আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাক

ইফ আই লিভ হেয়ার টুমরো

উড ইউ স্টিল রিমেম্বার মি?

এই দুটি লাইন সাউদার্ন আমেরিকান রক ব্যান্ড লিনার্ড স্কিনার্ডের বিখ্যাত গান ফ্রিবার্ডের। গানটির মূল গীতিকার ব্যান্ডের ভোকাল রনি ভ্যান্ট জ্যান্ট। কোনো বিশেষ ত্বত্ত্ব অনুসন্ধান করতে হবে না এই দুটি গানের অর্থ বুঝতে কিংবা করতে হবে না কোনো ডিকশনারির সন্ধান।আজ যদি চলে যাই কাল কে আমার খবর রাখবে কে আমাকে মনে রাখবে।

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিলো রনি। বাবাকে প্রায় বলতো আমি তিরিশ বছরের আগেই মারা খাবো, ব্যান্ডমেটদেরও এই কথা বলতেন। বিমান দুর্ঘটনায় রনি যখন মারা যান তার বয়স ছিল মাত্র ২৯। এই মানুষগুলো কেমন জানি। কবে হারিয়ে যাবে তাঁরা ঠিকই জানেন।

রনির কথা বললাম। এবার বলি ২২ বছর বয়সী ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক লিয়াম হুয়েলেনের কথা। ক্লাব ফুটবলে নিজেরদের প্রতিষ্ঠিত করার লড়াইয়ে এগুচ্ছে তার দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সেরাদের সেরা হবার দৌড়ে ম্যাট বাসবির দল কোয়ার্টার ফাইনালে রেডস্টার বেলগ্রেডের মাঠ থেকে জয় নিয়ে ফিরছে। ১৯৫৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি।

মিউনখে লিয়াম আর তার দলকে বহনকারী বিমান। বরফে আচ্ছন্ন মিউনিখ থেকে যাত্রা শুরু করবে বিমানটি। ছাড়পত্র পেয়েই উড়তে যাবেন এমন সময় ইঞ্জিনে অদ্ভুত রকমের শব্দ করা শুরু হলো। স্বাভাবিকভাবেই মনে হলো মাত্রই জ্বালানি নিয়েছে দেখেই হয়তো এমন করছে। আবার যাত্রা শুরু, কিন্তু মাত্র ৪০ সেকেন্ড পরেই আবার বিমানের অদ্ভুত আচরণ শুরু।

পাইলট জেমস থেইন আর কো-পাইলট কেনিথ রেমন্টের এখনো পুরো আস্থা আছে দ্যা লর্ড বার্গ্লির উপর (বিমানের নাম)।থ্রটলটিকে আস্তে আস্তে ছেড়ে দিয়ে তারা আবার চেষ্টা করলেন উড্ডয়নের কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। দুই পাইলট এবার সিদ্ধান্ত নিলেন টার্মিনালে ফিরে আলোচনা করবেন সবার সাথে হচ্ছেটা কী!

সকল টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান করে আবার যাত্রা শুরু দ্যা লর্ড বার্গ্লির। দুই পাইলট বাদে অন্যরা চেয়েছিলো মিউনিখে থেকে পরেরদিন যেতে।এবার উড়তে সমস্যা হলো না দেখে পাইলটরা বেশ খুশি। টিমের কেউ মৃত্যু নিয়ে আলোচনা শুরু করলে লিয়াম হুয়েলেন বললেন তিনি মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত।

রানওয়ে ছেড়ে উড়বে ঠিক ঔ সময়ে বিস্ফোরণের শিকার দ্যা লর্ড বার্গ্লি। লিয়াম হুয়েলেন তার বলা কথার রেষ কাটতে না কাটতেই শেষ। রনি আর লিয়াম যেন এক।তাদের কথা মিশে একাকার। তাদের অনুভূতিও। লিয়াম হুয়েলেন, ডানকান এডওয়ার্ডসসহ মোট আটজন ইউনাইটেড প্লেয়ার সেদিন মারা যান।

যাদের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে অগনিত মানুষ। সেই আটজনের মধ্যে ডানকান এডওয়ার্ডস মারা যান ১৫ দিন পরে, হাসপাতালে। এই ছেলেটির ছিলো বিশ্বজয় করার ক্ষমতা। হতে পারতো তারকাদের তারকা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। ভেঙে পড়া ক্লাব, ক্লাবের মানুষদের নিয়ে নতুন করে বেঁচেছিলেন কোচ ম্যাট বাসবি।

তখনকার রিয়াল মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট সান্তিয়াগো বার্নাব্যু ওই সালে নিজেদের জেতা চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফিটি ইউনাইটেডকে দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, রাজি হননি বাসবি। এমনকি তখনকার সবচেয়ে বড়ো তারকা আলফ্রেডো ডি স্টেফানোকেও লোনে দিবেন বলেছিলো যাতে ভেঙে পড়া ক্লাব উঠে দাঁড়াতে পারে। স্টেফানোকেও নিলেন না বাসবি।প্রথম নিজে শক্ত হলেন, মনে সাহস ফিরে পেলেন, ক্লাবে সাহসের সঞ্চার করলেন। ইউনাইটেড আবার নিজেদের ফিরে পেতে শুরু করলো।

অ্যারিস্টটলের মতে ট্রাজেডির ছয়টি অংশ থাকে। প্লট,ক্যারেক্টর, ভার্বাল এক্সপ্রেশনসহ আরো কয়েকটি। রনি কিংবা লিয়াম বাস্তব ট্রাজেডির চরিত্র। রনি, লিয়ামের সাথে তাদের সহকর্মীরাও। সফোক্লিসের এডিপাস বা হোমারের ট্রয়, ট্রাজেডি শব্দ শুনলেই এদের কথা মনে আসে।

সফোক্লিস-হোমারদের তুলনা নেই, এডিপাস-ট্রয়ের কাহিনি অনন্তযৌবনা। এসব ট্রাজেডির পরবর্তী কাহিনি কেউ জানে না,জানার ইচ্ছা থাকেনা। কিন্তু মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া ট্রাজেডির পরের কাহিনিও ট্রাজেডি। এই নতুন ট্রাজেডিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেঁচে থাকতে হয়, শিখতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link