নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেটে ঝুঁকিটাও বেশি

খানিকটা ভ্রু কুচকে গেছে নিশ্চয়ই। এ আবার কেমন ক্রিকেট! এমন বিষ্ময় জেগে ওঠা স্বাভাবিক। আগের দুই ম্যাচে যে দলটা রেকর্ডের ফুলঝুরি ছড়িয়েছে ব্যাট হাতে। সেই দলটাই ধুঁকছে ব্যাটিং বিপর্যয়ে। তবে শুরু থেকে খেলা দেখা প্রতিটা দর্শক হয়ত উপলব্ধি করতে পেরেছে বাংলাদেশের পরিকল্পনা।

আগের দুই ম্যাচে পাওয়ার প্লে-তে বাংলাদেশ নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড গড়েছিল। তবে চট্টগ্রামে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শুরুর ছয় ওভারে বাংলাদেশ হারিয়ছে চার চারটি উইকেট। তিন উইকেট হারিয়ে তখন স্বাভাবিকভাবেই চাপ এসে ভর করার কথা টাইগারদের মস্তিষ্কে।

বছর খানেক আগের দলটা হলে নিশ্চয়ই কেউ একজন অ্যাংকরিং রোল প্লে করতেন। তবে অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান সে দায়িত্বটা নিলেন না। এমনকি তরুণ কোন ব্যাটারও সেই দায়িত্বটুকু নেয়নি। ঠিক এখানেই ফারাক। ঠিক এখানটায় লেখা হয় বদলে যাওয়ার গল্প। শুরু থেকে একেবারে শেষ অবধি বাংলাদেশের কোন ব্যাটার ক্রিজে থিতু হওয়ার জন্য খেলেননি।

আগের দিনগুলোর মত প্রতিটা ব্যাটার হাতখুলে ব্যাট করেছেন। প্রায় প্রতিটা উইকেট পড়েছে বড় শট খেলার আশায়। অধিকাংশ ব্যাটারই ক্যাচ আউট হয়ে ফিরেছেন। তাতে অবশ্য বাংলাদেশের পরিকল্পনা স্পষ্টভাবেই বোধগম্য হবার কথা। বাংলাদেশ নিজেদের আগ্রাসী ব্যাটিং পরিকল্পনা থেকে একবিন্দু সরে আসতে চায়নি।

উইকেট হারিয়েছে। সে নিয়ে যেন বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা ছিল না গোটা দলের। পাঁচ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে জমা করেছিল ৪১ রান। ঠিক তখনও ডাগ আউটে বসে টাইগার বস চাণ্ডিকা হাতুরুসিংহে বেশ নির্ভার চিত্তেই আলাপ করে যাচ্ছিলেন পাশে বসে থাকা তাসকিন আহমেদের সাথে। তিনি যেন তাসকিনকেও বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, ‘তুমি গিয়েও মেরে খেলবা’।

প্রতিটা ব্যাটারকে ঠিক এই টোটকা দিয়েই পাঠিয়েছিলেন হাতুরুসিংহে। তিনি যেন বলেই দিয়েছিলেন যত যাই হোক অ্যাটাকিং ক্রিকেটটাই খেলা চাই। তাঁর শীষ্যরা সেটাই করে গেছেন পুরো ইনিংস জুড়ে। ব্যাটিং বিপর্যয়ে বাংলাদেশ যখন, ঠিক তখন ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে ভেসে আসছিল একটি প্রশ্ন। বাংলাদেশের দর্শক কিংবা গণমাধ্যম এই দিনগুলোর জন্যে প্রস্তুত কিনা সেই প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল। সে প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছিলেন প্রোটিয়া ধারাভাষ্যকার হিলটন ডিওন অ্যাকারম্যান।

এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া স্বাভাবিক। কেননা আগ্রাসনের দুইটি দিকই রয়েছে। সফলতার সাথে ভরপুর বিনোদন। তেমনি ব্যর্থতার সাথে বিষাদ। তবে এখনই নিরাশ হওয়ার সময় নয়। বাংলাদেশ দল একটা নতুন পদ্ধতি রপ্ত করবার কাজ শুরু করে দিয়েছে। কোন কিছু শেখার পথটা নিশ্চয়ই স্বল্প দূরত্বের নয়। বাংলাদেশকে এখনও বিশাল লম্বা এক পথ পাড়ি দিতে হবে।

তবে সেই পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার সময় এমন বিপর্যয় বহুবার আসবে। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ৬১ রানে সাত উইকেট হারিয়েও শেষ অবধি ১২৪ রান জমা করেছে স্কোরবোর্ডে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার একটা প্রস্তুতি হয়ে গেছে। নতুন এক নায়ক পাওয়া গেছে। এই যে ইতিবাচক দিকগুলো নিয়েও আলাপ হওয়া প্রয়োজন।

কেননা নির্দিষ্ট এক মানসিকতা বেছে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। প্রায় প্রতিটা ব্যাটারই শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছে। সেটা ফর্মের তুঙ্গে থাকা লিটন হোক কিংবা নবাগত রিশাদ হোসেন। এই মানসিকতা অটুট থাকলে ধারাবাহিকতাও একদিন এসে ধরা দেবে। আরও কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাংলাদেশ হয়ত আরও নুইয়ে পড়বে।

তবে তখনও আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে যাবে নিশ্চয়ই। তবে তাতে দর্শক-সমর্থক থেকে শুরু করে গণমাধ্যম, সবার সমর্থন প্রয়োজন। সবার ইতিবাচক সমালোচনা প্রয়োজন। এই যেমন সিরিজের শেষ ম্যাচটায় ব্যাটাররা আরেকটু বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে, নিজেদের শট বাছাই করতে পারতেন। তাছাড়া এই আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার জন্যে যে প্রচুর ক্রিকেটীয় শৈলী আয়ত্ত্বে আনা প্রয়োজন। সেই বিষয়টিও নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

ক্রিকেট বিশ্বের বিবর্তনে এমন আগ্রাসী ক্রিকেটটাই প্রয়োজন। বড় দলের সাথে, বড় লক্ষ্যের বিপক্ষে আগ্রাসনটাই হয় জয় এনে দেবে না হয় পরাজয়। তবে ইতিবাচকতার ধারাবাহিকতা অন্তত বজায় থাকা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link