‘আমার নাম রোনাল্ড রিগ্যান এবং আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। আপনার পরিচয় দেওয়ার দরকার নাই। আপনাকে সবাই চেনে।’
একজন ফুটবলারকে এভাবেই পরিচয় করিয়ে দেন ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকার ৪০ তম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড উইলসন রিগ্যান।
বুঝতেই পারছেন, এই ফুটবলারের কোনো পরিচয় দরকার হয় না। তার নাম, তার চেহারাই ফুটবলের প্রতীক। তিনি সর্বকালের সেরা ফুটবলার, সারা বিশ্বে ফুটবলের প্রতিশব্দ, ফুটবল দিয়ে মর্তের বুকে জাদু নামিয়ে আনা ফুটবলার। হ্যা, এডসন ওরান্তেস ডো নাসিমেন্তে পেলে। এক শব্দে-পেলে। আমাদের কালো মানিক।
গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বলছে, তিনবারের ফুটবল বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলার এই পেলে। একজন পেশাদার ফুটবলার হয়েও ফুটবলের বাইরেও যেঠিক কতটুকু প্রভাব রেখেছিলেন পেলে তা হয়তো দুনিয়ার সবচেয়ে পরাক্রমশালী দেশের প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের এই পরিচয়পর্ব থেকে সামান্য স্পষ্ট হওয়া যেতে পারে। মিথ আছে যে,শুধুমাত্র পেলেকে এক নজরে দেখার জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ!
জন্মের সময় বাবা নাম রেখেছিলেন এডিসন। অনেকটা আলোর আবিস্কারক টমাস আলভা এডিসনের নামের সাথে মিল রেখেই। গায়ের বর্ণ ছিল একেবারেই কালো। কিন্তু সেদিন কয়জন ভেবেছিলো, এত মিশমিশে কালো ছেলে একদিন এতটাই আলো হবে?
ব্রাজিল সরকারের ন্যাশনাল প্রোপার্টি হওয়ায় ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে খেলতেই পারেন নাই। ষাটের দশকে পৃথিবীর অন্যতম সেরা ব্রাজিলীয়ান লিগে রেকর্ডের বন্যা বয়ে দিলেও তা পেলের ক্লাব ফুটবল নিয়ে যতটা আলোচনা হয় সম্ভবত তারচেয়ে বেশি আলোচনা হয় ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে। দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে পেলে এমনসব কীর্তি রেখে গেছেন, বিশ্বকাপের কথা আসলে প্রথমে পেলের নামটা অনায়াসেই চলে আসে।
পেলের বয়স যখন দশ বছর; মারাকানায় ট্রাজেডিতে লণ্ডভণ্ড ব্রাজিল। নিজের দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের খুব কাছে এসেও উরুগুয়ের শেষ মুহূর্তের গোলেই স্বপ্নভঙ্গ হয় ব্রাজিলের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বজয়। কোটি কোটি ব্রাজিলিয়ানদের মতো সেদিন হাউমাউ করে কেঁদেছিল পেলের বাবা; কেদেছিলেন ছোট্ট পেলেও। সেদিন সেই বাবাকে জড়িয়ে পেলে বলেছিলেন, ‘কেঁদো না! একদিন এই বিশ্বকাপটা তোমায় এনে দিব। আমার দেশকে এনে দিব।’
মাত্র সতের বছর বয়সে বাঘা বাঘা সব প্লেয়ারদের সাথে ব্রাজিলের স্কোয়াডে যখন ছেলে। পেলের বাবাও বিশ্বাস করতে পারেন নাই, এই বয়সে বিশ্বকাপ খেলবে পেলে। তিনি নিজেও হয়তো ধারণা করতে পারেন নাই, এই বয়সেই তিনি একটি জাতির প্রথম উদযাপনে কাঁদাবেন। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য সানের ইন্টারভিউতে পেলে বলেন, ‘সেদিন বাবা রেডিওতে দল ঘোষণার খবর শুনছিলেন। হঠাৎ তার কানে আসে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে আমার নাম। তিনি কিছুটা অবাক হলেন। কিছুক্ষণ বাদেই আমার সব প্রতিবেশীরা দলে দলে উল্লাস করে বাড়ি চলে আসেন। বাবার মত আমিও ভেবেছিলাম, হয়তো ভুল করেই নাম ঘোষিত হয়েছে।’
১৯৫৮-এর বিশ্বকাপে মাত্র সতের বছর বয়সেই সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে অভিষেক হয় পেলের। প্রথম ম্যাচেই গ্রুপপর্ব সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে ভাভার গোলে অ্যাসিস্ট করে বিশ্বকাপে গোল কন্ট্রিবিউশান যাত্রা শুরু করেন। কোয়ার্টার ফাইনালেই ওয়েলসের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে গোল করে ব্রাজিলকে সেমিফাইনালে তুলেন। সেমিফাইনালে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে হ্যাট্রিক করেন প্রায় একাই ব্রাজিলকে নিয়ে আসেন ফাইনালে।
