ছোট ফরম্যাটের ‘বুড়ো’রা

ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সংস্করণের নাম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে মূলত তরুণ, এনার্জিটিক ক্রিকেটারদেরই প্রাধান্য দেয়া হয়। একটু বয়স হলেই এই ফরম্যাটটা আর অনেকেই খেলতে চান না। টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার হিটিং, শারীরিক সামর্থ্য, ফিল্ডিং এগুলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই হয়তো তরুণদের দিকেই বেশি ঝোঁকে দলগুলো।

কখনো কখনো ফিটনেসের কথাও বলা হয়। তবে ওয়ানডে কিংবা টেস্ট ক্রিকেট খেলতেও নিশ্চয়ই কম ফিটনেস প্রয়োজন হয় না। সিনিয়র ক্রিকেটাররা সেগুলোতে ঠিকই খেলছেন। আসলে বয়স যে শুধুই একটা সংখ্যা সেটা বেশ কয়েকজন প্রমাণও করেছেন। ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসেও তাঁরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেছেন। পাকিস্তানের হয়ে শোয়েব মালিক প্রায় ৪০ ছুঁই ছুঁই বয়সে এসেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছেন।

সবচেয়ে বেশি বয়সে টি-টোয়েন্টি খেলা ক্রিকেটারদের নিয়েই এই তালিকা। অবাক করা ব্যাপার হল এই তালিকায় কয়েকজন কিংবদন্তিও আছেন।

  • জন ডেভিসন (কানাডা)

কানাডার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারদের একজন এই জন ডেভিসন। দেশটির হয়ে তিনি ৩২ টি ওয়ানডে ম্যাচ ও ৫ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর ঝুলিতে একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছে ৫ টি হাফ সেঞ্চুরিও। এছাড়া বল হাতেও নিয়েছেন ৪০ উইকেট।

জন ডেভিসন ৪০ বছর অবধি কানাডার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। ২০১০ সালে আইসিসি টি-টোয়েন্টি কোয়ালিফায়ারে তিনি যখন কেনিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামেন তখন তাঁর বয়স ৩৯ বছর ২৭৭ দিন। তিনি বিশ্বের ৫ম বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলার রেকর্ড করেন। এরপরের বছরই অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন ডেভিসন।

  • সুনীল ধানিরাম (কানাডা)

এই তালিকায় কানাডার আরেকজন ক্রিকেটার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন সুনীল ধানিরাম। তিনি কানাডার হয়ে মোট ৪৪ টি ওয়ানডে ম্যাচ ও ১১ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। আন্তির্জাতিক ক্রিকেটে সুনীলের ঝুলিতে আছে ছয়টি হাফ সেঞ্চুরি। এছাড়া বল হাতে পাঁচ উইকেট নেয়ার রেকর্ডও আছে তাঁর।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চতুর্থ বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। কেনিয়ার বিপক্ষে যখন নিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৪১ বছর ১১৬ দিন। এছাড়া কানাডার ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অলরাউন্ডারদের একজন সুনীল ধানিরাম।

  • সনাথ জয়সুরিয়া (শ্রীলঙ্কা)

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড ছিলেন সনাথ জয়সুরিয়া। শ্রীলঙ্কার হয়ে ওপেন করে সেইসময় কত বোলারদের বল কয়ে সীমানা পার করেছেন। প্রায় দুই দশক ধরে ধারাবাহিক ভাবে এই আক্রমণাত্মক ক্রিকেটটা খেলে গেছেন জয়সুরিয়া।

কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যানের ঝুলিতে আছে ৪২ টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। এছাড়া ২০১১ সাল অবধি শ্রীলনগকার হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ যখন খেললেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৪১ বছর ৩৬০ দিন।

  • স্টিভ টিকোলো (কেনিয়া)

কেনিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের সফল অধিনায়কদের একজন স্টিভ টিকোলো। দেশটির হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন লম্বা সময় ধরে। নিজের দেশের হয়ে মোট ১৩৫ টি ওয়ানডে ম্যাচ ও ১৫ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন টিকোলো। সেখানে তিনটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছ্র ২৪ টি হাফ সেঞ্চুরি। এছাড়া বল হাতেও আছে ১০০ এর বেশি উইকেট।

নিজের ক্যারিয়ারের একদম শেষ সময়ে এসেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। দ্বিতীয় বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। শারজা তে কানাডার বিপক্ষে ২০১৩ সালে নিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। সেই সময় টিকোলোর বয়স ছিল ৪২ বছর ১৫৪ দিন।

  • ব্র্যাড হগ (অস্ট্রেলিয়া)

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলার রেকর্ড করেছেন ব্র্যাড হগ। এই চায়নাম্যান বোলার অজিদের হয়ে লম্বা সময় ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেছেন। তবে শেন ওয়ার্ন, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলদের ছায়া হয়ে থেকেছেন সবসময়।

তবুও অজিদের হয়ে ৭ টি টেস্ট ও ১৫ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। হগ নিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলেছেন ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সেইসময় তাঁর বয়স ছিল ৪৩ বছর ৩৪ দিন।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link