২০০৯ কেন ফেরে না!

বাংলাদেশের পেসাররা টেস্ট ক্রিকেটে এখন বিদেশের মাটিতেও ভালো করছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সেই জয়টা তো পেসাররাই এনে দিয়েছিল। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায়ও পেসারদের পারফর্মেন্স মন্দ ছিল না। এতে করে কখনো কখনো দলীয় সাফল্যও মিলছে। টেস্ট ক্রিকেটে ওই পেস বোলিং কন্ডিশনেও লড়াই করতে পারছে বাংলাদেশ দল।

নিউজিল্যান্ড,দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের এমন পারফর্মেন্স নতুন হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে কিন্তু একেবারেই নয়। সেনা দেশগুলোতে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স ছিল একেবারেই করুণ। এবছরই নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যা কিছু সাফল্য মিলেছে। কিন্ত ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে চিত্রটা বরং উল্টো। এই দেশটাতে বাংলাদেশের আগে থেকেই কিছু সুখস্মৃতি আছে। বিশেষ করে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালেই যেন মিলছেনা সাফল্য।

আপনাদেরন একেবারে বাংলাদেশ ক্রিকেটের হামাগুড়ি দেয়ার সময়টাতে ফিরিয়ে নিয়ে যাই। ২০০৪ সালে হাবিবুল বাশার সুমনের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেইন সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে কোন কন্ডিশনে বাংলাদেশের কোন সুখস্মৃতি নেই। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কঠিন কন্ডিশনে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হাল কী হয়েছিল অনুমান করতে পারেন?

তার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই সময়ের দলটার কথা একবার মনে করিয়ে দেই। ব্রায়ান লারার নেতৃত্বে শিবনারায়ন চন্দরপাল, ক্রিস গেইল, টিনো বেস্টদের নিয়ে গড়া দল। আপনি হয়তো ধারণা করছন বাংলাদেশ স্রেফ পাত্তাই পায়নি তাহলে ভুল। ওই সিরিজের প্রথম টেস্টে বরং বাংলাদেশই ডোমিনেট করে খেলেছে।

প্রথম ইনিংসে হাবিবুল বাশার সুমন ও মোহাম্মদ রফিকের সেঞ্চুরিতে ৪১৬ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। সাথে মোহাম্মদ আশরাফুলের ৮১ রানের ইনিংসও ছিল। এরপর মুশফিকুর রহমান ও মোহাম্মদ রফিকের বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আঁটকে যায় ৩৫২ রানেই। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসেও বাংলাদেশের ২৭১ রানের ইনিংস। সেখানে আবার খালেদ মাসুদ পাইলটের সেঞ্চুরি। সবমিলিয়ে ব্রায়ান লারাদের সামনে ৩৩৬ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ অবশ্য এরপর কোন উইকেট না হারিয়েই পঞ্চম দিনের খেলা শেষ করেছিল। কিন্তু চতুর্থ বাংলাদেশের ৩৩৬ রানের টার্গেট দেয়া কিংবা এমন লড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কাপিয়ে দিয়েছিল। আর ২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে সেই ড্র ছিল বাংলাদেশের জন্য বিশাল এক অর্জন।

এমনকি শোনা যায় সেই ম্যাচের পর বেশ চাপেই পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা। ব্রায়ান লারা এরপরের ম্যাচ জিততে না পারলে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবেন এমন আলোচনাও ছিল। ফলে ওই সময়ে বাংলাদেশের এমন পারফর্মেন্স কতটা আলোড়ন ফেলেছিল বোঝাই যাচ্ছে।

এরপর ২০০৯ সালে তো সাকিবের দল রীতিমত ইতিহাসই গড়ে ফেললো। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্ব ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইট ওয়াশই করে দিল বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টের ম্যান অব দ্য ম্যাচ ছিলেন তামিম ইকবাল। এছাড়া বল হাতে সাকিব, রিয়াদ, রুবেলরাও ছিলেন অনবদ্য। বাংলাদেশের কাছে রীতিমিত পাত্তাই পায়নি ক্যারিবীয়রা।

আর দ্বিতীয় টেস্টে তো সাকিব আল হাসান শো। ব্যাট হাতে ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংসের পাশাপাশি বল হাতেও নিয়েছিলেন মোট ৮ উইকেট। হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য সিরিজও। বাংলাদেশও প্রথমবারের মত ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতে যায়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সমইয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স যেন নিন্মমুখী। ২০১৮ সালে ক্যারিবীয় সফরে দুটি টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। সেখানে ২ টেস্টেই হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় প্রথম টেস্টে ছিল ইনিংস হারের লজ্জাও।

এবারো অ্যান্টিগা টেস্টের চিত্রটা অনেকটা একইরকম। ব্যাটসম্যানরা দুই ইনিংসেই হয়েছেন ব্যর্থ। যদিও পেসাররা খানিকটা লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্ত তাতে পুরনো সেই সময় ফিরেনি। দ্বিতীয় টেস্টে সাকিবের দল নিশ্চয়ই আবার ২০০৯ সালেই ফিরে যেতে চাইবে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link