কবীর সুমনের মুখে শুনেছি। একজন রবীন্দ্রনাথ লাগে একটা সুমন তৈরী করতে। চরম আত্মবিশ্বাস এবং আত্মপ্রত্যয়ে ছিটকে বেরিয়ে আসা কিছু শব্দ। কথাটার মানে কী? যোগ্য ছাত্র ব্যতীত, একজন শিক্ষকের সবকিছু শুষে নেবার ক্ষমতা বাকীদের থাকে না। খেলাধুলোর মাঠেও কি একই কথা চলে? নাকি চলে না?
আমি যতদূর জানি, শচীন রমেশ টেন্ডুলকার আজ অবধি একজনকেই টানা দু’সপ্তাহ কোচিং করিয়েছেন। বিরাট কোহলি। জঘন্য খেলে ইংল্যান্ড থেকে ফেরত এসে দিল্লীবাসী গোপন ঘাঁটি গেঁড়েছিলেন মুম্বইতে। টানা চোদ্দ দিন সচিন ঠিক করে দিয়েছিলেন বিরাটের ব্যাটিং। অচিরেই ফল এসেছিলো বিরাটের ব্যাটে। দেশের বাইরের সিমিং পিচে। এর অনেক দিন আগে, গ্রেগ চ্যাপেল ঠিক করে দিয়েছিলেন সৌরভকে। গোপনে।
মোদ্দা কথা, যোগ্য শিক্ষকের ফুটে ওঠার জন্য চাই যোগ্য ছাত্র। বিরাট ছাড়া অন্য কেউ হয়তো শচীনের কাছে শিখতেই পারবেন না। যে ইন্সাইড আউট শট সচিনের কাছে খুব স্বাভাবিক এবং তাতে সামান্য কবজির মোচড় কী প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা শচীন শুধুমাত্র বিরাটকে শেখাতে পারবেন। অন্য কেউ হয়তো ইন্সাইড আউট শটটাই সচিনের স্ট্যান্ডার্ডে মারতেই পারবেন না। মারতে পারলে তারপর তো তো শচীন সেটাকে ঠিক করবেন!
এটা মনে হয় জীবনের সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে গেলে আগে নিজে একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। নইলে শিক্ষক যত ভালোই হোক, কিস্যুটি হবার যো নেই।
ডাকাবুকো ম্যাককুলাম সেরকম একটা টিমে পেয়েছেন। যারা কোচের কথা হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন।
টিমের সব কটি প্লেয়ার এই আপ্তবাক্য স্মরণ করে মাঠে নামে, চালিয়ে খেলো। অনেক সুবিধে। বিপক্ষ মাথা চুলকাবে, ভড়কে গিয়ে বাজে বল করবে। যেহেতু সবাই হাত চালিয়ে খেলবে, তাই প্ল্যান আগাগোড়া সরল। নামো, চালাও। অমুকে চালাবে, তুমি ধরবে। সে দৌড়বে, অন্য কেউ বাউন্ডারি হাঁকাবে। এসব কোনো ব্যাপার’ই নেই। নামো, চালাও।
আর সব চেয়ে বড় সুবিধে? সময়। আজ, দেড়শো বছর ধরে, টেস্ট ম্যাচ জিততে গেলে বিপক্ষের কুড়িটা উইকেট লাগে। ক্রিকেটের অন্য কোনো ফর্ম্যাটে সব উইকেট নেবার দরকার নেই। শুধু টেস্টে। অতএব, তোমার টিমের বোলারদের সময় দাও। ধুমধাড়াক্কা পিটিয়ে রান তুলে দিয়ে, প্রচুর ওভার দাও। যাতে বিপক্ষের সব ব্যাটারকে টপকে দেবার জন্য যথেষ্ট ওভার হাতে থাকে। তারা তো আর তোমাদের মতো চালিয়ে খেলবে না। সুতরাং সময় লাগবে।
