পেলের সম্পত্তির বাটোয়ারা

ফুটবলের প্রথম বৈশ্বিক তারকা পেলে। সবুজ গালিচায় পায়ের জাদুতে মোহাবিষ্ট করে রেখেছেন গোটা বিশ্বকে। মাঠের মত মাঠের বাইরের জীবনও তাঁর বর্ণালী। নানা সময়ে নানা গুজব উঠেছে, কিন্তু তিনি ছিলেন নিপাট ভদ্রতার প্রতিমূর্তি। মৃত্যুর পরেও সেই প্রমাণ রেখে গেলেন। সারা জীবন কন্যা সার্জি রেজিনাকে অস্বীকৃতি জানালেও ঠিকই উইলের সম্পত্তির উত্তরাধিকার করে গেছেন তাঁকে।

কেউ ঠিকমত জানে না কি করে এডসন আরান্তেস দো নসিমেন্তো একদিন পেলে হয়ে গেলেন। তবে সবাই জানে ওই চার অক্ষরকে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে প্রবল সম্মান আর শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করা হয়। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ জয় দিয়ে শুরু, এরপর আরও দুবার বিশ্বকাপ জিতে জুলেরিমে ট্রফিকে চিরতরে এনে দিয়েছেন ব্রাজিলকে। হাজারের বেশি গোল করেছেন, আনন্দ দিয়েছে গোটা বিশ্ববাসীকে।

ব্রাজিলের হলুদ জার্সির মত পেলের মাঠের বাইরের জীবনও রঙিন। তাঁর জীবনে ভালোবাসা এসেছে বারবার, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তিনবার। শেষবার যখন বিয়ে করেন তখন বয়সটা ছাড়িয়েছে ৭৫ বছর। নানা সময়ে এর বাইরেও বিভিন্ন নারীর সাথে সম্পর্কের কথা শোনা গিয়েছে। বিভিন্ন নারীর গর্ভে পেলের মোট সাতজন সন্তানের কথা জানা গিয়েছে। 

পেলের প্রথম স্ত্রী ছিলেন রোজামেরি ডি রেইস। প্রথম সংসারে দুই কন্যা এবং একটি কন্যা সন্তান রয়েছে তাঁর। মেয়ে দুজন হলেন কেলি এবং জেনিফার আর ছেলের নাম রেখেছেন বংশের নামের সাথে মিল রেখে, এডসন। তবে বাবার সম্মান ধরে রাখতে পারেনি ছেলে, এডিনহো নামে পরিচিত হওয়া এডসন মানি লন্ডারিং এবং মাদক পাচারের মামলায় যাবজ্জীবন জেল খাটছেন। পেলে বেশ কয়েকবারই ছেলেকে দেখতে গিয়েছেন। 

১৯৮২ সালে টিভি উপস্থাপক জোজার সাথে পেলের সম্পর্কের গুজব শোনা যায়। সেই জের ধরেই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে তাঁর প্রথম স্ত্রীর সাথে। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে তিনি বিয়ে করেন বিখ্যাত ব্রাজিলিয়ান গায়িকা আসিরিয়া লেমোসকে। দ্বিতীয় সংসারে পেলের জোশুয়া এবং সেলেস্তে নামের দুই যমজ সন্তান রয়েছে। 

কিন্তু ২০০৮ সালে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথেও বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে তাঁর। ২০১৬ সালে ৭৫ বছর বয়সে তৃতীয়বারের মত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। তৃতীয় স্ত্রী ব্রাজিলিয়ান-জাপানি ব্যবসায়ী মার্সিয়া অকোরি সাথেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন তিনি।

তবে বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরেও পেলের আরও কয়েকজন সন্তানের কথা জানা যায়। সাংবাদিক লেনিয়া কুর্টজের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল একসময়। পরবর্তীতে তাঁদের সন্তান ফ্ল্যাভিয়া কুর্টজকেও নিজের মেয়ে হিসেবে মেনে নেন পেলে। কিন্তু জীবদ্দশায় সবচেয়ে অভাগা ছিলেন বোধহয় সান্দ্রা ম্যাচাডো। নিজেকে পেলের মেয়ে দাবি করলেও জীবিত থাকা অবস্থায় পেলে তাঁকে মেনে নেননি। আদালতে ডিএনএ টেস্টের প্রমাণ দেখালেও পেলে কখনোই স্বীকার করেননি। টানা পাঁচ বছর চলা মামলার পর আদালত সান্দ্রাকে পেলের বংশীয় নাম নসিমেন্তো ব্যবহারের অনুমতি দেন। 

তবে পেলের মৃত্যুর পর শোনা যাচ্ছে নিজের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেননি সান্দ্রার সন্তানদের। বরং নিজের শেষ দিনগুলোতে দেখা করার জন্য ডেকে নিয়েছিলেন সান্দ্রার দুই ছেলেকে। নিজের উইলে তাঁদেরকে সহ মোট সাত সন্তানকেই উত্তরাধিকার বানিয়ে গেছেন পেলে। 

পেলের মৃত্যুর দুই দিন আগে পেলের দুই নাতি গ্যাব্রিয়েল আরান্তেস দো নসিমেন্তো এবং অক্টাভিও ফেলিনি নেতো দেখা করেন তাঁর সাথে। সারাজীবন কেবল অবহেলা জুটলেও শেষবেলায় স্বীকৃতি পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তাঁরা। সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘আমরা উত্তেজিত ছিলাম, এমন একটা মূহুর্তের জন্য বহুবছর থেকে অপেক্ষা করছিলাম। প্রতিটা পরিবারের উত্থান-পতন থাকে, লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু দিনশেষে ভালোবাসা সব ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয়।’

সান্দ্রা মারা গেছেন আরো ১৭ বছর আগে। নিজে দেখে যেতে না পারলেও শেষবেলায় ছেলেদের নাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে দেখে নিশ্চিতভাবেই মুচকি হাসছেন। হয়তো স্বর্গে অপেক্ষা করছেন বাবার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link