২০০৭-এর প্রতিশোধ ২০২৩-এ!

একটা দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছে বাংলাদেশ। বিদেশের মাটিতে এমনিতেও বাংলাদেশের জয়ের স্মৃতি খুব একটা সমৃদ্ধ নয়। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সেটা প্রায় শূন্যের কোটায়। স্বাগতিকদের বিপক্ষে নেপিয়ারে পাওয়া জয়টিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম জয়।

ব্যাটিং-বোলিংয়ে দাপট দেখিয়ে নিউজিল্যান্ডকে কুপকাত করেছে টাইগাররা। এই জয় স্রেফ একটা জয় নয়। এই জয় একটা প্রতিশোধও বটে। প্রায় ১৪ বছর আগের এক লজ্জার প্রতিশোধ। নিউজিল্যান্ডের ঘরের মাটিতে যেন লজ্জার খানিকটা ফিরিয়ে দেওয়া গেল।

২০০৭ সালে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত পা রেখেছিল নিউজিল্যান্ডে। যথারীতি বাংলাদেশ খুব একটা পাত্তা পায়নি পুরো সিরিজ জুড়ে। মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন দলটি নেহায়েত নাকানিচুবানি খেয়েছে।

বঞ্চনার চূড়ান্ত প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। এমনই এক ডিসেম্বরের শেষদিন আয়োজিত হয়েছিল ম্যাচটি। ব্ল্যাকক্যাপসদের যেন ছিল বড্ড তাড়া। নতুন বছর উদযাপনের নিশ্চয়ই বিস্তর পরিকল্পনা ছিল তাদের। ঠিক সে কারণেই লজ্জার সাগরে ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে।

সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ৯৩ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ব্রেন্ডন ম্যাককালামের সেদিন যে কি হয়েছিল! বেধম প্রহারে দিশেহারা বাংলাদেশের বোলারর। ছয় ওভারেই খেলা শেষ। ম্যাককালাম ২৮ বলে অপরাজিত থাকলেন ৮০ রান করে। বাইশ গজের আরেক প্রান্তে দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন জেমি হাউ। ৮ বল খেলার সুযোগ তাকে দিয়েছিলেন ম্যাককালাম।

এমন লজ্জার এক স্মৃতি নিয়েই নতুন বছরে পদার্পণ করতে হয়েছিল বাংলাদেশ দলকে। প্রায় ১৪ বছর পর যেন বুকে বিঁধে থাকা কাটার যখম যেন খানিকটা স্বস্তি পেল। সেই স্বস্তিটা তো এনে দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

এবার মাত্র ৯৮ রানেই নিউজিল্যান্ডকে অলআউট করে দিয়েছে বাংলাদেশ। তানজিম হাসান সাকিব, শরিফুল ইসলাম, সৌম্য সরকারদের কাছে নেপিয়ারে অসহায় আত্মসমর্পণ ব্ল্যাক্যাপসদের। ঠিক সেই সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচেই ঘটলো একই রকম ঘটনা।

দারুণ খেলতে থাকা এনামুল হক বিজয়ের উইকেটের পতন না ঘটলে দশ উইকেটের জয়ই পেয়ে যেত বাংলাদেশ। এবারে ম্যাককালামের ভূমিকায় যে অবতীর্ণ হয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত নিজেই। আগ্রাসী ভঙ্গিমায় জয় এনেছেন দ্রুততার সাথে। নিউজিল্যান্ডের সেই নিষ্ঠুরতা অবশ্য ছাপিয়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। জয় পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৫ ওভার অবধি।

তবুও দিনশেষে যে কোন প্রথমই বেশ রোমাঞ্চের জন্ম দেয়। সময়ের বুকে আলাদা দাগ কেটে যায়। আর তা যদি হয় ঠিক ঠিক আগের কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কিন্তু নিজেদের পক্ষে, তাহলে নিশ্চয়ই আনন্দ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। যদিও সন্তুষ্টির ঢেঁকুর তুলতে নারাজ বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।

এটাই বরং মানসিকতার বিশাল পরিবর্তনের ইঙ্গিত। বাংলাদেশ অন্তত একটি-দুইটি জয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায় না। জয় পেতে চায় প্রতি ম্যাচে। দাপটের সাথেই পরাজিত করতে চায় প্রতিপক্ষকে। বিশ্বকাপের গ্লানি ধুয়ে নতুন উদ্দ্যমে এগিয়ে যেতে চান শান্ত ও তার দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link