কোচের মুখনি:সৃত প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি গেমপ্ল্যান মাঠে রূপান্তরিত করার মতো যথেষ্ট বারুদ মশলা এই ইংল্যান্ড টিমের রয়েছে। খাতায় কলমে প্রচুর সুপারস্টার নেই। কিন্তু প্রায় সবাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অবদান রাখছেন। টিমগেমে যেমন হয়ে থাকে আর কী! কেউ নিজের সেঞ্চুরির কথা ভেবে খেলছেন না। দুম করে স্লো হয়ে যাচ্ছেন না।
অন্যদিকে আরেকজন কোচ। ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ টেস্ট ব্যাটার। রাহুল শরদ দ্রাবিড়। অনেক ভাবনা চিন্তা করে দায়িত্ব নিয়ে টিমকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। জনপ্রিয় হবার বাসনা তাঁর কোনদিনই ছিলো না। তবে সততার দাবি ছিলো। ঋদ্ধিমানকে তাই লোক মারফত না জানিয়ে নিজে মুখে জানিয়ে এসেছেন। তুমি আর খেলছো না। ঠিক যেমনভাবে মূলতানে সচিনকে জানিয়েছিলেন, তুমি আর খেলছো না। সিদ্ধান্তের ঠিক ভুল নিয়ে তর্ক বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু সিদ্ধান্তের স্বচ্ছ প্রয়োগ নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়।
সেই দ্রাবিড় টিম সাজিয়েছেন। অশ্বিনকে টিমের বাইরে রেখেছেন। বিশ্বের এক নাম্বার বোলারকে টিমের বাইরে রেখে খেলতে নামা কি মূর্খামি নয়? হতে পারে, নাও হতে পারে। আমরা কেউ জানি না বা জানবো না। তবে জাদেজার বোলিং দেখে মনে হয় নি যে আরেকজন স্পিনার থাকলে ভীষণ দারুণ কিছু ঘটতে পারতো।
কিন্তু ব্যাটিং?
মানুষটার নামে তাঁর ঘরের মাঠে একটা দেওয়াল বানানো হয়েছে। তাঁর টিমের স্টার ব্যাটার’রা এভাবে পটল তুলবেন? গিল এবং পূজারা বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড। গিল না হয় আইপিল মোডে ছিলেন। ফাইনাল খেলেছেন। আইপিএলে ঠিক সময়ে সেঞ্চুরির আগে স্লো হয়ে গিয়ে সেঞ্চুরি করেছেন। আইপিলের মাঝে নিজের হাফ ন্যাংটো ছবি ইন্সটাতে পোস্ট করেছেন। হায় শচীন!
ট্যুর শেষ না হলে বিজ্ঞাপনের ছবি তুলতে দিতেন না আপনি। রেস্ট ডে তেও না। আজকের শচীনের কী অদ্ভুত রূপান্তর। আচ্ছা, সে না হয় হলো। গিলের না হয় অসুবিধে হচ্ছে। পুজারা? শয়ে শয়ে কাউন্টি মাতানো ইনিংস আসল দিনে কাউন্ট করলো না?
টিমের সেরা দুই নাম রোহিত এবং বিরাট। প্রতিস্পর্ধী। বোম্বে ভার্সেস দিল্লী। ভুঁড়ি ওলা ডার্ক সার্কেল ভার্সেস ফিট চনমনে। কিন্তু ষষ্ঠ বা নবম স্টাম্পের বল তাড়া করার ব্যাপারে সমান সক্রিয়। দেওয়াল তাহলে এঁদের কী শেখালেন? কিছু না। কেনো শেখাতে পারলেন না? এঁরা শিখতে চান না বা দেওয়াল শেখাতে পারেন না।
কারণটা যাই হোক। রাহুল, দায়িত্ব ছেড়ে দিন। প্লিজ। আপনাকে মানাচ্ছে না। কিশোরদের ব্যাটিং শেখান। আইপিএলে হারিয়ে যাবে তারা। তার আগে কিছু অভিজ্ঞতা ওদের মজ্জায় ঢুকিয়ে দিন। স্টারদের সামলানো আপনার কম্মো নয়।
মুলতানেও স্টার সামলাতে পারেন নি, ওভালেও পারলেন না।