কলকাতা নাইট রাইডার্সের আক্ষেপ যারা

নিলামের হাতুড়িতে কলকাতার ডেরা ছেড়ে অনেককেই ভিন্ন দলমুখী হতে হয়েছে। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে যা খুবই সাধারণ ঘটনা। তবে এমন বেশ কিছু ক্রিকেটার রয়েছেন, যারা একটা সময় কলকাতা নাইট রাইডার্সের স্বপ্ন সারথি ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে অন্য দলের হয়ে আইপিএল ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করেছেন। কলকাতাকে আক্ষেপ কিংবা আফসোসের সাগরে ভাসানো কলকাতার সেই সব প্রাক্তন ক্রিকেটারদের নিয়েই খেলা ৭১ এর আজকের আয়োজন। 

কলকাতা নাইট রাইডার্স তরীতে পা পড়েছে অনেক ক্রিকেটারের। ঘরের ছেলে সৌরভ গাঙ্গুলি থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তী ক্রিকেটার রিকি পন্টিং,পাকিস্তানের শোয়েব আখতারসহ বহু ক্রিকেটারের সাথে জড়িয়ে আছে কেকেআরের ইতিহাস।

একটা সময় পর সেই কলকাতা থেকে অনেক ক্রিকেটারের প্রস্থানও হয়েছিল। নিলামের হাতুড়িতে কলকাতার ডেরা ছেড়ে অনেককেই ভিন্ন দলমুখী হতে হয়েছে। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে যা খুবই সাধারণ ঘটনা। তবে এমন বেশ কিছু ক্রিকেটার রয়েছেন, যারা একটা সময় কলকাতা নাইট রাইডার্সের স্বপ্ন সারথি ছিলেন। কিন্তু, পরবর্তীতে অন্য দলের হয়ে আইপিএল ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করেছেন। কলকাতাকে আক্ষেপ কিংবা আফসোসের সাগরে ভাসানো কলকাতার সেইসব সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়েই খেলা ৭১-এর আজকের আয়োজন।

  • সাঞ্জু স্যামসন 

আইপিএল পরিসংখ্যান বলে, রাজস্থান রয়্যালসের এ ক্রিকেটার রাজস্থানের হয়েই শুধু আইপিএল খেলেছেন। অন্য কোনো দলের হয়ে একটিও ম্যাচ খেলা হয়নি স্যামসনের। সেই ২০১৩ সাল থেকে রাজস্থানের ডেরায় ধ্রুব হয়ে ওঠা সাঞ্জু স্যামসন এখন এই দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্বও পালন করছেন।

তবে মজার ব্যাপার হলো, এই রাজস্থান রয়্যালস কিন্তু স্যামসনের প্রথম আইপিএল দল না। ২০১২ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের স্কোয়াডে ছিলেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। কিন্তু সেবার কলকাতার হয়ে একটিও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি।

পরের আসরে কেকেআর ম্যানেজমেন্ট তাঁকে ছেড়ে দেয়। আর সেই সুযোগ লুফে নেয় রাজস্থান রয়্যালস। এরপর থেকে দীর্ঘ সময়ের যাত্রায় এই দলের ইতিহাসের সেরা ব্যাটারদের মধ্যেই ঢুকে গিয়েছেন সাঞ্জু স্যামসন। রাজস্থানের হয়ে দুর্দান্ত এ ক্যারিয়ার কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্টকে বোধহয় এখনও আফসোসে ভাসায়।

  • সুরিয়াকুমার যাদব

বর্তমানে টি-টোয়েন্টির নাম্বার ওয়ান ব্যাটার সুরিয়াকুমার যাদবের আইপিএলের গোড়াপত্তন হয়েছিল কলকাতার হয়ে। সে সময় কলকাতার একাদশে নিয়মিত মুখই ছিলেন তিনি। তবে টপ অর্ডার এ ব্যাটারের কলকাতার হয়ে বেশিরভাগ সময়েই লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ে নামতে হতো। সে হিসেবে ব্যাটার হিসেবে সুরিয়াকুমারকে সবচেয়ে মূল্যায়ন করেছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস।

আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ শিরোপাজয়ী এ দলের হয়ে সুরিয়াকুমার যাদব যেন নিজেকে প্রমাণের পূর্ণ সুযোগ পান। আর সেই মুম্বাইয়ের হয়ে তাঁর পারফরম্যান্সই তাঁকে ভারত জাতীয় দলে পরবর্তীতে সুযোগ পাইয়ে দেয়। এরপরের ইতিহাসটা তো সবার জানা। অল্প সময়ের মধ্যেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেরার ব্যাটারের শীর্ষ আসনে নিজেকে নিয়ে যান সুরিয়াকুমার যাদব।

