সম্রাট ছুটি নিলেন চুপিসারে

কালো মানিক আর নেই। দুরন্ত সুন্দর ফুটবলের পতাকাবাহী মানুষটা চলে গেছেন জীবন নদীর ওপারে। রেখে গেছেন তাঁর হাজারো কীর্তি আর তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের অনন্য নজীর। বিশ্ব ফুটবলে নি:সন্দেহে এমন শোকের দিন আর আসেনি।

কালো মানিক আর নেই। দুরন্ত সুন্দর ফুটবলের পতাকাবাহী মানুষটা চলে গেছেন অন্য জীবনে। রেখে গেছেন তাঁর হাজারো কীর্তি আর তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের অনন্য নজীর। বিশ্ব ফুটবলে নি:সন্দেহে এমন শোকের দিন আর আসেনি।

হ্যাঁ, কিংবদন্তি পেলে চলে গেছেন, চলে গেছেন জীবন নদীর ওপারে। তিনি ছুটি নিয়েছেন চুপিসারে। ৮২ বছর বয়সে জীবনাবসান হল তাঁর। অনেকদিন ধরেই তিনি ভুগছিলেন ক্যান্সারে। ডাক্তাররাও হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু, লড়াকু পেলে লড়ছিলেন। যেমন লড়েছিলেন বিশ্বকাপ ফাইনালে। কিন্তু, এবার আর শেষ বাঁশিতে বিজয়ী তিনি নন। প্রতিপক্ষ যে মহাপরাক্রমশালী এক গোলরক্ষক, যার কাছেই কেবল পরাস্ত হতে পারেন এই পেলে।

১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর। সাদামাটা, দুস্থ এক ব্রাজিলিয়ান পরিবারে জন্ম তাঁর। যেখানে জন্মটাই খুবই অগুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। কে জানতো, সেই অগুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটাই একদিন পাল্টে দেবে ব্রাজিলের ইতিহাস, বদলে দেবে ফুটবলের মানচিত্র।

১৯৫৬ সালে সান্তোসের হয়ে তাঁর অভিষেক হয় ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে। প্রথম ম্যাচেই গোল করেন। সেই বছরের শেষেই ব্রাজিলের হয়ে অভিষেক। ১৯৫৭ সালে মারাকানায় খোদ আর্জেন্টিানর বিপক্ষে গোল। আর পেছনে ফিরে তাকানো নয়।

সেদিন কে যেন বলেছিলেন, ‘এই ছেলেটা একদিন বিশ্বের সেরা ফুটবলার হবে।’ কথাটাকে এক বছরের মধ্যে সত্যি বলে প্রমাণ করেন পেলে। ১৯৫৮ সালে সুইডেন থেকে কিশোর পেলে ফেরেন বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে। ফাইনালে গোল করেন। ১৯৫০ সালে শেষ লড়াইয়ে হেরে দরিদ্র বাবাকে, গোটা দেশকে কাঁদতে দেখেছিলেন পেলে। এবার সেই মানুষগুলোর মুখেই তিনি হাসি ফোটালেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে জিতলেন বিশ্বকাপ।

চার বছর বাদে আবারও বিশ্বকাপ জয় ব্রাজিলের। যদিও পেলে ম্যাজিক ছিল সামান্যই। গ্রোইন ইনজুরির জন্য পেলে খেলেন মাত্র দু’টি ম্যাচ। ১৯৬৬ সালে পারেনি ব্রাজিল। পেরেছিল ১৯৭০ সালে। এবার সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন পেলে, ‍তৃতীয় বারের মত বিশ্বকাপ জিতে ব্রাজিল। ১৯৭১ সালে খেলেন জাতীয় দলের হয়ে নিজের শেষ ম্যাচ।

পুরো জীবন স্যান্তোসে কাটানো পেলে শেষ বয়সে যান আমেরিকায়, কসমসের হয়ে খেলতে। বুড়ো বয়সেও দুই মৌসুমে কসমসের হয়ে করেন ৬৪ টি গোল। বুটজোড়া তুলে রাখেন ১৯৭৭ সালে।

তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন, প্রতিযোগীতামূলক ফুটবলে এক হাজারটিরও বেশি গোল করেছেন। তবে, গোল, ট্রফি আর অর্জনের ঊর্ধ্বে গিয়ে তিনি বনে গেছেন ফুটবলের প্রতীক, বনে গেছেন লাতিন ফুটবলের পোস্টার বয়, হয়ে উঠেছেন ফুটবলের ঈশ্বর – দ্য গ্রেটেস্ট অব অল টাইম – বিশ্ব ফুটবলের অবিসংবাদিত সেরা।

ফুটবল মাঠে একনায়কতন্ত্রের অবসান হল অবশেষে। আজ সম্রাটের প্রস্থানের দিন। আজ ফুটবল মুকুটের অবসরের দিন। আজ ফুটবলের কান্নার দিন। হ্যাঁ, পেলে চলে গেছেন। তিনি চললেন অন্য কোথাও। অন্য কোনো পৃথিবীর ফুটবল মাঠে। কিন্তু, পেলের মৃত্যু নেই। পেলেদের মরতে নেই।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...