প্রতিভাবান নন, পরিশ্রমী

তিনি একবার বলেছিলেন, ‘সুযোগ পেলে আমি সাকিবের আশেপাশেই থাকতাম।’ বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের সাথে করা এই তুলনাটা আমজনতা মেনে নেয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট পরিমান ট্রলের শিকার হন তিনি। কেউ কেউ তো নামের আগে ‘স্যার’ শব্দটাও বসিয়ে দেয়। যদিও, সেটা গায়ে মাখেন সামান্যই। অনেক প্রতিভাবান তিনি নন, তবে পরিশ্রমটা চালিয়ে যান নিয়মিতই। সেখানেই তিনি আলাদা।

তিনি একবার বলেছিলেন, ‘সুযোগ পেলে আমি সাকিবের আশেপাশেই থাকতাম।’ বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের সাথে করা এই তুলনাটা আমজনতা মেনে নেয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট পরিমান ট্রলের শিকার হন তিনি। কেউ কেউ তো নামের আগে ‘স্যার’ শব্দটাও বসিয়ে দেয়।  যদিও, সেটা গায়ে মাখেন সামান্যই। অনেক প্রতিভাবান তিনি নন, তবে পরিশ্রমটা চালিয়ে যান নিয়মিতই। সেখানেই তিনি আলাদা।

তিনি হলেন ফরহাদ রেজা। তাঁর ব্যাপারে নিন্দুকেরা বলেন, ‘বোলিংটাও ঠিক মত হয় না, ব্যাটিংটাও না। ফিল্ডিংটাও সেকেলে।’ তারপরও তিনি নিজেকে সাকিবের সাথে মেলান। মেলান কারণ, তিনি আর সাকিব সমসাময়িক ক্রিকেটার। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে দু’জনই সমান প্রতিভাবান বলে বিবেচিত হতেন।

২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে এক সাথে তিন তরুণের অভিষেক হয়। মুশফিকুর রহিম বাদে বাকি দু’জন হলেন সাকিব আর ফরহাদ। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রথমবারের মত জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপান। সেদিন বাংলাদেশের ইনিংসের একমাত্র হাফ সেঞ্চুরিটা এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে।

৫৭ বলে ৫০ রান। চারটি চার, একটি ছক্কা। আদর্শ এক ওয়ানডে ইনিংস। সাথে খালেদ মাসুদ পাইলটের সাথে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৭১ রান – এর বেশি কি আর চাই! অথচ, মাত্র ৩৪ ওয়ানডে আর ১৩ টি টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে সেটাই হয়ে রইলো ফরহাদ রেজার একমাত্র হাফ সেঞ্চুরি।

জাতীয় দলে তাঁকে শেষ দেখা গেছে ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। আট বছরের এই ক্যারিয়ারে অসংখ্যবার দলের বাইরে গেছেন, ফিরেছেন। নিষিদ্ধ ক্রিকেট আসর ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল) খেলতে গিয়ে সমালোচিত হয়েছেন, আবার ফিরে জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছেন। তবে, কখনোই স্থায়ী হতে পারেননি জাতীয় দলে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও মনে রাখার মত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি বললেই চলে।

২০১৯ বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দলের খুব কাছাকাছিও চলে এসেছিলেন। তবে, সেই দফায় লাল সবুজ জার্সি শরীরে চাপাতে পারেননি। তবে, ওই বয়সেও যে পরিশ্রম আর পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় দলের জন্য লড়াই করা যায় – সেটা তাঁকে না দেখলে বোঝার উপায় ছিল না। ফলে, ট্রল নয়, কৃতিত্বই প্রাপ্য তাঁর।

পাঁচ উইকেট পেয়েছেন একবার। সেটা ঢাকার মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। এর বাদে বাকি ৪৬ আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাঁর উইকেট মাত্র ২৩ টি। এসব পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে নিন্দুকেরা তাঁর ব্যাপারে কখনোই খুব একটা ভুল বলেনা।

তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স বলে ভিন্ন কথা। এখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর প্রায় পাঁচ হাজারের কাছাকাছি রান, বল হাতে আড়াইশোর ওপর উইকেট। ১৬-১৭ বছরের ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সামান্য সক্ষমতা দিয়ে এই ফরহাদ রেজা যে টিকে আছেন, তার কারণ একটাই অধ্যাবসায় আর পরিশ্রম। অথচ, তাঁর চেয়ে কয়েকশগুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার আমাদের ঘরোয়া সার্কিটে এসেছেন, দুই-এক মৌসুম বাদে ঝরে গেছেন।

হয়তো আরেকটু প্রতিভা থাকলে আন্তর্জাতিকেও টিকে যেতেন। তবে, সেটা না হলেও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল), জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) কিংবা ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের কার্য্যকর পারফরমারদের একজন। আসুন, ট্রল করার পাশাপাশি এই পরিশ্রমটাকেও কৃতিত্ব দিতে শিখি আমরা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...