এক মুহূর্তের জন্য চমকে ওঠার জোগাড়! অবসর ভেঙে কি তবে লাসিথ মালিঙ্গা আবারো ক্রিকেটে ফিরলেন? বোলিং অ্যাকশন, ইয়র্কার দেওয়ার সহজাত সক্ষমতা— সব কিছু মিলিয়ে যেন সেই স্লিঙ্গা মালিঙ্গার অবিকল ছায়া। কিন্তু না। এই স্লিঙ্গা মালিঙ্গার তো ঝাঁকড়া চুল নেই। অবশেষে ভাবনার ভুবনে ধন্দে পড়ে যাওয়া মনকে শান্ত করা গেল। এই মালিঙ্গা, সেই মালিঙ্গা নয়।
তবে শহরে এক নতুন মালিঙ্গার আবির্ভাব ঘটেছে। মালিঙ্গার দেশ থেকেই উঠে এসেছেন সে পেসার। মজার ব্যাপার হলো, লঙ্কানদের একটি মাত্র টি-টোয়েন্টি খেলা এ পেসার লাইমলাইটে আসলেন ভিনদেশের একটি ক্লাবের হয়ে আলো ছড়িয়ে। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল মাতানো, ‘মালিঙ্গা’ নামক নস্টালজিয়াকে আবারো সামনে আনা সেই পেসারের নাম মাথিশা পাথিরানা।
লাসিথ মালিঙ্গার মতোই গতি, মালিঙ্গার মতোই ইয়র্কার দেওয়ার ক্ষমতা। একই সাথে স্লগ ওভারে গিয়ে ম্যাচের চিত্র বদলে দেওয়ার দারুণ দক্ষতা। ২০ বছর বয়সী এ পেসার যেন তাঁর বয়সের চেয়েও পরিণত এক বোলার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আঙিনায় একটি মাত্র ম্যাচেই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা সুযোগ পেয়েছেন। অথচ ভিনদেশের অসম চাপময় একটি টুর্নামেন্টে নিজের বোলিং আগ্রাসন দেখাচ্ছেন প্রায় প্রতি ম্যাচেই।
সময়ের প্রবহমান ধারায় যেখানে সিংহভাগ ক্রিকেটাররাই আইপিএল স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকেন, সেখানে পাথিরানার কাছে তা ধরা দিয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার আগেই। অথচ সকল চাপকে জয় করে আইপিএল মঞ্চে লঙ্কানদের প্রতীকী সিংহরূপেই যেন প্রতি ম্যাচে পারফর্ম করছেন।
পাথিরানায় অভিভূত হয়ে চেন্নাইয়ের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি তো বলেই দিয়েছেন, ‘পাথিরানাই শ্রীলঙ্কার ভবিষ্যৎ।’ স্বয়ং মালিঙ্গাও পাথিরানাকে নিয়ে টুইটারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। জানিয়েছেন, দারুণ উন্নতি, বোলিংয়ে দারুণ নিয়ন্ত্রণ। এমনটাই চলতে থাকুক, পাথিরানা।
চেন্নাইয়ের হয়ে ৯ ম্যাচে ১২ উইকেট। ইকোনমি ৭.৬১। আহামরি কিছু নয়। তারপরও তাঁকে নিয়ে কেন এত হইচই? হ্যাঁ। মালিঙ্গার বোলিং অ্যাকশনের মতো বল করেন বলেই আলোচনায় এসেছেন দ্রুত। এটা ঠিক। তবে স্লগ ওভারে তাঁর পূর্বসূরি মালিঙ্গার মতোই যে মিতব্যয়ী ও কার্যকরী বল করেন, তাতে তো কোনো মিথ্যা নেই। একই ভাবে, মালিঙ্গার মতোই ইয়র্কার দিয়ে স্ট্যাম্প ছত্রখান করে দিচ্ছেন, সেটিও তো নির্জলা এক সত্য। আর এই মারকাটারি টি-টোয়েন্টির যুগে ৭.৬১ ইকোনমি রেটকেই বা খারাপদের কাতারে ফেলে দেওয়া যায় কিভাবে!
তবে এ সব ছাপিয়ে পাথিরানা মূলত নজরে এসেছেন চেন্নাইয়ের হয়ে ১৭-২০ ওভারের মাঝে বোলিং করে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বে। একটু যুক্ত করে, স্লগ ওভার স্পেশালিস্ট তকমা দিলেও বোধহয় ভুল হয় না। মাত্র ৯ টা আইপিএল ম্যাচ দিয়ে না হয় সে স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিকতা না দেওয়া যাক।
তবে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে তাঁর বোলিং নিয়ে আলাদা করে কথা বলতেই হয়। ইনিংসের ১৩, ১৫, ১৮ ও ২০ নম্বর ওভারে বলে এসেছিলেন। অর্থাৎ যে সময়ে একটা দল বোলারদের উপরে চড়াও হতে পারে, সেই সম্ভাব্য ক্রান্তিলগ্নেই ধোনি বল হাতে তুলে দিয়েছিলেন পাথিরানাকে।
পাথিরানা ধোনিকে হতাশ করেননি। কাপ্তানের আস্থার প্রতিদান দিয়ে ঐ ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে এ লঙ্কান পেসার তুলে নেন ৩ টি উইকেট। এর মধ্যে মুম্বাইয়ের ইনিংসে একমাত্র ফিফটি করা নেহাল ওয়াধেরাকে ফিরিয়েছিলেন দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে। একদম সেই স্লিঙ্গা মালিঙ্গার মতো। যে মালিঙ্গা বেশ ক’বারই চেন্নাইয়ের শিরোপা হয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
মাথিশা পাথিরানার অ্যাকশন নাহয় মালিঙ্গার মতো। ইয়র্কার নামক অস্ত্রের সাথেও তাঁর যোগসূত্র আছে। কিন্তু মালিঙ্গার মতো গতি কি তাঁর বোলিংয়ের আছে? মাথিশ পাথিরানা সম্ভবত এখানেই ছাপিয়ে গিয়েছেন মালিঙ্গাকেও। এমনিতে ১৪০ কিলোমিটারের আশেপাশেই বল করেন তিনি।
তবে কিছু কিছু ডেলিভারি ছাড়িয়েছে ১৪৫ কিলোমিটার গতিকেও। এই আইপিএলেই ১৪৫ এর বেশি গতিতে বল করেছেন বেশ ক’বার। ছুঁয়েছেন ১৫০ কিলোমিটার গতিও। বুঝাই যাচ্ছে, পেস বোলারদের যে সব রসদ থাকা প্রয়োজন, তার সবকিছুই একটা প্যাকেজ বন্দী করে বাইশ গজে বিচরণ করতে এসেছেন পাথিরানা।
পাথিরানাকে লঙ্কানদের ভবিষ্যৎ মনে করা ধোনি তাঁকে একটা সতর্ক বাণীও দিয়েছেন। লাল বলের ক্রিকেটকে এখনই ‘হ্যাঁ’ বলতে নিষেধ করেছেন। ভারতকে প্রায় ‘সব জেতানো’ ধোনিকে এখন জহুরির চোখ বললেও ভুল হয় না। এখন দেখার পালা, ধোনির এই নিষেধ মেনে পাথিরানা ঠিক কতদূর যেতে পারেন কিংবা শ্রীলঙ্কা ঠিক তাঁকে কতটা চলতে দেয়। তবে, অমিত প্রতিভাধর এ পেসার যে লঙ্কান পেস আক্রমণে একটা ‘মালিঙ্গা’ শূন্যতা মেটাতে পারেন, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। শহরের নতুন মালিঙ্গাকে তাই স্বাগত।