, আরেকটি হচ্ছে গ্রেড ওয়ান। এ জন্যই রক্ষণশীলভাবে আমরা শুরু করেছি। এভাবে পুনর্বাসন করার সময় হলো দেড় মাস। দেড় মাস পর আমরা ওর ইনটেনসিটি বাড়িয়েছি। সপ্তম সপ্তাহে গিয়ে দেখি সমস্যা হচ্ছে। ইনটেনসিটি বাড়াতে গিয়ে দেখি ওর পা আবার ফুলে গেছে। ও নিতে পারছে না। সামনে পারে, শর্ট রানআপে বোলিংও করেছে ৬০ শতাংশ দিয়ে। কিন্তু এর বাইরে যখন আমরা ইনটেনসিটি বাড়াতে গিয়েছি, তখন সাইড টু সাইড মুভমেন্টে গিয়ে ওর সমস্যা হচ্ছিল এবং পা ফুলে যাচ্ছিল।’
তখন আবারও এমআরআই করানো হয়। দেবাশীষ বলেন, ‘যখন দেখলাম পুশ করলে হচ্ছে না, তখন আরেকটি এমআরআই করানোর সিদ্ধান্ত হয়। আগের রিপোর্টের সঙ্গে এতেও কিছু পার্থক্য ধরা পড়ে। পুশ করলে কত আর পুশ করব? এ জন্য আমরা ঠিক করলাম, দ্বিতীয় মতামত নেই। এর জন্য আমরা ওকে বাংলাদেশের সবচেয়ে নামকরা ডাক্তারের কাছে পাঠাই। উনি আমাদের বললেন যে এটি এভাবে বোধ হয় হবে না। এ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিলেই ভালো হবে।’
তবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে ইংল্যান্ড থেকেই। বিসিবি অবশ্য তাঁকে বিশ্বকাপে দেখতে চায়। দেবাশীষ বলেন, ‘এখনো বিসিবির ইচ্ছা, বিশ্বকাপে যদি ওকে খেলানো যায়! এ জন্য আরেকটি মতামত নিয়ে দেখতে বলছে। বিসিবি এবং কোচ শুনতে চাইছেন, অস্ত্রোপচার ছাড়া ওকে খেলানো যায় কি না?’