বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ও সুইপার গুচ

ভারতীয় স্পিন আক্রমণের ‘কাউন্টার’ হিসেবে সেদিন ‘সুইপ’ শটের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন গ্রাহাম গুচ আর মাইক গ্যাটিং। বিশেষ করে গুচের ইম্প্রোভাইজেশন ছিল চোখে পড়ার মত। কনভেনশনাল সুইপের পাশাপাশি স্লগ সুইপ, প্যাডল সুইপ, রিভার্স সুইপ — এমন কোন সুইপ নেই যে তিনি খেলেন নি! অফ স্টাম্প, মিডল স্টাম্প, লেগ স্টাম্প কিংবা অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলেও ইচ্ছেমত সুইপ খেলেছেন।

১৯৮৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে গ্রাহাম গুচের সেঞ্চুরিটা আমার মতে, ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম আন্ডাররেটেড ইনিংস। এমন কি ইউটিউবেও এই ইনিংসের কোন ফুটেজ আজ অবধি কোথাও চোখে পড়ে নি!

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ের উইকেট ছিল স্বভাবসুলভ স্পিন বান্ধব ‘স্লো টার্নার’। দুই স্পিনার রবি শাস্ত্রী ও মনিন্দর শর্মার সুবিধার কথা চিন্তা করে টসে জিতে আগে বোলিং নিয়েছিলেন কপিল দেব। কিন্তু, ওপেনার গ্রাহাম গুচের সেঞ্চুরি (১১৫) ও অধিনায়ক মাইক গ্যাটিংয়ের (৫৬) হাফ সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৫৪ রানের ফাইটিং টোটাল দাঁড় করায় ইংল্যান্ড।

সেদিন ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারের মাঝেই বাঁ-হাতি স্পিনার মনিন্দর সিংকে আক্রমণে নিয়ে আসেন কপিল। আর মনিন্দরের প্রথম বলটাই যে রকম টার্ন করে বেরিয়ে যাচ্ছিল, তা দেখে কপিলের মুখে হাসি ফুটে ওঠাটা ছিল স্বাভাবিক। তবে সে হাসি মিলিয়ে যেতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। প্রথম বলে টার্ন-ফ্লাইটে পরাস্ত গ্রাহাম গুচ দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি হাঁকান সুইপ শটে।

দিনের প্রথম আঘাতটা অবশ্য হেনেছিলেন মনিন্দরই। ৫৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ভারতের সফলতম বোলারও ছিলেন তিনি। উইকেট না পেলেও আরেক স্পিনার রবি শাস্ত্রীও খারাপ করেন নি। তবে গুচ-গ্যাটিংয়ের অনবদ্য ব্যাটিংয়ের সামনে ভারতের স্পিন কোনভাবেই বাঁধা হতে পারেনি।

ভারতীয় স্পিন আক্রমণের ‘কাউন্টার’ হিসেবে সেদিন ‘সুইপ’ শটের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন গ্রাহাম গুচ আর মাইক গ্যাটিং। বিশেষ করে গুচের ইম্প্রোভাইজেশন ছিল চোখে পড়ার মত। কনভেনশনাল সুইপের পাশাপাশি স্লগ সুইপ, প্যাডল সুইপ, রিভার্স সুইপ — এমন কোন সুইপ নেই যে তিনি খেলেন নি! অফ স্টাম্প, মিডল স্টাম্প, লেগ স্টাম্প কিংবা অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলেও ইচ্ছেমত সুইপ খেলেছেন।

গুচের ইনিংস সম্পর্কে উইজডেন বলছে, ‘চোখের সামনে যা আসছিল তাই তিনি সুইপ করছিলেন। সামনে পায়ে ভর দিয়ে ফ্ল্যাট ব্যাটে বলগুলো মিড উইকেট আর ফাইন লেগের মাঝ দিয়ে দিয়ে মারছিলেন।’

২৫৫ রানের লক্ষ্যটা খুব বড় না হলেও ইংলিশ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে এক পর্যায়ে খেই হারিয়ে ফেলে কপিলস ডেভিলস। ২৭ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয় ২১৯ রানে।

২০৪/৫ থেকে ২১৯/১০! দুর্দান্ত এক স্পেলে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ধস নামান অফ স্পিনার এডি হেমিংস। যার মধ্যে আজহারউদ্দীন (৬৪) আর কপিলের (৩০) উইকেট দুটো ছিল টার্নিং পয়েন্ট। ম্যাচ সেরা গ্রাহাম গুচকে নিয়ে পরদিন পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিল, ‘Graham Gooch swept India out of the world cup.’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...