এশিয়া কাপ নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বৈরিতার শুরুটা এই এশিয়া কাপকে ঘিরেই হয়েছিল। তবে এখন সব তিক্ততা ভুলে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সমাঝোতায় অবশেষে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এশিয়ান ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এ আসর।
অথচ আসন্ন এশিয়া কাপ নিয়ে কত অনিশ্চয়তায় না চোখ রাঙানি দিচ্ছিল! এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক দেশ পাকিস্তানে যাওয়ার ব্যাপারে শুরু থেকেই ‘না’ বলে আসছিল ভারত। তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকে হাইব্রিড মডেলে প্রস্তাব দেয় পাকিস্তান। তারপরও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সে প্রস্তাবে মন গলেনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের।
এমতাবস্থায় ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে পাকিস্তান। তাঁরাও ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে না যাওয়ার পাল্টা হুমকি দেয়। আর পাকিস্তানের এমন হুমকিতে নড়েচড়ে বসে আইসিসিও। চলমান এ অস্থিরতা কাঁটাতে প্রায় ১৫ বছর পর পাকিস্তান সফরে যায় আইসিসির শীর্ষ দুই কর্মকর্তা।
যাহোক, ঘটনাবহুল এ দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রস্তাব মেনে নিয়েই হাইব্রিড মডেলে হতে চলেছে এশিয়া কাপ। পাকিস্তানের সঙ্গে নিরপেক্ষে ভেন্যু হিসেবে এবারের এশিয়া কাপের সহ-আয়োজক শ্রীলঙ্কা। তবে মূল আয়োজক পাকিস্তান হলেও সর্বোচ্চ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে লঙ্কানদের মাটিতেই।
আর ভারতের এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে না গিয়ে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে পিসিবি চেয়েছিল, বিশ্বকাপে বাবর-রিজওয়ানদের ম্যাচ আহমেদাবাদে যেন না রাখা হয়। এ জন্য আইসিসির সহায়তাও চেয়েছিল পিসিবি।
কিন্তু পিসিবির এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি ভারত। বিশ্বকাপের খসড়া সূচিতে ১৫ অক্টোবর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ রেখেছে বিসিসিআই। অবশ্য এ নিয়ে পিসিবি তরফ থেকে তেমন কিছু বলা হয়নি। বরং বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতায় জানিয়েছেন পিসিবি প্রধান নাজাম শেঠি।
কিন্তু ভারতের এমন স্বেচ্ছাচারিতায় বেশ চটেছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদ। তাঁর মতে, পাকিস্তানেরও উচিৎ বিশ্বকাপ বয়কট করা।
এ নিয়ে তিনি এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘২০১২ সালে ভারত সফর করেছিল পাকিস্তান। এ ছাড়া ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও গিয়েছে কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই। এবার তো ভারতীয়দের আসার পালা। আমাকে যদি সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হতো, আমি কখনোই ভারতে যেতাম না। এমনকি বিশ্বকাপ খেলতেও নয়।’
‘আমরা সব সময় ওদের সঙ্গে খেলতে প্রস্তুত থাকি। কিন্তু ওরা সেভাবে সাড়া দেয় না। পাকিস্তানের ক্রিকেটের মান ভারতের চেয়ে অনেক ভালো। আমরা আগের মতো এখনও অনেক বিশ্বমানের খেলোয়াড় তৈরি করছি। তাই আমরা না গেলেও কোনো কিছু আসে যায় না।’, যোগ করেন তিনি।
২০০৮ এশিয়া কাপ খেলতে সর্বশেষ পাকিস্তানে গিয়েছিল ভারত। আর বিসিসিআইয়ের আমন্ত্রণে পাকিস্তান দল সর্বশেষ ভারত সফর করেছে ২০১২-১৩ সালে। মূলত ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরই পাকিস্তানের জন্য ভারতের দ্বার বন্ধ হয়ে যায়।
মিয়াঁদাদ অবশ্য নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিরক্তির সুরেই নিজের ক্ষোভ ঝেড়েছেন। তাঁকে চরমপন্থী আখ্যা দিতেও ছাড়েননি তিনি।
তিনি বলেন, ‘একে-অন্যকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হয়। আমি সব সময় বলে এসেছি, ক্রিকেট এমন একটা খেলা যেটা দুই দেশের মানুষকে একত্রিত করতে পারে, ভুল ধারণার অবসান ঘটাতে পারে। দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হলেও একসময় নিয়মিত খেলা হতো। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেটের সঙ্গে রাজনীতি মিশিয়েছে। সে একজন চরমপন্থী। সে ক্রিকেট ও দুই দেশকে বিভক্ত করে রেখেছে। যেটা মোটেই কাম্য নয়।’