  • ক্রিস গেইল 

কলকাতা নাইট রাইডার্সের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আক্ষেপটার নাম বোধহয় ক্রিস গেইল। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে আইপিএল ক্যারিয়ার রাঙানো এ ক্রিকেটারের শুরুটা কিন্তু হয়েছিল কলকাতার হয়ে। কিন্তু কলকাতার চাওয়া সেভাবে পূরণ করতে পারেননি ক্যারিবিয়ান এ ব্যাটার। তাই একটা সময় পর, তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় টিম ম্যানেজমেন্ট।

কিন্তু কেকেআরের হয়ে ব্যর্থ গেইল পরবর্তীতে আইপিএলে রীতিমত রান বন্যা আর ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়েছিলেন। তবে সেটা কলকাতার হয়ে নয়, ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে। আর এমন দল বদলে গেইলের আমূলে বদলে যাওয়া এখনও আক্ষেপ, আফসোসের নাম হয়ে আছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ইতিহাসে।

  • ঋদ্ধিমান সাহা 

ঘরের ছেলে ঋদ্ধিমান সাহা কলকাতার হয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন প্রথম আসরেই, ২০০৮ সালে। তবে তিন মৌসুম পর তাঁকে ছেড়ে দেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। আর এরপর থেকেই নিজেকে রাঙাতে শুরু করেন বাংলার এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

মজার ব্যাপার হলো, কলকাতার দ্বিতীয় আইপিএল শিরোপা জেতার পথে এই ঋদ্ধিমান সাহাই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ২০১৪ আইপিএলের ফাইনালে পাঞ্জাবের হয়ে কলকাতার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন এ ব্যাটার। তবে ঘরের ছেলের এমন ইনিংসেও সেবার শিরোপা হাতছাড়া হয়নি কলকাতার। ঋদ্ধিমান সাহার সে সেঞ্চুরির পরেও ফাইনাল হেরেছিল পাঞ্জাব।

  • মোহাম্মদ শামি

কলকাতার আরেক ঘরের ছেলে মোহাম্মদ শামিও কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে একসময় খেলেছেন। তবে সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র ৩ টি ম্যাচে। তবে, কলকাতার ডেরা থেকে বেরিয়েই সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেন এ পেসার। সম্প্রতি আইপিএল ক্যারিয়ারে ১০০ উইকেট নেওয়ার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মোহাম্মদ শামি। এখন খেলছেন গুজরাটের হয়ে।

  • কুলদ্বীপ যাদব 

বাঁ-হাতি এ স্পিনারের আইপিএল ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে। সেই কেকেআর থেকেই জাতীয় দলে জায়গা হয় তাঁর। কিন্তু ২০২১ এ এসে কলকাতার একাদশের বাইরে থাকতে শুরু করলে পরের মৌসুমেই এ স্পিনারকে ছেড়ে দেয় টিম ম্যানেজমেন্ট।

আর এখানেই কলকাতার আক্ষেপের কারণ হয়ে যান তিনি। কারণ দিল্লীর হয়ে ২০২২ আইপিএলে এ স্পিনার একাই নিয়েছিলেন ২২ উইকেট। অথচ সেবার নারাইন ছাড়া কলকাতার একাদশে কোনো স্পিনার তেমন পারফর্মই করতে পারেননি।

  • শুভমান গিল 

ভারতের ক্রিকেটে নতুন ব্যাটিং সেনসেশন তিনি। এই মুহূর্তে আইপিএল খেলছেন গুজরাটের হয়ে। তবে আক্ষেপটা হলো, গুজরাটের আগে টানা তিন মৌসুম কলকাতার হয়ে খেলেছিলেন এ ব্যাটার। এ সময়কালে ব্যাট হাতে খুব খারাপ করেননি।

তবে ২০২১ এর পরেই বিকল্প খুঁজতে গিয়ে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল কলকাতা। কিন্তু কলকাতার সে সিদ্ধান্তের আক্ষেপ পরবর্তীতে বাড়িয়ে দেন গিল নিজেই। গুজরাটের হয়ে ব্যাট হাতে দারুণ সব ইনিংস খেলতে শুরু করেন এ ব্যাটার।

সেই ধারাবাহিকতায় জাতীয় দলেও আলো ছড়াতে শুরু করলেন। এ দিকে গত দুই মৌসুম ধরেই কলকাতার হয়ে কে ইনিংস শুরু করবেন, সেই সিদ্ধান্তই এখন পর্যন্ত স্থিতিশীলতায় আসেনি। শুভমান গিল তাই কলকাতা নাইট রাইডার্সের আরেক আক্ষেপের নাম।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...