তবে কি রিয়াদেই মুশকিলে আসান?

সেই মাহমুদউল্লাহর এখন নাকি বয়স হয়েছে। তিনি এখন আধুনিক ক্রিকেটে খুব একটা চলনসই নয়। তেমন এক মতাদর্শ স্থাপন করেই রিয়াদকে রাখা হয়েছে জাতীয় দলের বাইরে।

দিগন্তের পানে চেয়ে রইলেন খানিকক্ষণ। হাত দু’খানা মেলে দিলেন পাখির ডানার মত। যেন উড়ে যেতে চাইলেন। স্বর্গীয় সুখের একটা পরশ তখন যেন ছুঁয়ে দেখলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইতিহাস গড়ার দিনে তো স্বস্তির মসলিন চাদরই জাপটে ধরবার কথা। বেশ সাদা-মাটা এক উদযাপন।

অথচ, ততক্ষণে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মঞ্চায়ন করে ফেলেছেন মনে রাখার মতই এক স্মৃতি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যা অমলিন হয়েই রয়ে যাবে চিরকাল। তিনিই তো প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের মত সুবিশাল এক মঞ্চে গাইলেন বিজয়ের গান। শোনালেন শতকের মধুর সুর। ২০১৫ বিশ্বকাপটা তাই রিয়াদের ক্যারিয়ার হাইলাইটসের অন্যতম সাপ্লাই চেইন।

অ্যাডেলেডে করা সেই সেঞ্চুরির পর আরও একদফা তিন অংকের মাইলফলক ছুঁয়ে দেখেছেন রিয়াদ, ঠিক তার পরের ম্যাচেই। ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের মত দুই ক্রিকেট পরাশক্তির বিপক্ষে গিয়ে বাংলাদেশের একজন বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন। বেশ রোমাঞ্চকর!

তবে সবচেয়ে বড় বিষয় সেই দু’টি ইনিংসে রিয়াদ সামলেছেন দলকে। ধরেছেন ডুবতে থাকা তরীর হাল। ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাট দূর্বার গতিতে ছুটেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৯ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ, সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি দলকে নিয়ে যায় ২৭৫ অবধি। আরেক সেঞ্চুরির দিনে তিনি তো ছিলেন একেবারে শেষ অবধি অপরাজিত।

অপরপ্রান্তে নিয়মিত উইকেট পতনের মিছিলের মাঝে দাঁড়িয়ে নিজে করেছিলেন ১২৮। দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন ২৮৮ অবধি। একটি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। আরেকটি হেরেছিল। তবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নিজের দীর্ঘ ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে হাল ধরার কাজটা করে এসেছেন নিয়ম করেই।

সেই মাহমুদউল্লাহর এখন নাকি বয়স হয়েছে। তা হয়েছে বটেই। তার রিফ্লেক্স কমেছে। তিনি এখন আধুনিক ক্রিকেটে খুব একটা চলনসই নয়। তেমন এক মতাদর্শ স্থাপন করেই রিয়াদকে রাখা হয়েছে জাতীয় দলের বাইরে। এই কথাগুলো একেবারেই অসত্য নয়। কিন্তু বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে মাহমুদউল্লাহর বিকল্প যে বহু চেষ্টা করেও মিলছে না।

বিশ্বকাপের আসরে মাহমুদউল্লাহ কিন্তু ভরসা করবার মতই এক চরিত্র। এখন অবধি তিনটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ তিনি খেলেছেন। যার অধিকাংশ সময়েই তিনি খেলেছেন মিডল অর্ডারের শেষের দিকে। তবুও বিশ্বকাপে তিনি প্রায় ৫১.৩৩ গড়ে রান করেছেন। ঠিক এখানটা তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন আস্থাভাজন হিসেবে।

১৭ ম্যাচে ৬১৬ রান। এসব সংখ্যাতত্ত্ব আবার বেশ গোলমেলে। কিন্তু খালি চোখে বাংলাদেশের ক্রিকেটে নজর রাখা সবারই অন্তত রিয়াদের অবদান বেশ ভালভাবেই জানা। সেসব নতুন করে বলবার প্রয়োজন নেই। কিন্তু স্রেফ বয়সের ভারে অবহেলিত রিয়াদ হয়ে থাকবেন, সেটা কি আদোতে সমীচীন?

রিয়াদ অবশ্য নিজের লড়াইটা নিজে করে যাচ্ছেন। নানা গুঞ্জনের ফাঁকে, সমূহ কিঞ্চিৎ সম্ভাবনাকে পুঁজি করে তিনি প্রস্তুত করছেন নিজেকে। টানা খেলার মধ্যে থাকা বাংলাদেশ দলের নিয়মিত সদস্যরা এখন ছুটি কাটতেই ব্যস্ত। কিন্তু রিয়াদের যে সে সময় নেই। দলের বাইরে ছিলেন তিনি। তার প্রতিটা দিনই ছিল ছুটির দিন। কিংবা কাটিয়েছেন এক বন্দী জীবন।

চিরচেনা হোম অব ক্রিকেটে রিয়াদের বিচরণ শুরু হয়েছে নতুন করে। লোকমুখে শোনা যাচ্ছে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ক্যাম্পে জায়গা হতে পারে রিয়াদের। কিন্তু সেটা গোটা বাংলাদেশ দলের জন্য প্রস্তুতির ক্যাম্প হলেও, রিয়াদের জন্য তা লড়াইয়ের মঞ্চ। রিয়াদ তাই প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রস্তুত করছেন।

ফিটনেসের দিকে নজর দেওয়ার পাশাপাশি, নিজের ব্যাটিং ঝালিয়ে নিচ্ছেন তিনি। যেন হাওয়া ভাসতে থাকা দুর্লভ সুযোগটুকু চোখের পলকে লুফে নিতে পারেন। রিয়াদের প্রতিপক্ষ নয়, বরং প্রতিদ্বন্দ্বী এখন অনেকে। তারা যেমন টিম ম্যানেজমেন্টের গুডবুকে রয়েছেন, তেমনি নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু রিয়াদকে লড়াইটা একাই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। শেষমেশ নিজের শেষ বিশ্বকাপেও মনে রাখার মত কিছু করে যেতে চাইবেন রিয়াদ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...