ওয়ালি হ্যামন্ড: দ্য আন্ডাররেটেড জিনিয়াস

একটা সময় ব্যাটিংয়ের প্রায় সবগুলো রেকর্ডই ছিল তাঁর দখলে। এমনকি বল হাতেও কম যেতেন না তিনি; স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে তিনবার আউট করেছেন টেস্টে! অনেকের চোখে তিনি ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা স্লিপ ফিল্ডার। মোটকথা একজন কমপ্লিট ক্রিকেটার বলতে যা বোঝায়, তিনি ছিলেন ঠিক তাই। বলছিলাম ইতিহাসের অন্যতম আন্ডাররেটেড ‘ব্যাটিং জিনিয়াস’ ওয়াল্টার রেজিনাল্ড হ্যামন্ডের কথা।

একটা সময় ব্যাটিংয়ের প্রায় সবগুলো রেকর্ডই ছিল তাঁর দখলে। এমনকি বল হাতেও কম যেতেন না তিনি; স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে তিনবার আউট করেছেন টেস্টে! অনেকের চোখে তিনি ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা স্লিপ ফিল্ডার। মোটকথা একজন কমপ্লিট ক্রিকেটার বলতে যা বোঝায়, তিনি ছিলেন ঠিক তাই। বলছিলাম ইতিহাসের অন্যতম আন্ডাররেটেড ‘ব্যাটিং জিনিয়াস’ ওয়াল্টার রেজিনাল্ড হ্যামন্ডের কথা।

বিশ দশকের শেষভাগ এবং তিরিশ দশকের পুরোটা জুড়েই ছিল স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের একচেটিয়া আধিপত্য। তাঁর স্কোরিং রেট ছিল অবিশ্বাস্য, রান করেছেন প্রায় একশ ছুঁইছুঁই গড়ে! তো ব্র্যাডম্যানের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জর্জ হেডলি আর ওয়ালি হ্যামন্ড।

ব্র্যাডম্যানের মত অতিমানবীয় গড়ে রান করতে না পারলেও রানসংখ্যায় আবার হ্যামন্ডই ছিলেন এগিয়ে। ১৯২৮ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ওয়ালি হ্যামন্ড। অবশ্য তিনি ম্যাচ খেলেছিলেন ব্র্যাডম্যানের প্রায় দ্বিগুণ!

১৯২৮-১৯৩৯ পর্যন্ত খেলা ৬৯ টেস্টে হ্যামন্ড করেছেন ৬১.৫০ গড়ে ৬১৫০ রান, সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ১৯টি। যেখানে ওই একই সময়ে মাত্র ৩৭ টেস্ট খেলেই ব্র্যাডম্যান করেছেন ৫০৯৩ রান, ৯৭.৯৪ গড়ে! সেঞ্চুরি ২১টি! এছাড়া মাত্র ১৯ টেস্ট খেলা ‘ব্ল্যাক ব্র্যাডম্যান’ জর্জ হেডলির সংগ্রহ ছিল ৬৬.৭১ গড়ে ২১৩৫ রান, সেঞ্চুরি ১০টি।

ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ালি হ্যামন্ড ছিলেন অ্যাটাকিং, ফিয়ারলেস এবং ডমিনেটিং। তবে সহজাত স্ট্রোকপ্লেয়ার হলেও তাঁর ডিফেন্স ছিল সলিড এবং কমপ্যাক্ট। তাঁর ট্রেডমার্ক শট ছিল কাভার ড্রাইভ। বলা হয় যে, ইতিহাসের সবচাইতে নিখুঁত কাভার ড্রাইভটা বোধ হয় হ্যামন্ডই খেলতেন! ইতিহাসবিদ ও লেখক ডেভিড ফ্রিথের ভাষায়, ‘He was the epitome of crease-domination as well as artistry.’

হ্যামন্ড বিখ্যাত ছিলেন তাঁর পাওয়ারফুল ড্রাইভিংয়ের জন্য। বিশেষ করে অফ সাইডে তাঁর চেয়ে ভাল ‘ড্রাইভ’ সম্ভবত আর কেউ খেলতে পারত না। সমসাময়িক ক্রিকেটবোদ্ধাদের মতে, হ্যামন্ডই সর্বকালের সেরা অফ সাইড প্লেয়ার।

প্রায় মিনিমাম এফোর্টেও বলকে খুব জোরে পেটাতে পারতেন হ্যামন্ড। তাঁর ছিল শক্তিশালী ফোরআর্ম; শট খেলার সময় জোরটা আসত মূলত সেখান থেকেই। স্বনামধন্য ক্রীড়ালেখক জিওফ আর্মস্ট্রংয়ের ভাষায়, ‘His great power lay in his driving, which was pure textbook in style, clean, apparently effortless but, through the combination of innate timing and immense strength, often achieving immense velocity.’

