একটি ট্রান্সফার, আজীবনের কান্না

ইডেন হ্যাজার্ডের কথাই হচ্ছে যে তার প্রতিভার বলে প্রিমিয়ার লিগে দাপট দেখিয়ে বেড়িয়েছেন। তবে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর তার ইউরোপিয়ান ক্যারিয়ারটি খুব ভালোভাবে শেষ হয়নি।

একটি ট্রান্সফার কি বদলে দিতে পারে একজন প্রতিভাবাবান খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার? হ্যা বিশ্বে এমন অনেক খেলোয়াড়ই রয়েছেন যারা শীর্ষ ক্লাব গুলোতে গিয়ে রচনা করেছেন অনন্য ইতিহাস। তবে ইডেন হ্যাজার্ডের ক্ষেত্রে যেন ব্যতিক্রমী এক ঘটনা ঘটেছে। হ্যাঁ, সেই ইডেন হ্যাজার্ডের কথাই হচ্ছে যে তাঁর প্রতিভার বলে প্রিমিয়ার লিগে দাপট দেখিয়ে বেড়িয়েছেন। তবে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর তার ইউরোপিয়ান ক্যারিয়ারটি খুব ভালোভাবে শেষ হয়নি।

৭ জানুয়ারি ১৯৯১ সালে বেলজিয়ামে ইডেন মাইকেল ওয়াল্টার হ্যাজার্ড জন্মগ্রহণ করেন। তার ফুটবলীয় হাতেখড়ি হয় ফ্রান্সের ক্লাব লিলের হাত ধরে। পরবর্তীতে তিনি লিলের মূল দলের হয়েও খেলেছেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তিনি লীলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম মৌসুমেই তিনি ফ্রেঞ্চ লিগের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের খেতাব জিতেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ফরাসি লিগের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবও জিতেছিলেন।

তিনি লিলের হয়ে মোট ১৪৭ টি ম্যাচ খেলে ৩৬ টি গোল করেছিলেন। তার অসাধারণ ড্রিবলিং ক্ষমতা এবং বল রাখার ক্ষমতা সকলকেই মুগ্ধ করেছিল। তার এই দক্ষতার মাধ্যমে তিনি সকল ইউরোপিয়ান ক্লাব গুলোর নজর কেড়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে তিনি চেলসিতে যোগদান করেন।

এই বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই চেলসিতে কাটিয়েছেন। চেলসিতে তিনি খুব দ্রুতই মানিয়ে নেন। তার প্রথম মৌসুমেই চেলসির হয়ে ইউইএফএ ইউরোপা লিগ জিতেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি চেলসির হয়ে লিগ কাপ এবং প্রিমিয়ার লিগও জিতেছেন। তিনি চেলসিতে ২০১২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত খেলেছেন। তিনি মোট ২৪৫ ম্যাচ খেলে ৮৫টি গোল করেছেন।

তিনি চেলসির হয়ে বেশ কিছু শিরোপাও জিতেছেন। তিনি চেলসির হয়ে দুইটি প্রিমিয়ার লিগ, একটি এফএ কাপ, একটি লিগ কাপ এবং দুইটি ইউরোপা লিগ জিতেছেন।

তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও মন্দ ছিল না। তিনি বেলজিয়াম জাতীয় দলের হয়ে মোট ১২৬ টি ম্যাচ খেলেছেন এবং গোল করেছেন ৩৩ টি। বেলজিয়ামকে তিনি ২০১৮ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অধিকার করতে সাহায্য করেছিলেন।

তার অতুলনীয় প্রতিভায় সকলে মুগ্ধ ছিল। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে এক উচ্চ প্রত্যাশা নিয়ে তিনি ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে যোগদান করেন। তবে তিনি কখনোই সেই প্রত্যাশার উচ্চতা ছুঁতে পারেননি।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো চলে যাওয়ার পর ২০১৯ সালে হ্যাজার্ডকে দলে ভেড়ায় রিয়াল মাদ্রিদ। রোনালদোর শূন্যতা পূরণের আশায় হ্যাজার্ডকে দলে আনা হয়। সকলের আশা ছিল যে তার অসাধারণ ড্রিবলিং ক্ষমতা এবং তার প্রতিভা রিয়াল মাদ্রিদের জন্য এক অনন্য অস্ত্র হয়ে উঠবে। তবে তার ভাগ্যে যেন ছিল শুধুই হতাশা।

ইনজুরি, ফিটনেস সমস্যা, আত্মবিশ্বাসের অভাব এসবই যেন কাল হয়ে দাঁড়ালো দার ক্যারিয়ারে। ক্যারিয়ারে বারবার ইনজুরিতে পড়েছেন তিনি। সকলের উচ্চ আশা পূরণ করতে ব্যার্থ হওয়ায় তার আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে তিনি ফুটবল মাঠে তার সেরা খেলা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হন। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তিনি চার বছরে মাত্র ৫৪ টি ম্যাচ খেলেছেন এবং গোল করেছেন মাত্র চারটি গোল।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তিনি বেশ কিছু শিরোপাও জিতেছেন। উল্লেখযোগ্য দুইটি লালিগা, একটি কোপা দেল রে, একটি লিগ কাপ, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, একটি ইউইএফএ সুপার কাপ। তবে এই সকল শিরোপা জিততে যে তার অবদান কতটুকু তাতে বেশ সন্দেহ রয়েছে।

ইডেন হ্যাজার্ডের গল্প একটি স্মরণীয় শিক্ষার মতো। যা প্রতিভা এবং পরিশ্রমের ভারসাম্যের প্রয়োজনীয়তা বোঝায়। চেলসিতে তার অসাধারণ ক্যারিয়ার ফুটবলের স্বপ্নপ্রদীপের মতো উজ্জ্বল ছিল। তবে রিয়াল মাদ্রিদে তার অধ্যায় যেন এই কথা মনে করিয়ে দেয় যে, প্রতিভা থাকলেই সবসময় সফল হওয়া যায় না। ইচ্ছাশক্তি, ফিটনেস এবং মানসিক দৃঢ়তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

শেষমেশ, ইডেন হ্যাজার্ডের নামটি আমাদের মনে করিয়ে দিবে —ফুটবল জীবনের যেমন উত্থান আছে, তেমনই আছে অবধারিত পতনের সম্ভাবনা।

Share via
Copy link