আগা থেকে গোড়া – পাকিস্তানের পুরোটাই ফাঁড়া

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দামামা বেজে উঠেছে। বিশ্বকাপ শুরু হতে বাকি মাত্র সপ্তাহ পাঁচেক। সব দলই ব্যস্ত নিজেদের দল সাজাতে, দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে। দ্য আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানও তার ব্যতিক্রম নয়, এশিয়া কাপের রানারআপরা সেরে নিচ্ছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

তবে, সেই প্রস্তুতিতে শঙ্কাও আছে। কারণ, এশিয়া কাপের রানার আপ হলেও টানা দুই ম্যাচে তাঁরা হেরেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতেছে হারতে হারতে। এছাড়া ভারতের বিপক্ষে হার তো আছেই। সব মিলিয়ে স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই। পাকিস্তানের অস্বস্তির কারণগুলো এবার বিস্তারিত জানা যাক।

  • বাবর-রিজওয়ানের স্ট্রাইক রেট

বর্তমান সময়ে টি-টোয়েন্টি সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের নাম বলা হলে নিশ্চিতভাবেই তাতে থাকবে দুই পাকিস্তানি ব্যাটার বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানের নাম। গত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে এখনো পর্যন্ত পাকিস্তানের মোট রানের ৬০% করেছেন এই দুইজন।

কিন্তু, পরিসংখ্যান কখনোই ম্যাচের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে পারে না, পারেনি এই ওপেনিং জুটির ক্ষেত্রেও। বাবর-রিজওয়ান দুজনই একই ঘরানার ব্যাটসম্যান। শুরুতেই চালিয়ে খেলতে পারেন না, সেট হতে সময় নেন। ফলশ্রুতিতে পাওয়ার প্লে-তে রান তোলার ক্ষেত্রে ম্যাচের শুরুতেই খানিকটা পিছিয়ে যায় পাকিস্তান।

রিজওয়ানের কথাই ধরুন না। ২৮১ রান করে এবারের এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারের স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১৭। উপরের দিকে বেশি বল খেলে ফেলার সুবাদে নিচের দিকে ব্যাটসম্যানরা ম্যাচ শেষ করে আসার জন্য পর্যাপ্ত বল পাচ্ছেন না। এবারের এশিয়া কাপ ফাইনালের কথাই মনে করা যাক না।

১৭১ রানের  টার্গেটে খেলতে নেমে শুরু থেকেই উইকেট সামলে খেলা রিজওয়ান ৪৯ বলে ৫৫ রান করে যখন আউট হলেন তখনো পাকিস্তানের দরকার ২৩ বলে ৬১ রান। অথচ শুরু থেকেই আরেকটু আগ্রাসী হয়ে খেলতে পারলে ম্যাচটা হাতের নাগালেই থাকতো পাকিস্তানের। 

অন্যদিকে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমের জন্য বছরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। এ বছর সাত ইনিংসে মাত্র একটা পঞ্চাশোর্ধব ইনিংস খেলেছেন বাবর। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৬ বলে ৬৬ রানের ইনিংস খেলা সেই ম্যাচেও খেলেছেন চাহিদার চাইতে ধীরগতিতে। বাবর ও রিজওয়ান একত্রে ব্যাট করছেন এমন সময় তাদের স্ট্রাইকরেট মাত্র ১২২। 

এই সমস্যা পাকিস্তানের হাতে অপশন হতে পারেন ফখর জামান। বাবর কিংবা রিজওয়ান একজনকে তিনে নামিয়ে আগ্রাসী ফখর জামানকে ওপেনিং এ পড়মোট করলে পাকিস্তান দুটো সুবিধা পাবে। এক পাওয়ারপ্লেতে রান তোলার গতি বাড়বে আর ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনে প্রতিপক্ষের বোলারদের চাপে ফেলা যাবে। 

  • মিডল অর্ডারের অফফর্ম

টপ অর্ডারের ধীরগতির ব্যাটিং এর দুর্বলতা পুষিয়ে দিতে প্রয়োজন বিধ্বংসী মিডল অর্ডার। ইফতেখার আহমেদ, খুশদিল শাহ, আসিফ আলিদের সেই সামর্থ্য থাকলেও তাদের দুর্বলতার নাম স্পিন। পাকিস্তানের মিডল অর্ডারে হার্ডহিটার ব্যাটাররা পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে স্বাচ্ছন্দ্য হলেও স্পিনে বড়ই দুর্বল।

