Social Media

Light
Dark

পেলে-ম্যারাডোনা পারেননি, পেরেছেন মেসি

সৃষ্টিকর্তা নাকি একটি মানুষকে সবকিছু দিয়ে পরিপূর্ণ করেন না। সে কারণেই হয়তো বিশ্বকাপের মতো সবচেয়ে বড় দুটি আসরের ট্রফি জিতলেও কোপা আমেরিকা কাপের শিরোপা জিততে পারেননি ডিয়াগো ম্যারাডোনা ও পেলে। অনেকের কাছে এটি শোনার পর চোঁখ কপালে ওঠার মতোই অবস্থা হবে। ঘটনা আসলেই সত্যি।

তবে ম্যারাডোনার ক্ষেত্রে মনে হয় একটু বেশি আশ্চর্য্যজনক। কারণ কোপার শিরোপা তো আর্জেন্টিনা অনেকটাই নিজের করে নিয়েছিল। এবারের আগে ১৪ বার শিরোপা নিয়ে উল্লাস করার সুযোগ পেয়েছিল আকাশী-সাদা জার্সিধারীরা। সেখানে একবার ছিলেন না ম্যারাডোনা!

ব্রাজিল যদিও কিছুটা কম, অর্থাৎ নয়বার শিরোপা জিতেছে, সেখানেও নেই পেলে। এবারের শিরোপা জিতে সেই একটি জায়গায় দুই সেরাকে পেছনে ফেলেছেন লিওনেল মেসি। প্রায় দেড় যুগের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে জিতলেন প্রথম কোন মেজর শিরোপা। যাতে অনেক নতুন ইতিহাস যেমন সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তেমনি ঘুচেছে অনেক অপূর্ণতাও। সবখানেই এখন মেসির জয়জয়কার।

যদিও শুরুটা করেছিলেন বর্তমানে মাঠে মেসির সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে যাকে ধরা হয় সেই ক্রিশ্চিয়ানা রোনালদো। ২০১৬ ইউরোর শিরোপা জিতে একটা বড় কাজই করেছিলেন সিআর সেভেন। পাঁচ বছর পর সেখানে নিজের নামটি ওঠালেন এলএম টেন। পাঁচ বছর আগে পর্তুগালকে ইউরোপ সেরার শিরোপা এনে দিয়ে নিজে যেমন ভারমুক্ত হয়েছেন, এবার সেখানে নাম উঠেছে মেসির।

বিশ্বকাপের না হোক মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বে তো নিজের নামটি ওঠাতে পেরেছেন। এতেই শান্তনা খুজে ফিরবেন রোনালদো-মেসি দুজনেই। ক্লাব ফুটবলে সারা বছর ব্যস্তÍ থেকে জাতীয় দলের জন্য নিজেকে পরিপূর্ণ মেলে ধরতে না পারার অভিযোগ মেসির বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে। এবার অন্তত:পক্ষে সেটি আর ওঠাবেন না নিদেনপক্ষে যারা চিরশত্রু হিসেবে তারাও। তবে ম্যারাডোনা-পেলে কোপার শিরোপা জিততে না পারার বিষয়টি অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছেনা।

মেসি যেমন পাচঁটি আসর খেলে প্রথমবার শিরোপা উঁচিয়ে ধরার সুযোগ পেয়েছেন, সেখানে পেলে একটি আর ম্যারাডোনা দুটি আসর কেলেও পারেননি। চলতি শতাব্দীর শুরুর দিকে সারা বিশ্বে জরিপ চালানো হয় সর্বকালের সেরা ফুটবলার নির্বাচনে। সেখানে ম্যারাডোনা-পেলে দুজনের নামই আসে। দুজনই বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার পাশাপাশি আরও কত শত কীর্তি যে গড়েছেন তার কোন হিসাব নেই।

