কামিন্স তাণ্ডব, কামিন্স বিস্ময়

৫৬ রান, ১৫ বল! ৬ ছক্কা, ৪ চার! স্ট্রাইক রেট ৩৭৪ প্রায়! না, এই ইনিংসটি ক্রিস গেইল, জশ বাটলার কিংবা কাইরেন পোলার্ডের নয়। এই বিধ্বংসী ইনিংসটা খেলেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) অলরাউন্ডার প্যাট কামিন্স! এক বাক্যে বলতে গেলে অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় আর অতিমানবীয় এক ইনিংস। ম্যাচ শেষে এই ইনিংস সম্পর্কে কামিন্স নিজেই বলেন, ‘আমি নিজেও এটা বিশ্বাস করতে পারছিনা।’

রাত বাড়লেও পুনেতে তখন তীব্র গরম। ভারতে গরমের পূর্বের রেকর্ডটাও ছাড়িয়েছে দিন কয়েক আগেই। এই গরমের মাঝেই হঠাৎই পুনেতে বয়ে গেল ১৫ মিনিটের এক ঝড়! নাহ আকাশ থেকে অঢেল পানি বর্ষণ হয়নি। কিন্তু পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্যাট কামিন্সের ব্যাটিং ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। গরমের তীব্রতাও যেন ফিঁকে হয়ে পড়েছিল কামিন্স ঝড়ের সামনে।

বল হাতে মাত্র এক রানের জন্য ফিফটি হয়নি! ৪ ওভারে ৪৯ রানে ২ উইকেট শিকারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল পেইজ গুলোতে ততক্ষণে হাসির পাত্র কামিন্স। তবে পরক্ষণেই দেখা গেল কামিন্স মুদ্রার আরেক পিঠ। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে নেমে রেকর্ডগড়া ফিফটিতে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন কামিন্স! ঘন্টা দুয়েকের ব্যবধানে শূন্য থেকে বনে গেলেন ম্যাচের নায়ক! বল হাতে হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছেন খাদের কিনারা থেকে।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই অলরাউন্ডার। ম্যাচে যখন ব্যাকফুটে দল, ঠিক তখনই ব্যাট হাঁতে ত্রাতা হয়ে আসেন কামিন্স। মুম্বাইয়ের বোলারদের উপর চালালেন তাণ্ডব! আর এই তাণ্ডবের অধিকাংশ ছিল নিজ দেশের সতীর্থ ক্রিকেটার ড্যানিয়েল স্যামসের উপর।

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনজুরি থেকে ফেরা সুরিয়াকুমার যাদবের ৩৬ বলে ৫২ রানে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৬১ রান সংগ্রহ করে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। জবাবে লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ১০১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে তখন কলকাতা। শেষ ৩৮ বলে দরকার ছিল ৫৭ রানের। একপ্রান্তে ধীরগতিতে এগোচ্ছিলেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার। ভেঙ্কটেশ তখন ৪০ বলে ৪৯ রানে অপরাজিত। আরেকপ্রান্তে নতুন ব্যাটার হিসেবে ছিলেন কামিন্স। এরপরই শুরু হয় কামিন্সে তাণ্ডব।

১৪ তম ওভারের শেষ দুই বলে টাইমল মিলসকে ছক্কা ও চার দিয়ে শুরু। পরের ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহর দুই বলে আবারও ছক্কা ও চার মেরে দলকে জয়ের ভিত গড়ে দেন কামিন্স। ১৫ ওভার শেষে কামিন্সের তখন ৮ বলে ২২ রান। শেষ ৫ ওভারে দরকার মাত্র ৩৫ রানের। সেই ৩৫ রান তুলতে খুব বেশি বল নষ্ট করেননি কামিন্স! এরপর ১৬ তম ওভারে অজি অলরাউন্ডার ড্যানিয়েল স্যামসের উপর চড়াও হয়ে চার ছক্কা, দুই চার ও নো বল থেকে আদায় করেন মোট ৩৫ রান!

স্যামসের এক ওভারে ৩৫ রান নেওয়ার মধ্যে দিয়ে মাত্র ১৪ বলেই পঞ্চাশ রান পূর্ণ করেন কামিন্স! আইপিএল ইতিহাসের দ্রুততম ফিফটিতে লোকেশ রাহুলের সাথে যৌথভাবে শীর্ষে অবস্থান করছেন কামিন্স। ২০১৮ সালে মোহালিতে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ১৪ বলে ফিফটি করে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন রাহুল।

এক ওভারে ৩৫ রান নেওয়ার মধ্যে দিয়ে এক লজ্জার রেকর্ডে স্যামসের নাম তুলে দিয়েছেন কামিন্স! আইপিএল ইতিহাসে এক ওভারে সবচেয়ে বেশি রান খরুচে বোলারের তালিকায় এখন দুইয়ে অবস্থান করছেন স্যামস। ২০১১ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে প্রশান্ত পরমেশ্বরন এক ওভারে দিয়েছিলেন ৩৭ রান। এরপর গেল আসরে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে এক ওভারে ৩৭ রান দেন হার্শাল প্যাটেল। গেল ম্যাচে কলকাতার বিপক্ষে ওভারে ৩৫ রান দিয়ে সেই তালিকার দুইয়ে নাম তুললেন মুম্বাইয়ের পেসার ড্যানিয়েল স্যামস।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সাথে কামিন্সের পুরনো কোনো শত্রুতা আছে কিনা তা অবশ্য জানা নেই! কারণ মুম্বাইর বিপক্ষে খেলতে নামলেই ব্যাট হাতে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন কামিন্স। মুম্বাইয়ে পেলেই ব্যাট হাতে দেখা মিলে এক আগ্রাসী কামিন্সের। এর উত্তর হয়ত স্রেফ কামিন্সই জানেন। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে এই তাণ্ডবময় ইনিংসের আগে সবশেষ দুই দেখায় এক ম্যাচে ৩৬ বলে ৫৩ ও আরেক ম্যাচে করেন ১২ বলে ৩৩ রান!

২০২০ আইপিএলে ১৫.৫০ কোটি রুপিতে কামিন্সকে দলে ভেড়ায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। এ নিয়ে অবশ্য আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। সাদামাটা পারফরম্যান্সের পর সমালোচনার মাত্রাটাও বেড়ে দাঁড়িয়েছিল কয়েকগুন। গেল আসরেও নিজের সেরাটা দিতে পারেননি তিনি। চলতি বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ থাকায় প্রথম দুই ম্যাচে দলে ছিলেন না কামিন্স। এরপর এবারের আসরে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে বল হাতে রান খরুচে হওয়ায় আবারও সমালোচনার কেন্দ্রে তিনি!

কিন্তু এক ইনিংসের ব্যবধানেই পালটে গেল সবকিছু। এবারের আসরে নিজের প্রথম ম্যাচেই হলেন ম্যাচ সেরা। সমালোচনা, ট্রল রূপ নিল প্রশংসার বাণীতে। কামিন্স ঝড়ে বিধ্বস্থ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। কামিন্সের ব্যাট নামক তরবারির ধারে কাঁটা পড়েন বুমরাহ-সামসরা। একই ম্যাচে মুদ্রার উভয় পাশটাই দেখলেন কামিন্স। ব্যাট হাতে কামিন্সের এই ঝড় যেন কলকাতার জার্সি গায়ে প্রতিপক্ষের জন্য নতুন কোনো ইঙ্গিত!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link