ডানা মেলার আকাশ পেয়েছেন পাতিদার

বয়সটা ৩০, ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্ম করে যাচ্ছেন অনেক বছর ধরে। অথচ রজত পাতিদারের টেস্ট অভিষেক হলো মাত্র দিন কয়েক আগে। এর আগে কেবল একটা ওয়ানডে খেলার সুযোগ হয়েছিল তাঁর, তবে কি ভারত প্রতিভা চিনেও সেই প্রতিভাকে আলো ছড়ানোর মঞ্চ দিতে পারেনি?

দেশটির সাবেক ক্রিকেটার অময় কুরেশিরা অন্তত সেটাই মানেন। তিনি বলেন, ‘কারো কারো ডানা থাকে, উড়ার সাহসও থাকে কিন্তু আকাশ পায় না। আইপিএলের সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করার পরই পতিদারকে জাতীয় দলে ডাকা উচিত ছিল। মূল ব্যাপার হচ্ছে সে ধারাবাহিক, তাঁর অনেক আগে সুযোগ পাওয়ার কথা।’

সাবেক ভারতীয় নির্বাচক দিলীপ ভেঙসরকারও এই ব্যাটারের সম্ভাবনা বুঝতে পেরেছিলেন অনেক আগে। এমনকি জানিয়েছিলেন তিনি নির্বাচক হিসেবে থাকলে নিশ্চিতভাবেই ডাক পড়তো তাঁর।

রজত পাতিদারের জীবন আসলে এমনিই, কাছে এসেও দূরে যেতে হয়েছে অনেকবার। তবে বন্ধু, কোচদের সঠিক নির্দেশনার কারণে তিনি পথচ্যুত হননি। মধ্যপ্রদেশের অধিনায়ক সুভাম শর্মা বলেন, ‘ব্যাঙ্গালুরু থেকে তাঁকে কল দেয়া হয়েছিল; সে আমাকে জিজ্ঞেস করে যাব কি না কারণ তাঁর বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল। সে ভেবেছিল তাঁকে খেলানো হবে না, কিন্তু আমি আশ্বাস দিই যে অবশ্যই খেলাবে তুই যা।’

আইপিএলের সেই মৌসুমে ১৫২ স্ট্রাইক রেটে ৩৩৩ রান করেছিলেন এই ডানহাতি। এলিমিনেটরে লক্ষ্মৌ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে মাত্র ৫৪ বলে ১১২ রানের দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলেছিলেন তিনি, পরের ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৫৮ রান।

তাই তো খানিকটা ক্ষোভ আছে পাতিদারের মেন্টর কুরেশিরার মনে। তিনি মনে করেন, মধ্যপ্রদেশের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে না খেলে দিল্লি, মুম্বাই বা কর্ণাটকের হয়ে খেললে এত দিনে আট দশটি টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়ে যেত তাঁর।

এই প্রতিভাবানকে ঘরোয়া অঙ্গনে কমপ্লিট প্যাকেজ হিসেবে দেখা হয়। কপি বুক টেকনিক, অসম্ভব ধৈর্য নিয়ে ব্যাট করেন তিনি। সিলি পয়েন্ট, গালির মত পজিশনে দারুণ ফিল্ডিংও করেন। সততা, শৃঙ্খলা, পরিশ্রমের মানসিকতা – সবই রয়েছে তাঁর মাঝে। সেজন্যই ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, টানা দুই তিন ম্যাচে সুযোগ পেলে বড় রান করতে পারবেন।

মূল দলের ট্রায়ালের সময় দুইবার শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন রজত পাতিদার। না, মন খারাপ করেননি তিনি বরং নিজেকে বলেছিলেন আরো বেশি পরিশ্রম করতে হবে। বছর দুয়েক আগে আকাশী-নীল জার্সিতে ডাক না পাওয়ার পরও একই ঘটনা ঘটেছিল। তাঁর মানসিকতা সব সময়ই ছিল, আমাকে রান করতে হবে শুধু।

এই অদম্য মানসিকতাই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে স্বপ্নের সবচেয়ে উঁচু সিঁড়িতে। দেরিতে হলেও সেখানে পৌঁছুতে পেরে খুশি এই তারকা; তাঁর বাবাও ছেলের সাফল্যে গর্বিত। এখন স্রেফ নিজের জায়গাটা পাকা করে নেয়া বাকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link