এত এত অর্জনের পাশে কারোর নামেই নেই কোপার শিরোপা জেতার রেকর্ড। সেটি এবারের ফাইনালের আগে আরো একবার আলোচনায় চলে আসে। কারণ ব্রাজিলের মাটিতে খেলা বিধায় মেসির পক্ষে শিরোপা জেতা সম্ভব হবেনা বলে বেশিরভাগ মানুষের মত ছিল। তারাই ম্যারাডোনা, পেলে সাথে মেসির নামটি কোপা না জেতাদের মধ্যে রাখার সবকিছু চুড়ান্তও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু ফুটবল ঈশ্বর যে উপর থেকে সবকিছু চেয়ে চেয়ে দেখছিলেন। সবশেষ বিচার করলেন মেসির পক্ষে। আর চ্যাম্পিয়ন শিরোপা পাশ দিয়ে চোঁখে ছলছল জল নিয়ে হেঁটে যেতে হবেনা।

ম্যারাডোনা কিংবা পেলে কখনো কি কোপার শিরোপা জিততে না পারার হতাশার কথা কখনোই বলতে শোনা যায়নি। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের জার্সিতে প্রথমবার বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার পরের বছরই ১৯৫৯ সালে কোপায় খেলেছিলেন ফুটবলের রাজা হিসেবে পরিচিত পেলে। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে হ্যাট্টিকের পর চিলির বিপক্ষে জোড়া গোলে টুর্নামেন্টে ৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন ১৯ বছরের এই কিশোর।

টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হলেও সেবার ব্রাজিল কিন্তু শিরোপা জিততে পারেননি, জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এমন পারফরম্যান্সের পর পেলে কেন কোপায় আর খেলেননি সেই প্রশ্নটা এখণ আবার নতুন করে উঠছে। তবে যেটুকু জানা গেছে, বিশ্বকাপ নিয়ে ব্রাজিলের অতি আগ্রহের কারণে কোপা নিয়ে মাথাই নাকি ঘামাননি কর্মকর্তারা। সে কারণে পেলেও আর খেলা হয়নি।

১৯৫৯ সালে উদীয়মান কোটায় পেলে খেলেছিলেন সে সময় দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপে। প্রথমবারই বাজিমাত করেছিলেন। কোপায় খেললে তার ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ হতো। পেলে খেললে ব্রাজিলের ভাণ্ডারে যে আরও একাধিক শিরোপা জিততে পারত সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

পেলের মতো না হলেও ম্যারাডোনার দুটির বেশি আসরে না খেলার কাহিনীটা অনেকটা সেরকমই। ১৯৯৩ সালে যখন সর্বশেষ কোপার শিরোপা জেতে আলবি সেলেস্তারা তখন ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে ছিলেন ম্যারাডোনা। তার আগেই একটি বিশ্বকা প জিতে আর আরেকটিতে রানার্সআপ হয়ে অবিসংবাদিতর কাতারে পৌছে গিয়েছিলেন।

পাশাপাশি মাদক কেলেঙ্কারি তো ছিলই। ২৮ বছর আগে শিরোপা জেতা দলটি গড়তে কোচ আলফিও বাসিলে অফ ফর্মে থাকা ম্যারাডোনাকে ছাড়াই দল গড়েছিলেন। পেলের ঠিক ২০ বছর পর ১৯৭৯ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্রথ কোপায় খেলেছিলেন তিনি। তার আগে অনুর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে আসায় বেশি আগ্রহ ছিল। লোকে ম্যারাডোনাকে দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিল।

তাঁর পায়ে বল গেলে সবাই হা করে দেখত। দারুণ কিছু করলে দল হিসেবে খেলতে না পারায় সেবার শিরোপা জিততে পারেননি। এরপর ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জেতার পরের বছর কোপায় খেললেও ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে। সাফল্য না পাওয়ার কারণে পেলে-ম্যারাডোনাকে এক বিন্দুতে দাড় করিয়ে দিয়েছে কোপা আমেরিকা কাপ।

দুই কিংবদন্তীর সাথে সেই কাতারে মেসি যেন থাকতে থাকতে বেঁচে গেছেন। দেশের হয়ে ১৫ নাম্বার শিরোপাটি নিজের প্রথম করে রেখেছেন। ২০০৭ সালে ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হারের পর ২০১৯ সালে সেমিতে একই দলের বিপক্ষে পরাজয়ের শোধটা এক আসরেই নিয়ে ফেলল আর্জেন্টিনা। চির শত্রুর দেশ হিসেবে পরিচিত ব্রাজিল থেকে শিরোপা জিতিয়ে আনাটাকে বিশেষ মর্যাদাও দেয়া যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link