আশাহীন-পরিকল্পনাহীন এক লড়াই

একটা ফাঁকা বুলি। একটা ফাঁপা আওয়াজ। সব কিছু ঠিক আগের মতই। পরিবর্তনের হাজারটা আশ্বাস দিয়েও দেখা মেলে না কোন কিছুর। দলের মধ্যে বিপুল পরিবর্তনের কথা বলেও ফলাফলে যেন নেই কোন ধরণের পরিবর্তন। দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা ইম্প্যাক্ট বিবেচনায় পড়েছেন বাদ। তবুও দলে থাকা খেলোয়াড়দের ইম্প্যাক্টটা ঠিক কতটুকু সে প্রশ্ন যেন আরও একবার উদিত হল নতুন করে।

বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সেরে নিতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল বর্তমানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। স্বাগতিক দেশের সাথে দুই ম্যাচের প্রস্তুতি  সিরিজের আয়োজনও হয়েছে। প্রথম ম্যাচেই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থাটা আরও একবার চোখের সামনে চলে এলো। বড্ড বেশি কুৎসিত! এই দৃশ্য তো হরহামেশাই দেখা যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে। তবে প্রতিপক্ষ থাকে তো ভিন্ন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বের বড় দলগুলোর বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খাবি খায়, সেটা আর নতুন নয়। তবে আরব আমিরাতের মত একটা খর্বশক্তির দলের সাথেও টাইগারদের টপ অর্ডার আবার ব্যর্থ। শুধু টপ অর্ডার নয়, ব্যর্থতার ডালপালা মেলেছিল মিডল অর্ডার অবধি। পরিবর্তনের প্রথমটা তো সেই এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচ থেকেই ওপেনিংয়ে।

মেকশিফট ওপেনার জুটি, মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমান রুম্মানের উপর এদিনও ভরসা করেছিল টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে আশান্বরুপ ফল তো দূরে থাক, ইম্প্যাক্ট যেন সোনার হরিণ। ১১ রানের মাথায় প্যাভিলনে শূন্য রান করা সাব্বির। ধসের সমূহ সম্ভাবনা। আশার প্রদীপ যেন লিটন দাস। তবে তিনিও হলেন ব্যর্থ। ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে তিনি ১৬০ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করবার চেষ্টা করেছেন। তবে সেটা লম্বা করতে পারেননি।

আফিফ হোসেন ছাড়া আর তেমন কেউ যেন দাঁড়াতেও পারেনি বাইশ গজে। ইয়াসির আলী চৌধুরির উপর বেশ একটা প্রত্যাশাই যেন ছিল দলের। তবে সে প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে পারেননি ইয়াসির। দৃষ্টিকটু এক আউটের মঞ্চায়ন করে তিনি হেটে পারি দিয়েছেন সাজঘরের পথ। মোসাদ্দেকও কেমন একটা ফিকে ছিলেন। শেষের দিকে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের খানিক প্রতিরোধে কোন রকম একটা সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। তবে সেটা নিশ্চয়ই স্বস্তি দেবে না ড্রেসিং রুমে।

এখানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষটা মুখ্য বিষয়। সামনেই ত্রি-দেশীয় সিরিজ এরপর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানে বাংলাদেশকে লড়াই করতে হবে বিশ্বের বাঘা-বাঘা সব দলগুলোর বিরুদ্ধে। টাইগার ব্যাটারদের সামলাতে হবে তুখোড় সব বোলারদের। অথচ এর আগেই বাংলাদেশের ব্যাটিং যেন উন্মুক্ত এক গড়ের মাঠ। আবারও খোলা দ্বার নিয়েই হাজির বাংলাদেশের ব্যাটিং দূর্গ। বাংলাদেশের এই দশা নতুন নয়। পরিবর্তন কেবলই এক মরীচিকা।

আবারও প্রমাণ হল যে স্বল্প মেয়াদে করা কোন পরিকল্পনায় অন্তত ফলাফল প্রত্যাশা করা বড্ড বেশি বোকামি। এমন অস্বস্তি জাগানিয়া ব্যাটিং প্রদর্শন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে স্রেফ জ্বালাপোড়াই বাড়াবে। হাজারটা পরিকল্পনাও হয়ত কোন কাজে আসবে না। কেননা বাংলাদেশি ব্যাটারদের নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাসের রয়েছে বড্ড ঘাটতি। আর সেটাই তাদেরকে পিছিয়ে দিচ্ছে লড়াই থেকে। টাইগার ব্যাটাররা নিজেদের এই কুশ্রী ব্যাটিং আর কতকাল চালিয়ে যাবেন তা হয়ত কারওই জানা নেই।

তবে আর যাই হোক একটা বিষয় স্পষ্ট। বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপটাও অতিবাহিত হতে চলেছে একেবারে সাদামাটা ভাবে। স্বল্প মেয়াদের এই হুটহাট পরিবর্তন আর পরিকল্পনা থেকে বেড়িয়ে এসে দীর্ঘমেয়াদে প্রসারিত করতে হবে চিন্তাভাবনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link