বিশ ওভারের ক্রিকেটে হ্যাগলি ওভালে প্রথমে ব্যাট করা দলের গড় রান ১৬৯। পাকিস্তান সেখানে করেছিল দুই রান কম, ১৬৭ । তারপরও দিন শেষে ২১ রানের পরাজয় জুটেছে বাংলাদেশের। নির্বিষ বোলিং, একই সাথে ব্যাটিং ভগ্নদশা- এ দুইই ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে।
মুস্তাফিজ, হাসান মাহমুদ, তাসকিন- এ পেসত্রয়ী অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটে বাংলাদেশের কতটুকু কাজে আসতে পারে? পাকিস্তানের বিপক্ষে আজ দারুণ বল করেছেন তাসকিন। ৪ ওভারে মাত্র ২৫ রান রান দিয়ে পেয়েছেন দুই উইকেট। বাউন্সি পিচে তাসকিন তাই বেশ কার্যকরী।
কিন্তু, বাকি দুজন মিলে আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮ ওভারে দিয়েছেন ৯০ রান। মুস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ৪৮ আর হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে দিয়েছেন ৪২ রান। হাসান মাহমুদ একটি উইকেট পেলেও মুস্তাফিজ ছিলেন উইকেটশূন্য।
পাকিস্তানের ১৬৭ রানের সংগ্রহে বাকি বোলাররা যেখানে ১২ ওভারে ৭৭ দিয়েছেন সেখানে হাসান আর মুস্তাফিজ মিলেই দিয়েছেন ৯০ রান। অথচ অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে এদেরকেই জ্বলে উঠতে হবে। পেস সহায়ক উইকেটের ফায়দা নিতে হবে। কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো, সেই একই রকম পিচে আক্রমণাত্বক কোনো বোলিংয়ের ধাঁচই পাওয়া যায়নি।
আসন্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে প্রত্যেকটি দলই দল গঠনের সময় সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন পেস বোলিং লাইন আপকে। কন্ডিশন বিবেচনায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে ১/২ টি পেসার বেশি নিয়েই স্কোয়াড ঘোষণা করেছে দলগুলো। বাংলাদেশের স্কোয়াডেও আছে ৪ পেসার। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে পুরোদস্তুর পেসার হিসেবে ধরলে সংখ্যা হবে ৫। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মতো কন্ডিশনে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের বিধ্বস্ত করে দেওয়ার মতো পেসার কি আছে স্কোয়াড?
মুস্তাফিজ অনেক দিন ধরেই রয়েছেন অফফর্মে। মিরপুরের বাইরে অচেনা কন্ডিশনে অচেনা এক মুস্তাফিজের দেখা মিলছে অনেকদিন ধরেই। যদিও দেশের চেয়ে দেশের বাইরের মাটিতেই বেশি টি-টোয়েন্টি উইকেট পেয়েছেন তিনি।
একমাত্র ৫ উইকেটের বোলিং ফিগারও পেয়েছিলেন বাইরেই। তবে চিন্তার বিষয় হলো, দেশের বাইরে মুস্তাফিজ বেশ খরুচে। বাইরে এসে তিনি ৩৮ ম্যাচে ৪৮ উইকেট নিলেও এ সময় তাঁর ইকোনমি রেটটা প্রায় ৯ ছুঁইছুঁই, ৮.৮৮। অর্থাৎ টি-টোয়েন্টি যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেই রান আটকাতেই মুস্তাফিজ মোটাদাগে ব্যর্থ।
মুস্তাফিজের বোলিং নিয়ে আরেকটি চিন্তার কারণ হলো, বাউন্সি কন্ডিশনে যে ধরনের আক্রমণাত্মক বোলিং প্রয়োজন সেই ধরনের বোলিং তিনি ডেলিভার করতে পারছেন না। নিজের শক্তিমত্তার জায়গা কাটার। কিন্তু সেই কাটারও এখন নির্বিষ হয়ে যাচ্ছে। ব্যাটাররা খুব ভাল ভাবে বুঝে হিট করতে পারছে।