হ্যামন্ডের ব্যাটিংয়ে শক্তিশালী দিক ছিল হেড পজিশন, ব্যালান্স এবং ওয়েট ট্রান্সফার । মাথা থাকত সবসময় বলের লাইনে এবং স্থির। ব্যাট সুইং ছিল আগ্রাসী অথচ নিয়ন্ত্রিত; চোখের পলকে পড়ে ফেলতে পারতেন বলের লেন্থ। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে এসেও স্পিনের বিপক্ষে দুর্দান্ত পায়ের কাজ দেখিয়েছেন।

নেভিল কার্ডাসের ভাষায়, ‘He would be down the pitch with unhurried ease and, as he reached the length he wanted, the bat moved with languid certainty through the ball, which flew, with that savage force which was the measure of his hitting, to the place he wished.’

প্যাট্রিক মার্ফির ভাষায়, ‘He was on a different plane—majestic, assured, poised, a devastating amalgam of the physical and mental attributes that make up a great batsman.’

উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকের চোখে ইতিহাসের সেরা চার ব্যাটসম্যানের একজন ওয়ালি হ্যামন্ড। বাকি তিনজন হলেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, ডব্লু জি গ্রেস এবং স্যার জ্যাক হবস। এঁদের মধ্যে হ্যামন্ড ছিলেন শারীরিকভাবে সবচাইতে শক্তিশালী ও ফিট। তিনি ছিলেন বাই বর্ন ন্যাচারাল অ্যাথলেট, দুর্দান্ত ফিল্ডার, দক্ষ অলরাউন্ডার। ছোটবেলায় ফুটবল, অ্যাথলেটিকস, ক্রিকেটসহ প্রায় সব খেলাতেই ছিলেন পারদর্শী।

ব্রিস্টল রোভার্সের হয়ে তৃতীয় বিভাগ ফুটবলও খেলেছেন টানা তিন মৌসুম! ফুটবলে তাঁর পছন্দের পজিশন ছিল রাইট উইং। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে দুটি গোলও আছে তাঁর!

টেস্ট ইতিহাসে শতাধিক (১১০) ক্যাচ নেয়া প্রথম ফিল্ডার হচ্ছেন ওয়ালি হ্যামন্ড। সে যুগের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এটা নিঃসন্দেহে অনেক বড় অর্জন। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে তাঁর ক্যাচের সংখ্যা ৮২০টি; যার প্রায় সবগুলোই ছিল স্লিপে, নির্দিষ্ট করে বললে ‘ফার্স্ট স্লিপ’-এ। সুতরাং পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, কেন তাঁকে ইতিহাসের সেরা বিশেষজ্ঞ স্লিপ ফিল্ডার মনে করা হয়।

উইজডেনের ভাষায়, ‘At slip he had no superior. He stood all but motionless, moved late but with uncanny speed, never needing to stretch or strain but plucking the ball from the air like an apple from a tree.’

টেস্টে ৮৩ এবং ফার্স্ট ক্লাসে ৭৩২ উইকেটের মালিক হ্যামন্ড চিরকালই বোলার হিসেবে ছিলেন আন্ডাররেটেড। মূলত মিডিয়াম পেসার হলেও মাঝেমধ্যে বেশ জোরে বল করতে পারতেন। প্রধান অস্ত্র ছিল সুইং; তবে ন্যাচারাল সাইড অন অ্যাকশনের কারণে বাউন্সও পেতেন চমৎকার। এমনকি অফ স্পিনের হাতটাও মন্দ ছিল না। ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ারে ইনিংসে পাঁচ উইকেট ২২ বার এবং ম্যাচে দশ উইকেট পেয়েছেন ৩ বার। সেরা বোলিং ২৩ রানে ৯ উইকেট! আসলে বোলিং নিয়ে তেমন মনোযোগী বা সিরিয়াস ছিলেন না হ্যামন্ড। খুব প্রয়োজন না পড়লে বল হাতে নিতেও তাঁর ছিল অনীহা।

হ্যামন্ড সম্পর্কে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘He was often too busy scoring runs to worry about bowling.’ বলা হয়ে থাকে, বোলিংটাকে আরেকটু গুরুত্বের সাথে নিলে হয়ত সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হতে পারতেন তিনি!