২৯ জুন ১৯৫৮, সুইডেনের বিপক্ষে ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে ফাইনাল খেলেন পেলে। সেই ফাইনালেও বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে গোল করেন। ফাইনালে ভলিতে করা পেলের প্রথম গোলটি অনেকের মতে ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা গোল। নাসিমন্তো পেলের জোড়া গোলে সুইডেনকে ৫-২ গোলে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবার বিশ্বজয়ের আনন্দে মাতে সেলেসাওরা। সে ফাইনালে পেলে দ্বিতীয় গোল করার পর সুইডেনের সিগবার্ড পার্লিং বলেন, ‘পেলে যখন ফাইনালে পঞ্চম গোলটা করলো, সত্যি কথা বলতে আমারই তখন করতালি দিতে ইচ্ছা হচ্ছিল।’
বিশ্বকাপের ডেব্যু আসরে পেলে চার ম্যাচে পাঁচ গোল ও দুটি অ্যাসিস্ট করেন। দ্য রেকর্ড ব্রেকার জাঁ ফন্টেইন না থাকলে অভিষেক বিশ্বকাপে মাত্র চার ম্যাচ খেলেই হয়ে যেতে পারতেন বিশ্বকাপের টপস্কোরার। ৫৮’ বিশ্বকাপের সেমি ফাইনাল ও ফাইনালে পেলের গোল কন্ট্রিবিউশান ছিল ছয় গোল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এখনও যা সর্বোচ্চ। ডেব্যু বিশ্বকাপেই ইন্ডিভিচ্যুয়ালি জিতেন সিলভার বল এবং সিলভার বুট। বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সে বেস্ট ইয়ং প্লেয়ার এওয়ার্ডও জিতেন।
১৯৬২-এর বিশ্বকাপ পেলে ছিলেন সবার আগ্রহের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে। ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত ফর্ম নিয়ে চিলিতে বিশ্বকাপ খেলতে আসেন পেলে। গ্রুপপর্বে মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রথম গোলে এসিস্ট এবং চারজন ডিফেন্ডার ড্রিবল পাস্টে নিজেই গোল করে দুর্দান্ত ফর্মের জানানও দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, চেকোস্লাভিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে দূর পাল্লার শট নিতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েন। পরে দ্রুত রিকভার করতে না পারায় মাত্র এক ম্যাচ খেলেই টুর্নামেন্ট শেষ করেন। যদিও কোচ আইমোর মোরেইরা ম্যাচ লাইন আপে পেলেকে রাখতেন। টুর্নামেন্টে পেলের সাব হিসেবে নামা আমারিলদো নিজেও দুর্দান্ত খেলতে থাকেন। অবশেষে ড্রিবলের রাজা গ্যারিঞ্চার ম্যাজিকে টানা দ্বিতীয়বার মত বিশ্বকাপ জিতে ব্রাজিল। ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসাবে টানা দুবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ নেন পেলে।
১৯৬৬ বিশ্বকাপে আবারও ট্রাজেডির শিকার হন পেলে। এবারের ট্রাজিডিতে কেবল পেলে না; ব্রাজিল দলটাও ডুবে। গ্যারিঞ্চা, গিলমার, দালমা সান্তোস এবং সাথে নতুন জাইর্জিনহো, টোস্টাও এবং গারসনের মত তরুণ প্লেয়ারদের নিয়ে ওই সময়ের বিশ্বের অন্যতম সেরা দল নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে আসে ব্রাজিল। এই বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষের প্রত্যেকটি খেলোয়াড় বোধহয় একটিই মন্ত্রে উজ্জীবিত ছিল-পেলে ঠেকাও।
বুলগেরিয়া বিপক্ষে ফ্রি কিক থেকে গোল করেই ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম প্লেয়ার হিসেবে টানা ৩টি বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড গড়েন পেলে! কিন্তু এবারও বুলগেরিয়ান এক ডিফেন্ডারের মারাত্মক ট্যাকলে মাঠেই শুইয়ে পড়েন পেলে- মিস করেন হাঙ্গেরীর বিপক্ষে পরের ম্যাচ। পেলে ছাড়া ব্রাজিল হাঙ্গেরীর বিপক্ষে ম্যাচটি হেরে যায়। তাই গ্রুপপর্বে ব্রাজিলের পরবর্তী ম্যাচটি ছিল ডু অর ডাই ম্যাচ। প্রতিপক্ষ দ্যা গ্রেট ইউসেবিওর পর্তুগাল!
