বাসবি বেইবস ও মিউনিখ ট্র্যাজেডি

লিগ কর্তৃপক্ষের চোখরাঙানি এড়াতে এছাড়া বিকল্প কোন পদ্ধতিও খোলা ছিলো না তখনকার স্মরণীয় রেড ডেভিলদের কাছে, অগত্যা বিমানপথেই বাড়ি ফেরার পথ ধরলো দলটা। বেলগ্রেড থেকে ফেরার পথে ফরোয়ার্ড জনি বেরি খুইয়ে বসেন তার পাসপোর্ট। স্রষ্টা হয়তো আগেভাগেই তাঁকে সতর্ক করে দিতে চাচ্ছিলেন!

৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮। ঘড়ির কাঁটা তখন তিনটা ছুঁই ছুঁই! দুই লেগে রেডস্টার বেলগ্রেডকে ৫-৪ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করাতে বেশ উৎফুল্ল চিত্তেই ছিলেন ‘বাসবি বেইবস’ খ্যাত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড খেলোয়াড়রা। বছর তিনেক আগে শুরু হওয়া ইউরোপিয়ান কাপে ইংলিশ লিগের ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ প্রথম দুই আসরে কোন দল পাঠায়নি লিগ কর্তৃপক্ষ।

কাপ ম্যাচের নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী মিড উইকে আর লিগ ম্যাচ পরবর্তী শনিবার। মূলতঃ স্কেজিউল বিপর্যয় এড়াতেই ছিলো এই বাঁধা। কিন্তু ইউনাইটেড বস ম্যাট বাসবি ছিলেন নাছোড়বান্দা।  ইউনাইটেড কর্তা-ব্যক্তিদের মাধ্যমে লিগ কর্তৃপক্ষ থেকে ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নামার অনুমতি নিয়ে নেন। তখনকার দিনে বিমানযাত্রাও তেমন নিরাপদ ছিলো না।

কিন্তু, লিগ কর্তৃপক্ষের চোখরাঙানি এড়াতে এছাড়া বিকল্প কোন পদ্ধতিও খোলা ছিলো না তখনকার স্মরণীয় রেড ডেভিলদের কাছে, অগত্যা বিমানপথেই বাড়ি ফেরার পথ ধরলো দলটা। বেলগ্রেড থেকে ফেরার পথে ফরোয়ার্ড জনি বেরি খুইয়ে বসেন তার পাসপোর্ট। স্রষ্টা হয়তো আগেভাগেই তাঁকে সতর্ক করে দিতে চাচ্ছিলেন!

কর্তৃপক্ষের ভাড়া করা ‘এলিজাবেথান এয়ারস্পিড এয়ারক্রাফট’ এর বেলগ্রেড থেকে ম্যানচেস্টার পর্যন্ত জ্বালানি বহন সক্ষমতা ছিলো না। তাই পাইলট মিউনিখের রেম বিমান বন্দরে নেমে জ্বালানি সংগ্রহ করেন। জ্বালানি সংগ্রহ করা শেষে পাইলট দু’বার টেক অফের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে সবাইকে নামিয়ে লাউঞ্জে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

কিন্তু, পরক্ষণেই শিডিউল বিপর্যয় আর লিগ কর্তৃপক্ষের চোখ রাঙানির খড়গ থেকে বাঁচতে তুষারপাতের মধ্য দিয়েই বিমান টেক অফের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নিয়ন্ত্রণ না থাকা সত্বেও পাতলা তুষারে ঢাকা রানওয়েতে এক্সেলারেশন এটেম্পট নিতে গেলেই বাঁধে বিপত্তি!

রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে পাশের একটা বাড়িতে ধাক্কা খেয়ে ভাঙে বাম ডানা। আরেকটু সামনে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে দ্বিখন্ডিত হয় বিমানটি। একরাশ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় বিমানবন্দর এলাকা। প্রাণ হারান ইউনাইটেডের ফুটবলার,ক্লাব কর্মকর্তা, সাংবাদিক সহ মোট ২৩ জন। ইউনাইটেড খেলোয়ারদের মধ্যে ছিলেন রবার্ট ব্রুনি, মার্ক জোনস, ডানকান এডওয়ার্ডস, টমি টেইলর, এডি কোলম্যান, লিয়াম হুইলান, ডেভিড প্রেগ এবং জিওফ বেন্ট।

স্যার বাসবি সে দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে-বর্তে ফিরলেও মানসিকভাবে প্রচণ্ড ভেঙে পড়েন এবং ফুটবল থেকে গুটিয়ে নেন নিজেকে। এই জীবন তিনি চাননি। নিজের হাতে গড়ে তোলা দলটাকে চোখের সামনে দেখলেন নি:শেষ হয়ে যেতে।

পরে স্ত্রীর ইচ্ছাতেই আবারো ফুটবলে ফিরেন তিনি।  মিউনিখের এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ফুটবল জগতে ‘মিউনিখ ট্রাজেডি’ নামেই পরিচিত। ডিফেন্ডিং লিগ চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এ দুর্ঘটনা সামলে উঠেছিলো পরে ঠিকই কিন্তু মাঝে কেটে গেছে আরো সাতটা বছর, কিন্তু ‘বাসবি বেইবস’? এমন আরেকটা সর্বজয়ী প্রজন্ম দেখার সৌভাগ্য রেড ডেভিলদের হয়নি আর কখনো!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...