একেবারে পয়সা উসুল। বিনোদনের চূড়ান্ত নিদর্শন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সত্যিকার অর্থের ‘ম্যাডনেস’-ই হয়েছে মঞ্চায়ন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) যা হয়েছে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য! সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের ব্যাটাররা করেছেন রান পাহাড়। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দু:সাহস দেখিয়েছে সেটি টপকাবার। তাতেই রেকর্ড বইয়ে হয়েছে নানা কাটাছেড়া।
হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক পসলা ভারি বর্ষণ। না বৃষ্টির নয়, সে বর্ষণ ছিল রানের। বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারির নেশায় মত্ত হয়েছিলেন দুই দলের ব্যাটাররা। তাদের বিপক্ষে বোলারদের মুখশ্রী হয়েছে কেবলই কাল। দর্শকদের চিবুক গেছে ঝুলে- এও বুঝি সম্ভব!
প্রথম ইনিংসে ২৭৭ রান তুলে ফেলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১ রান দূরে থামে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। তাতেই যেকোন পর্যায়ের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সর্বাধিক রানের রেকর্ডটি লেখা হয় নতুন করে। দুই দলের ব্যাটারদের কল্যাণে ৫২৩ রান হয়েছে স্রেফ একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। এ যেন রীতিমত সাদা-মাটা কোন এক ওয়ানডের রান।
এমনকি হায়দ্রাবাদের করা ২৭৭ রান জায়গা করে নিয়েছে আরও একটি রেকর্ডে। এক ইনিংসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি এখন তাদেরই দখলে। এই তো ক’দিন আগেই এক নম্বর স্থান নিজেদের করে নিয়েছে নেপাল। এশিয়ান গেমসে তারা তুলেছিল ৩১৪ রান। তবে আইপিএলের ইতিহাসে অবশ্য এক নম্বরেই উঠে এসেছে সানরাইজার্সের সংগ্রহ।
১১ বছর আগে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি গড়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। ক্রিস গেইল আর এবি ডি ভিলিয়ার্সের তাণ্ডবে সেদিন ২৬৩ রান জমা করেছিল বিরাট কোহলির দল। প্রায় এক দশক বাদে হায়দ্রাবাদ ও মুম্বাইয়ের ম্যাচটি ছাপিয়ে গেছে সবকিছু।
ম্যাচটিতে হয়েছে আরও একটি রেকর্ড। এদিন ব্যাটাররা ছক্কা মারার মহোৎসবে যেন হয়েছিলেন লিপ্ত। কেউ আর মাটিতে শট খেলতে চাননি। প্রায় প্রতিটা বল আছড়ে ফেলতে চেয়েছেন আকাশে ভাসিয়ে বাউন্ডারির ওপারে। সে এক বড্ড ভয়ংকর নেশা। এক পেয়ে বসলেই, সেখান থেকে পরিত্রাণ মেলে না।
ম্যাচটিতে দুই দলের ব্যাটারদের ব্যাট থেকে চার হয়েছে ৩১টি। আন্দাজ করতে পারেন ঠিক কতগুলো ছক্কা মেরেছেন তারা? ৩৮টি ছক্কা! যার মধ্যে সর্বাধিক ছক্কা এসেছে অভিষেক শর্মা ও এনরিখ ক্লাসেনের ব্যাট থেকে। সানরাইজার্সের এই দুই ব্যাটার সমান সাতটি করে বল হাওয়ায় ভাসিয়ে গ্যালারি অবধি পাঠিয়েছেন।
মজার বিষয় হচ্ছে, রানবন্যার এই ম্যাচে হয়নি কোন সেঞ্চুরি। দুই দলের মোট চারজন ব্যাটার হাফসেঞ্চুরি করেছেন। এমনকি সবাই ২৫ বলের মধ্যেই নিজেদের অর্ধশতক পূরণ করেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরিটি করেন সানরাইজার্সের ভারতীয় ব্যাটার অভিষেক শর্মা। মাত্র ১৬ বলেই অর্ধশতকের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন তিনি।
দুর্দান্ত এক ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রদর্শনীই হয়ে গেল। দর্শকদের বিনোদিত করতে কোনরকম কার্পণ্যই যেন করেনি ম্যাচটি। ঠিক এই কারণেই তো ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের প্রসার ঘটানো। দর্শকদের এক বিনোদনের সাগরে ভাসানোর উদ্দেশ্যেই তো ব্যাটারদের পক্ষেই থাকে সমস্ত কিছু। এমন দিনের জন্যেই বোধহয় নতুন দিনের ক্রিকেট ভক্তরা অপেক্ষায় থাকেন।