পরাজিত হতে হতে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না। টি-টোয়েন্টিতে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করা বাংলাদেশ দলের সামনেও তাই নতুন শুরুর বিকল্প ছিল না। আর এই নতুন শুরুর প্রথম ধাপ হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা করেছে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে। বলা যায়, বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে দলে।
অনেকদিন থেকেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে মাহমুদউল্লাহকে বিশ্রাম দেয়ার দাবি উঠেছিল। গুঞ্জন ছিল বিসিবিও তাই করবে। অবশেষে গুঞ্জনকে সত্যি করে জিম্বাবুয়ে সফরে টি-টোয়েন্টির জন্য নতুন অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়েছে। যদিও সাকিব আল হাসান এগিয়ে ছিলেন নেতৃত্ব দেয়ার এক্ষেত্রে, কিন্তু তিনি এই সফরে না থাকায় নুরুল হাসান সোহান বাংলাদেশের ৮ম টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হলেন।
তারুণ্য নির্ভর এই স্কোয়াডের অন্যতম আকর্ষণ পারভেজ হোসেন ইমন। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে জাতীয় দলের আশেপাশে ছিলেন এই ব্যাটার। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী ইমন ফাইনালে ইনজুরি নিয়েই ৭৯ বলে ৪৭ রানের একটি গুরুত্বপূর্ন ইনিংস খেলেছিলেন। মন জিতে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের সব ভক্ত-সমর্থকদের।
এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটেও দেখা যায় ইমনের ব্যাটের ঝলক। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি লিগে রাজশাহীর বিপক্ষে মাত্র ৪২ বলে সেঞ্চুরি করে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন পারভেজ ইমন। সেদিন যেকোনো বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রুততম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। এছাড়া বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও বেশ কয়টি আশা জাগানিয়া অর্ধশতকের দেখা মিলেছে এই হার্ড হিটারের কাছ থেকে। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও অনবদ্য পারফরম্যান্স করেছেন তিনি।
স্বাভাবিকভাবে কিছুটা হাই ব্যাকলিফট স্ট্যান্সে ব্যাট করেন ইমন। এছাড়া তাঁর ব্যাটের সুইংও বেশ চমৎকার। এই দুইয়ের মিশ্রণে পাওয়ার হিটে বাড়তি সুবিধা পান পারভেজ ইমন। তবে এর মানে এমন না যে তিনি সবসময় আক্রমনাত্মক ক্রিকেট খেলেন। ম্যাচ রিড করতে পারা, বলের লাইন বুঝে খেলা ইত্যাদি সক্ষমতাও আছে তাঁর, অনূর্ধ্ব-১৯ ফাইনালেই সেই প্রমাণ দিয়েছেন তিনি।
তবে নিজের কাছে পাওয়ার হিটিং সবচেয়ে প্রিয়, আক্রমণাত্বক ব্যাটিং তার মূল শক্তি বলেই জানিয়েছেন পারভেজ ইমন। সবমিলিয়ে যে তারুণ্য নির্ভর টি-টোয়েন্টি দল তৈরি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেখানে ইমনকে কমপ্লিট প্যাকেজ বলাই যায়।
এর আগে ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলে ডাক পেয়েছিলেন পারভেজ ইমন। কিন্তু অভিষেকের জোরালো সম্ভাবনা থাকলেও সেবার মাঠে নামার সুযোগ পাননি এই প্রতিভাবান ক্রিকেটার। এবার আরো একবার তাঁর সামনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পা রাখার সুযোগ এসেছে। যুব দলের সতীর্থ শামীম হোসেনের মতই জিম্বাবুয়েতে হয়তো নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন এই বামহাতি ব্যাটার।
পারভেজ হোসেন ইমন ছাড়াও টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন তরুণ ফাস্ট বোলার হাসান মাহমুদ। লম্বা বিরতি কাটিয়ে জাতীয় দলের ড্রেসিং রুমে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ইনজুরি আর রিহ্যাব প্রক্রিয়ায় ক্যারিয়ারের বড় একটা সময় কাটিয়ে দিয়েছেন এই পেসার। অবশেষে সব বাধা পেরিয়ে টি-টোয়েন্টির পাশাপাশি ওয়ানডে দলেও ফিরছেন তিনি। এবার সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেই বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে আরেক পেস সেনসেশন।
অভিজ্ঞ মেহেদী হাসান মিরাজের নামও আছে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে। অন্য দুই ফরম্যাটে অপ্রতিরোধ্য মিরাজ অবশ্য অনেক আগেই বাদ পড়েছিলেন ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণ থেকে। তাঁর জায়গা দখল করে নিয়েছিল শেখ মাহেদী। এবারও শেখ মাহেদী দলে আছেন, তবে সাকিব, মুশফিকের অবর্তমানে অভিজ্ঞতার বিচারে দলে জায়গা করে নিয়েছেন এই অফ স্পিনার।
নতুন অধিনায়ক, তারুণ্যের শক্তিতে ভরপুর স্কোয়াড; বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের আপাতত খুশি না হওয়ার কোন কারন নেই। আর এই খুশি দীর্ঘস্থায়ী করার দায়িত্ব নুরুল হাসান সোহান আর তাঁর দলের প্রত্যেকের। মাঠে পারফর্ম করে নিজেদের একাদশে জায়গা পাওয়ার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে তাদের।
টি-টোয়েন্টিতে নতুন শুরু নিশ্চিতভাবেই আশা দেখাচ্ছে বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকদের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এখন থেকে এই ফরম্যাটে ভয়-ডরহীন ব্র্যান্ড ক্রিকেটটা খেলা শুরু করবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা, এমনটাই প্রত্যাশা।