৩৭৯ ও একটি পৃথ্বী ‘শো’

পৃথ্বী শ যে জাতীয় দলে ফিরতে প্রস্তুত তারই যেন একটা জানান দিয়ে দিলেন।  রঞ্জি ট্রফিতে খেললেন দুর্দান্ত একটি ইনিংস। আসামের বিপক্ষে মুম্বাইয়ের হয়ে খেলেছেন ৩৮৩ বলে ৩৭৯ রানের ইনিংস। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যা ভারতীর ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ডটা ভাউসাহেব নিম্বলকারের। ১৯৪৮–৪৯ মৌসুমে মহারাষ্ট্রের হয়ে অপরাজিত ৪৪৩ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।

দারুণ কিছুর আগমনী বার্তা দিয়ে ২০১৮ সালে ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল পৃথ্বী শ’র। শুরুটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। অভিষেক ইনিংসেই হাঁকিয়েছিলেন সেঞ্চুরি। ব্যাটিং স্ট্যান্স, শরীরী ভাষা, স্ট্রেইট ড্রাইভ- সব কিছুতে শচীন টেন্ডুলকারের সাথে অদ্ভুত মিল থাকায় পরবর্তী লিটল মাস্টার হিসেবে শ’কেই তখন বিবেচনা করা হচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেই প্রত্যাশা আর তিনি মেটাতে পারলেন না।

প্রমাণ করার খুব যে সুযোগ পেলেন সেটাও নয়। মাত্র ১২ টা ম্যাচেই আঁটকে গেল তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। একটা সময় পরে এসে জাতীয় দলের দুয়ারও বন্ধ হয়ে গেল। মূলত, তাঁর জায়গায় থাকা বিকল্প ব্যাটাররা ছন্দ দেখানো শুরু করলে নির্বাচকদের রাডার থেকে আড়ালে চলে যান পৃথ্বী শ।

তবে পৃথ্বী শ যে জাতীয় দলে ফিরতে প্রস্তুত তারই যেন একটা জানান দিয়ে দিলেন।  রঞ্জি ট্রফিতে খেললেন দুর্দান্ত একটি ইনিংস। আসামের বিপক্ষে মুম্বাইয়ের হয়ে খেলেছেন ৩৮৩ বলে ৩৭৯ রানের ইনিংস। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যা ভারতীর ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ডটা ভাউসাহেব নিম্বলকারের। ১৯৪৮–৪৯ মৌসুমে মহারাষ্ট্রের হয়ে অপরাজিত ৪৪৩ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।

রঞ্জির ইতিহাসে এ রেকর্ডটি নিজের করে না নিতে পারলেও মুম্বাইয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহের রেকর্ডটা ঠিকই নিজের করে নিয়েছেন পৃথ্বী শ। ১৯৯০–৯১ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে হায়দরাবাদের বিপক্ষে ৩৭৭ রান রান করেছিলেন মুম্বাইয়ের হয়ে খেলা সঞ্জয় মাঞ্জরেকার। পৃথ্বী শ’র ৩৭৯ রানের এ ইনিংসের আগে এটিই ছিল মুম্বাইয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহের রেকর্ড।

পৃথ্বী শ ৩৭৯ রানের এ লম্বা ইনিংস খেলার পথে হাঁকিয়েছেন ৪৯ টি চার আর ৪ টি ছক্কা। আগের দিন শেষ করেছিলেন ২৮৩ বলে ২৪০ রানে অপরাজিত থেকে। পরের দিনে এসে ত্রিশতক স্পর্শ করতে খেলেছেন মাত্র ৪৩ টি বল। ক্যারিয়ার প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করার পথে ছিলেন, অথচ সেটা তাঁর পুরো ইনিংসের আগ্রাসী ব্যাটিং দেখে মনেই হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল, এমন সব লম্বা ইনিংসে তিনি আগে থেকেই ধাতস্থ। পুরো ইনিংসেই সাবলীল ব্যাটিং করেছেন। বাজে বলগুলোকে অবলীলায় বাউন্ডারিতে আছড়ে ফেলছিলেন। আর সেই সুবাদে সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি পেরিয়ে ট্রিপলের দেখাও পেয়েছেন দ্রুতই।

রঞ্জি ট্রফিতে এ ত্রিশতক ইনিংস খেলার পর অনন্য একটি রেকর্ড গড়েছেন পৃথ্বী শ। তিনিই প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান, যার রঞ্জি ট্রফিতে ট্রিপল সেঞ্চুরির পাশাপাশি, বিজয় হাজারে ট্রফিতে (ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্ট) ডাবল সেঞ্চুরি ও ভারতের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে সেঞ্চুরির কীর্তি রয়েছে।

এক ইনিংসে এখানেই রেকর্ডের শেষ নয়। পৃথ্বী শ এই ইনিংস খেলার পথে দুইবার সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন লাঞ্চ সেশনের আগে। যে কীর্তি এর আগে একমাত্র ছিল গিলবার্ট জেসপের। ১৯০০ সালে গ্লস্টারশায়ারের হয়ে তিনি ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ভিন্ন দুই লাঞ্চ সেশন শুরুর আগে দুইবার সেঞ্চুরি পূরণ করেছিলেন।

রঞ্জি ট্রফিতে ৩৭৯ রানের এই ইনিংসটা পৃথ্বী শ খেলেছেন ওপেনিংয়ে নেমে। আর এখানেই হয়েছে আরেকটি নতুন রেকর্ড। ওপেনার ব্যাটার হিসেবে গড়েছেন রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড। এর আগে ২০১৬ সালে গুজরাটের হয়ে  সামিত গোহেল ওডিশার বিপক্ষে খেলেছিলেন ৩৫৯ রানের একটি ইনিংস। যেটি এতদিন পর্যন্ত ওপেনার হিসেবে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড ছিল। ৭ বছর বাদে এবার এই রেকর্ডটাই নিজের করে নিলেন পৃথ্বী শ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...