আর মুস্তাফিজের কাটার ছাড়া বোলিংয়ে তেমন কোনো অস্ত্রও নেই। অন্তত এই মুহূর্তে তো দেখা যায় না। ‘মুস্তাফিজ’, এই নামের ভার বিবেচনা না করলে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে মুস্তাফিজ আর অটোমেটিক চয়েস থাকছেন না এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
হাসান মাহমুদ। তরুণ এ পেসার আগের খেলা ৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বেশ ভালই বোলিং করেছিলেন। পেসের সাথে ভাল সুইং দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে। তবে তাঁর বোলিংয়ের দুর্বলতা হল, সে বলের লাইন লেন্থে ধারাবাহিক না। নিজের প্রতি ঐ আত্মবিশ্বাসটারও কোথায় যেন একটু ঘাটতি আছে।
আরেকটি সমস্যা হলো, হাসান মাহমুদ বেশ ইনজুরি প্রবণ। এজন্য প্রতিটা ম্যাচে তাঁকে একাদশে খেলাতেও দ্বিধাবোধ করে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে হাসান মাহমুদের বোলিং অ্যাকশন, পেস এক্যুরেসি সাথে দুই দিকে ইনসুইং করার ক্ষমতা অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে কাজে দিবে বলেই মনে হয়।
পেসারদের মধ্যে বাকি রইল তাসকিন আহমেদ আর এবাদত হোসেন। এখন পর্যন্ত তাসকিন যেমন বোলিং করছেন তাতে সে ঠিকঠাক। বিশ্বকাপে তাসকিনের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়াই যায। ইবাদতও এমন বাউন্সি উইকেটে বেশ সহায়তা পেতে পারে। তবে তাঁরও ধারাবাহিকতার সমস্যা।
শুরুর ছন্দ শেষ অবধি ধরে রাখতে পারেন না। বিশেষত, ম্যাচের ক্রাঞ্চ মোমেন্টে সে ব্রেইনলেস বোলিং করে ফেলে। ব্যাটারের মাইন্ডসেট বুঝতে ভজকট পাকিয়ে ফেলেন। তবে তাঁর যেরকম বলে গতি আছে, সাথে ইনসুইং আর ইয়র্কার মিলে সে যদি ম্যাচে পারফর্ম করতে পারে তাহলে নিজের দিনে ইবাদত প্রতিপক্ষ পেসারদের জন্য ভয়ংকর হতে পারেন।
স্পিন বোলিংয়ে বাংলাদেশ বরাবরই একই গতিতে এগিয়েছে। বোলিংয়ে ভ্যারিয়েশন থাকা তেমন কোনো স্পিনারের দেখা কখনোই পাওয়া যায়নি। তারপরও অফস্পিন দিয়ে বাংলাদেশ অনেক বছর ধরেই কাজ চালিয়েছে। এবারও তাই হয়েছে। সাকিব বাদে দলে স্পিনার বলতে আছেন নাসুম আহমেদ।
আর পুরো চার ওভারের কোটা পূরণ করার মতো স্পিনার তেমন নেই। মূলত অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন মাথায় রেখেই স্কোয়াডে বেশি স্পিনার যুক্ত করা হয়নি। গড়পড়তা স্পিন ডিপার্টমেন্ট হলেও প্রয়োজনীয় সময়ে স্পিনাররাই ব্রেক থ্রু দিয়ে থাকে। তাই স্পিন বোলিং নিয়ে আপাতত কিছু বলার কোনো অবকাশ নেই।
অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে বিশ্বকাপে ভাল করতে হলে জ্বলে উঠতে হবে পেসারদেরই। তবে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ার মতো বিষয় হলো, একমাত্র তাসকিন বাদের কোনো পেসারই তেমন লম্বা সময় ধরে ফর্মে নেই। এমনকি বোলিংয়ে এক সময়কার ট্রাম্প কার্ড হিসেবে যাকে বিবেচনা করা হতো সেই মুস্তাফিজও তেমন আশার যোগান দিতে পারছেন না।
তাই অনেক ‘যদি’, ‘কিন্তু’ উপর ছেড়ে দিয়েই বিশ্বকাপ মিশনে নামতে হবে বাংলাদেশকে। এর আগে অবশ্য ত্রিদেশিয় সিরিজের মাধ্যমে পেসারদের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত কেমন বোলিং আক্রমণ নিয়ে অজি দূর্গে বাংলাদেশ যায়, সেটির দিকেই চোখ সবার।