এবারের এশিয়া কাপে পাকিস্তান অবশ্য বেশ চমকপ্রদ এক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্পিনের হাত থেকে তাদের মিডল অর্ডারকে বাঁচাতে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শাদাব খান এবং ভারতের বিপক্ষে মোহাম্মদ নওয়াজকে ব্যাটিং অর্ডারে উঠিয়ে এনেছিল রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, যুজবেন্দ্র চাহালদের হাত থেকে বাঁচাতে।

মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের সাম্প্রতিক ফর্মও তেমন একটা সুবিধার নয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে ১৪৬ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করা খুশদিল শাহ জাতীয় দলের হয়ে রান করেছেন মাত্র ১১০ স্ট্রাইকরেটে। আসিফ আলি নেটে প্রতিদিন দেড়শ ছক্কা হাঁকালেও খুব কম সময়েই সেটা ম্যাচে টেনে আনতে পারছেন। 

মিডল অর্ডারের সমস্যা সমাধানে পাকিস্তান শাদাব খানকে ব্যাটিং অর্ডারের প্রমোশন দিতে পারে। লেগস্পিনার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ব্যাটিংটাও মন্দ জানেন না শাদাব। ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের হয়ে পিএসএলে তাকে নিয়মিতই চারে নামতে দেখা গেছে। স্কোয়াডে থাকা হায়দার আলীও দারুণ অপশন হতে পারেন পাকিস্তানের জন্য।

গত ডিসেম্বর থেকেই দলের সাথে থাকা এই ব্যাটসম্যান অবশ্য মার্চের পর কোনো ম্যাচেই একাদশে সুযোগ পাননি। দলের বাইরে থাকাদের মধ্যে থেকে শান মাসুদ, শারজিল খান কিংবা আজম খানদের চাইলেই ডাকতে পারে পাকিস্তান। বিশেষ করে শারজিল আছেন দারুণ ফর্মে, দিনকয়েক আগেই ঘরোয়া ক্রিকেটে সিন্ধের হয়ে খেলেছেন ৬২ বলে ১০৭ রানের দারুণ এক ইনিংস। 

  • শাহীন শাহ আফ্রিদির ইনজুরি

যেকোনো ফরম্যাটেই বর্তমানে পাকিস্তানের সেরা পেসারের নাম শাহীন শাহ আফ্রিদি। কিন্তু হাঁটুর ইনজুরি তাকে খেলতে দেয়নি এশিয়া কাপে। চিন্তা বিষয় হলো বিশ্বকাপের আগে কি ফিট হয়ে উঠতে পারবেন এই পেসার?

শাদাব খান আর মোহাম্মদ নওয়াজের দারুণ ফর্মের সুবাদে অলরাউন্ডার নিয়ে কোনো চিন্তা নেই পাকিস্তানের। ফলে বোলিং লাইনআপে পাকিস্তানের মূল চিন্তাটা পেসারদের নিয়েই। আফ্রিদি ফিট থাকলে তার সাথে নাসিম শাহ এবং হারিস রউফ – এই ত্রয়ীই হতেন বল হাতে পাকিস্তানের স্বপ্নসারথী। কিন্তু আফ্রিদির ইনজুরি দলকে ফেলে দিয়েছে নানা প্রশ্নের মুখে। তিনি মিস করলে হয়তো দলে ঢুকবেন মোহাম্মদ হাসনাইন।

তরুণ এই পেসার এশিয়া খুব একটা খারাপ করেননি। কিংবা পাকিস্তান খেলাতে পারেন শাহনেওয়াজ দাহানিকেও। মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র সময়মতো ইনজুরি থেকে ফিরতে না পারায় হয়তো এ যাত্রায় আবারো বেঁচে যাবেন অভিজ্ঞ পেসার হাসান আলি। বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি টোয়েন্টি সিরিজের পারফরমেন্স দেখেই হয়তো বিশ্বকাপের একাদশ সাজাবেন পাকিস্তান কোচ এবং অধিনায়ক। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link