পেলে এই ম্যাচেও ইনজুরি নিয়েই খেলতে নামেন। কিন্তু, পর্তুগিজ খেলোয়াড়দের বাজে সব ট্যাকলে দিশেহারা হয়ে পড়ে ব্রাজিল। ইংলিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্দিয়ানও এই ম্যাচটিকে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য ম্যাচ গুলোর একটি উল্লেখ করেন। পুরো ম্যাচেই পর্তুগিজ প্লেয়াররা ব্রাজিলিয়ান প্লেয়ারদের উপর মারাত্মক সব রাফ ট্যাকল করতে থাকে।
ম্যাচের এক পর্যায় পর্তুগিজ ডিফেন্ডার জোয়াও মরিস ফাউল করে বসেন পেলেকে যা রেফারীর চোখ এড়িয়ে যায়। বলা হয়ে থাকে, এটিই ছিল ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসে মূল রেফারীর অন্যতম বাজে ভুলগুলোর একটি। যেহেতু এই সময়ে সাব করার কোন সুযোগও ছিল না; ফলে রেফারীর ভুলের কারণে বাকী ম্যাচটুকু ভাঙ্গা পা’য়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে খেলতে হয় পেলেকে। পর্তুগালের বিপক্ষে হেরে গ্রুপপর্বে থেকেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিদায় নিতে হয় ব্রাজিলকে। সেরা ফর্ম ও টুর্নামেন্টের মোস্ট ফেভারিট টিম হয়েও গ্রুপপর্ব থেকে এভাবে বিদায় মেনে নিতে পারেননি পেলে। এই ম্যাচটি পেলেকে এতটা যন্ত্রণা দিয়েছিল অভিমানে করে খেলাও ছেড়ে দেন!
১৯৭০-এর বিশ্বকাপে পেলেকে আবার ডাকা হয়। ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের আহবান শুরুতেই প্রত্যাখ্যান করেন পেলে। ১৯৬৯ সালে বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং ম্যাচে ব্রাজিল দলে ব্যাক করেন। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ছয় ম্যাচে ৬ গোল করে নিজের ফুরিয়ে না যাওয়ার জানান দেন। মেক্সিকো বিশ্বকাপ খেলতে যান পেলে নতুন সতীর্থদের নিয়ে। কারণ আগের তিনবারের দুবার চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ গ্যারিঞ্চা, ভালদির পেরেইরা, নিলটন সান্তোস, গিলমার, দিলমার সান্তোসের মত প্লেয়াররে ইতিমধ্যে অবসরে চলে যান।
নতুন সতীর্থ রিভলিনো, কার্লোস আলবার্তো তোরেস, ক্লোডোয়ালডো এবং ৬৬’ বিশ্বকাপের টোস্টাও,গারসান, জার্জিনহোদের নিয়ে গড়ে তুলেন নয়া এক অপ্রতিরোধ্য ব্রাজিল। হ্যা, যাদের বলা হয়ে থাকে ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরা দল।এবার এই বিশ্বকাপে পেলে মূলত প্লেমেকিং রোলল প্লে করে। এই বিশ্বকাপে ব্রাজিলিয়ান কোচ মারিও জাগালো ইতিহাসে প্রথমবারে একইসাথে পাঁচজন ফরোয়ার্ড খেলানোর মত যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই চেকোস্লাভিয়ার বিপক্ষে গোল করে ইতিহাসে প্রথম ফুটবলার হিসেবে টানা ৪টিই বিশ্বকাপে গোল করার অনন্য রেকর্ড গড়েন কিং পেলে।
১৯৭০-এর বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল এবং জোড়া অ্যাসিস্ট করেই ব্রাজিলের হ্যাট্রিক বিশ্বকাপ জয় নিশ্চিত করেন এবং চিরতরে জুলরিমে ট্রফি নিজেদের করে নেন। মাত্র দশ বছর বয়সেই বাবাকে বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পেলে তা কতটুকুই পূরণ করতে পেরেছিলেন তার কোচ মারিও জাগালোর কথা থেকেই হয়তো বুঝতে পারবেন- ‘A kid in Sweden [1958 World Cup] gave signs of genius, and in Mexico [1970 World Cup] he fulfilled all that promise and closed the book with a golden key. And I had the privilege to see it all from close up.’
পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে চার গোল এবং সাতটি এসিস্ট করে টুর্নামেন্টের সেরা প্লেয়ার নির্বাচিত হোন। ফিফা বিশ্বকাপ ইতিহাসে পেলে ছাড়া কেবল স্বদেশী রোনালদো লিমাই ভিন্ন ভিন্ন দুইটি আসরে দলের সেরা গোলদাতা ও সেরা প্লেয়ার হয়েছেন। এই বিশ্বকাপে পেলের একাই সাতটি এসিস্ট যে কোন বিশ্বকাপ আসরেই সর্বোচ্চ এসিস্টের রেকর্ড। ১৯৫৮’ বিশ্বকাপ ফাইনালে একটি এবং ১৯৭০’ এর বিশ্বকাপ ফাইনালে দুইটি মোট তিনটি এসিস্ট করে বিশ্বকাপ ফাইনাল ইতিহাসে সর্বোচ্চ এসিস্টের মালিক পেলে।
ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে প্রথম গোলটি ছিল বিশ্বকাপ ফাইনালে পেলের তিন নম্বর গোল। বিশ্বকাপ ফাইনাল ইতিহাসে কেবল ভাভা, জিওফ হার্স্ট এবং ফ্রান্সের জিনেদিন জিদানই পেলের সমান গোল করতে পেরেছেন। বিশ্বকাপে পেলের এসিস্টসংখ্যা ১০টি; যা ফুটবল বিশ্বকাপে যেকোন প্লেয়ারের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্বকাপে পেলের কন্সিটেন্সি বুঝতে আপনাকে একটি তথ্য জেনে রাখতে হবে।
হ্যা, প্রায় এক যুগের ব্যবধানে বিশ্বকাপের ভিন্ন দুইটি টুর্নামেন্টের অলস্টার একাদশে জায়গা পাওয়া একমাত্র ফুটবলার পেলে। ১৯৫৮ সালের অভিষেক বিশ্বকাপের অলস্টার একাদশে যেমন ছিলেন পেলে; ৭০’এর ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপের অল স্টার একাদশেও ছিল পেলের নাম।
বিশ্বকাপে পেলে মহান খেলোয়াড়; তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তিও।কিন্তু পেলের মাহাত্ম্য যে তার চেয়েও বেশি কিছু। একটা সময় ছিল ফুটবলে কালো চামড়া মানুষরা ছিলেন খুবই অবহেলিত। এই প্রজন্মেরই বালোতেল্লি, ম্যালকম, সাদিও মানেরা যে পরিমাণ বর্ণবাদের শিকার হয় ষাটের দশকের আগে তা ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে।
পেলে ছিলেন সেই সময়ের একটি বিদ্রোহ ; যিনি বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন এক অমীয় সত্য বাণী – গায়ের রং কখনও কাউকে ছোট করে না, কেড়ে নিতে পারেনা কারো প্রতিভা। ফুটবল বিশ্বকাপে যখন পুরোটা দুনিয়া মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলেন এক কালোমানিকের আধিপত্য; তখন সেই জয়ধ্বনিতে ছিল বহু কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের হুঙ্কার, স্বাধীনতা পাওয়ার তীব্র ইচ্ছে।
বিশ্বকাপেই পেলে এবং তাঁর ফুটবল হয়ে উঠেছিল প্রচণ্ড আত্ম বিশ্বাসের প্রতীক এবং বর্ণবৈষম্যের গালে চপাটেই মারা এক চড়। যেদিন পেলে ফুটবল বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটি খেলেন, সেদিন যেন ফুটবলের রুপকথার এক সফল অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হয়।