একটা প্রশ্ন দিয়েই শুরু করা যাক। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে পল পগবা সফল নাকি ব্যর্থ? আচ্ছা, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকুন। এটা নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে গেছেন যে এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়তে চলেছেন পল পগবা। ফ্রি এজেন্ট হিসেবেই তিনি বেড়িয়ে পড়বেন নতুন কোন ক্লাবের সন্ধানে।
এমনটাও গুঞ্জন রয়েছে যে তিনি নাকি আবার ফিরে যাবেন ইতালির তুরিনে। নিজের সাবেক ক্লাব জুভেন্টাসে। তুরিনের ক্লাবটির হয়েই তো তিনি বনে গিয়েছিলেন তারকা। সেখানটায় থাকাকালীন সময়েই তো তিনি হয়েছেন বহু মানুষের আদর্শ। তাইতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তার ফলোয়ারের সংখ্যা যেকোন পপ সঙ্গীত শিল্পীর থেকেও ঢের বেশি।
সেসবের পরই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নিজেদের হারানো প্রতিভাকে আবার দলে নিয়ে আসে ২০১৬-১৭ মৌসুমের দিকে। বহু সম্ভাবনা আর আশার সঞ্চার ঘটিয়ে তিনি এসেছিলেন ওল্ড ট্রাফোর্ডে। তবে তিনি কি আদৌ সে প্রত্যাশার সবটুকু উজাড় করে দিতে পেরেছেন। মনে হয় না তিনি পেরেছেন। তবে আরও একটা প্রশ্ন এই জায়গায় অনায়াসে চলে আসতে পারে।
ক্লাব কি তাকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখতে পেরেছে? ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অবস্থা বিগত বেশ কিছু মৌসুম থেকেই বেশ বেগতিক। অথচ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। রেড ডেভিলদের হয়ে একবার কারাবো কাপ ও একবার উয়েফা ইউরোপা লিগ শিরোপা ছাড়া পগবার অর্জনের খাতা একেবারেই শূন্য। এখানে ক্লাবে যেমন দোষ রয়েছে, তেমন খেলোয়াড়ের অফফর্ম কিংবা অনীহাও দায়ী হতে পারে।
পগবা কি দুর্দান্ত খেলোয়াড় তা নিশ্চয়ই বলে দেওয়ার নয়। বিশ্বকাপ জয়ী একজন মিডফিল্ডার নিশ্চয়ই দলের মাঝে বাড়তি একটা অভিজ্ঞতার সঞ্চার ঘটায়। সবচেয়ে মর্যাদার একটা শিরোপা জয়ের অভিজ্ঞতা থাকে তার। তিনি জানেন ও বোঝেন কি করে সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরও বেশি শিরোপা জেতা যায়। তবে পগবা লাল জার্সিটায় সে কাজটা করে দেখাতে পারেনি।
অন্যদিকে, ক্লাবে প্রতিভাবান খেলোয়াড় ছিল, অভিজ্ঞ কোচেরাও ছিলেন ক্লাবের সাথে। তবুও যেন ক্লাবের বাকি খেলোয়াড়গুলো ছিল একেবারেই ছন্নছাড়া। আর পগবা যেন ছিলেন দলছুট। ২০১৮ সালে তার করা দুই গোলে বিলম্বিত হয় ম্যানচেস্টার সিটির শিরোপা উদযাপন। সেই এক মুহূর্ত ছাড়া আর তেমন কিছু বলার মত নেই পগবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্যারিয়ারে।
তবে এরপর যেন ক্লাবে প্রতি অনীহার একটা আভাস দিতে শুরু করেন। একটা গুঞ্জনের শুরু হয়েছিল তিনি নাকি চলে যাবেন ম্যানচেস্টারের আরেক পার্শ্বে। ম্যানচেস্টার সিটির জার্সি গায়ে জড়ানোর সেই গুঞ্জন যেন তীব্র হয়েছিল। মোটামুটি নির্ধারিত ছিল যে তিনি চলেই যাবেন সিটিতে। আর ক্লাবও যেন খুব করেই চাইছিল তিনি চলে যান। ক্লাবের সাথে দূরত্ব বেড়ে গেলে আর ক্লাবটাকে নিজের মধ্যে ধারণ করা যায় না।
তাইতো তার সাথে নতুন করে কোন চুক্তি নবায়ন না করে, ক্লাব তার মূল্য ধার্য করে দেয় ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ড। নেহায়েৎ অমূলক হলেও এটা নিশ্চিত ক্লাবের খানিকটা লাভ হত। ৮৯ মিলিয়ন পাউন্ডে তাঁকে জুভেন্টাস থেকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে নিয়ে আসা হয়েছিল। তবে তা আর হয়ে ওঠেনি মহামারীর বাঁধায়। আরও দুই মৌসুম থেকে যান পগবা।
ফলাফলে নেই কোন তারতম্য। এমন কি ক্লাবকে উয়েফা কনফারেন্স লিগ ও ইউরোপা লিগের মাঝে ঝুলতে হচ্ছে। আর এমন অবস্থায় নতুন এক উদ্যমে শুরু করতে যায় ক্লাবটি। তাইতো আনা হয়েছে এরিক টেন হাগের মত এক অভিজ্ঞ এবং বুদ্ধিদীপ্ত কোচকে। আর তার আগমনেই ক্লাবের ভেতর বেশকিছু পরিবর্তন পরিলক্ষিত।
সে পরিবর্তনের আরও এক উদাহরণ পগবার প্রস্থান। পাঁচ মৌসুম শেষে কেবল ৩৯ গোল ও ৫১ খানা অ্যাসিস্টের সাথে অর্জন কেবল দুই শিরোপা। আর প্রস্থান একেবারেই অর্থশূন্য। এমন এক খেলোয়াড় সফল না ব্যর্থ তা তো মোটামুটি কাঁচের মত স্বচ্ছ। তবে নিশ্চয়ই পগবা ভক্তদের রয়েছে ভিন্ন মত।