সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বসেরা লেগস্পিনার হিসেবে তাঁকেই মানেন সবাই। ছোটবেলায় শহীদ আফ্রিদিকে দেখে ক্রিকেটের প্রেমে পড়া রশিদ খান এবারে ব্যাটিংটাও আয়ত্ত্বে এনেছেন আফ্রিদির স্টাইলেই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেই চমকে দিয়েছিলেন গোটা বিশ্বকে। তাঁর দুর্বোধ্য লেগস্পিন তাঁকে পরিণত করে তুলেছে ব্যাটসম্যানদের দু:স্বপ্নে। বিশ্বজুড়ে ফ্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর নিয়মিত মুখ এই আফগান তারকা। আইপিএল, সিপিএল, বিগব্যাশ, পিএসএল যেখানেই খেলেছেন, আলো ছড়িয়েছেন আপন মহিমায়। নিলামের টেবিলে যেন তাঁকে দলে ভেড়াতে মুখিয়ে থাকে দলগুলো।
অথচ ক্যারিয়ারের শুরুটা এতটা মসৃণ ছিল না এই তারকার। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে তো একবার দল থেকে বাদ পড়ায় ক্রিকেটই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের পরামর্শে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত বদলান। ভাগ্যিস মায়ের কথা শুনেছিলেন, নইলে রশিদ খানের মায়াবী স্পিনে কিভাবে হারাতো গোটা বিশ্ব!
মজার ব্যাপার হলো পুরোদস্তর লেগস্পিনার বনে যাবার আগে ব্যাট হাতেও দারুণ ছিলেন এই তারকা। এমনকি ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামার রেকর্ডও আছে তাঁর। সেই কারণেই কিনা বোলিংয়ের পাশাপাশি কয়েক বছর ধরেই ঝড়ো ব্যাটিংয়ে চমকে দিচ্ছিলেন সবাইকে।
নিয়মিত না হলেও রশিদ যে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে জানেন সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে শেষ ওভারে তিন ছক্কায় বাইশ রান তাড়া করে দলকে জেতানোর পাশাপাশি চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১২ বলে ৪০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। লোয়ার অর্ডারে নেমে যেন ফিনিশার সত্ত্বারই জানান দিচ্ছিলেন এই তারকা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও রশিদের ব্যাটিং পরিসংখ্যান মন্দ নয়। গড় মাত্র ১৫ হলেও স্ট্রাইকরেট বেশ চমকজাগানিয়া, ১২৮। মঞ্চটা বদলে ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট হলেই স্ট্রাইকরেটটা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৫০ ছুঁইছুঁই।
আইপিএলের শুরুটা সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ দিয়ে হলেও হত মৌসুমেই দল বদলে নাম লিখিয়েছেন গুজরাট টাইটান্সে। প্রথম মৌসুমেই দলকে শিরোপা জেতানোর পথে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। এবারের মৌসুমেও ২৩ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় সবার উপরেই আছেন এই তারকা।
তবে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ম্যাচে যেন লেগস্পিনার পরিচয়কে ছাপিয়ে গেল রশিদের অলরাউন্ডার সত্ত্বা। সুরিয়াকুমার যাদবের ব্যাটিং তান্ডবে টাইটান্সের বাকি বোলাররা যেখানে ছন্দ হারিয়েছেন সেখানে রশিদ ছিলেন বরাবরেই মতোই অবিচল। শুরুতে বোলিংয়ে এসে দুই ওপেনারকে ফেরানো পর রানবন্যায় বাঁধ দিয়েছেন পরের স্পেলেও। শেষপর্যন্ত চার ওভারে ৩০ রান দিয়ে চার উইকেট শিকার করেন এই তারকা।
তবে রশিদ মূল চমকটা দেখিয়েছেন ব্যাট হাতে। ২১৯ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি টাইটান্সের কোনো ব্যাটারই। ফলে রশিদ ব্যাটিংয়ে আসার আগেই ম্যাচ কার্যত শেষ। কিন্তু নেমেই পাল্টা আক্রমণে নিষ্প্রাণ এক ম্যাচেই যেন প্রাণ ফিরিয়ে এনেছিলেন এই তারকা।
একের পর এক ছক্কায় রীতিমতো ম্যাচ জিতিয়েই ফেলেছিলেন দলকে। তাঁর মারমুখী ব্যাটিংয়ের সামনে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি মুম্বাইয়ের কোনো বোলারই। শেষপর্যন্ত তিন চার আর দশ ছক্কায় ৩২ বলে ৭৯ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন এই তারকা। কে জানে হয়তো অপরপ্রান্তে একটু সহায়তা পেলে ম্যাচটা জিতিয়েই ফিরতেন রশিদ।
এমন দুর্দান্ত ইনিংসের পর লেগস্পিনার পরিচয়টা বদলে এখন থেকে অলরাউন্ডার ডাকলেই বোধহয় বেশি খুশি হবেন রশিদ খান।