টেস্টে হ্যামন্ডের ব্যাটিং গড় (৫৮.৪৫) এবং বোলিং গড়ের (৩৭.৮) পার্থক্য ২০ এর বেশি। জেনে নিশ্চয়ই অবাক হবেন যে, ক্রিকেট ইতিহাসে এই কৃতিত্ব আছে শুধুমাত্র স্যার গ্যারি সোবার্স আর জ্যাক ক্যালিসের!

১৯০৩ সালের ১৯ জুন, কেন্টের ডোভেরে জন্মগ্রহণ করেন ওয়ালি হ্যামন্ড। বাবার কর্মসূত্রে ছেলেবেলা কেটেছে হংকং এবং মাল্টায়। তাঁর বাবা উইলিয়াম হ্যামন্ড ছিলেন একজন সেনা কর্মকর্তা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ফ্রান্সে কর্মরত ছিলেন। সেখানেই আততায়ীর গুলিতে নিহত হন তিনি।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাবাকে হারানো হ্যামন্ড যুদ্ধ শেষে মাকে নিয়ে ফিরে যান ইংল্যান্ডে। ভর্তি হন পোর্টসমাউথ গ্রামার স্কুলে। সেখানে ক্রিকেট, ফুটবল দুটোই খেলতেন সমানতালে। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে জীবনের প্রথম সেঞ্চুরিটা হাঁকিয়েছিলেন এক ইন্টার স্কুল টুর্নামেন্টে। ৩৬৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে!

১৯২০ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে গ্লস্টারশায়ারের হয়ে হ্যামন্ডের ফার্স্ট ক্লাস অভিষেক। প্রথম চার ইনিংসে মাত্র ২৭ রান করলেও টিকে যান প্রতিভার জোরে। ১৯২১ সালে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র দুটো; তাও শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তিন ইনিংসে করেছিলেন মাত্র ২ রান! পরের মৌসুমে ম্যাচসংখ্যা বাড়লেও পারফরম্যান্স ছিল অবনতির দিকে। পাঁচ ম্যাচ খেলে করেছিলেন মাত্র ৩২ রান! ব্যাটিং গড় ছিল ১০ এরও নিচে!

এদিকে এমসিসি কর্মকর্তা লর্ড হ্যারিস হঠাৎ আবিস্কার করলেন হ্যামন্ডের জন্ম কেন্টে। কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের নিয়মানুসারে তিনি গ্লস্টারশায়ারের হয়ে খেলতে পারেন না। ফলে পুরো এক মৌসুমের জন্য তাঁকে বহিষ্কার করেছিল কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে তিনি কাউন্টি ক্রিকেটে ফেরত আসেন ১৯২৩ সালে। তাঁর প্রত্যাবর্তনটাও হয়েছিল রাজকীয়। গ্লস্টারশায়ারের হয়ে সারের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হাঁকান সেঞ্চুরি! দুই ইনিংসে করেন ১১০ ও ৯২ রান।

ওই সিজনে আর কোন সেঞ্চুরি না পেলেও ২০ বছরের তরুণ হ্যামন্ডের টেকনিক, স্কিল এবং পাওয়ারফুল স্ট্রোক মেকিং এবিলিটি সবাইকে মুগ্ধ করেছিল। নেভিল কার্ডাস, পেলহাম ওয়ার্নারসহ অনেকেই তাঁকে ‘ইংলিশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ’ বলে রায় দিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছিলেন বল হাতেও। হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে এক ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচও জিতিয়েছিলেন!

পরবর্তী কাউন্টি সিজনগুলোতে হ্যামন্ডের পারফরম্যান্সের ক্রমবর্ধমান উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মত। ১৯২৫ সালে হাঁকানো ৬ সেঞ্চুরির একটা ছিল ওল্ড ট্রাফোর্ডে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে; ২৫০ রানের স্ট্রোক ঝলমলে ইনিংসটির হাইলাইটস ছিল চোখ ধাঁধানো কিছু হুক, লফটেড শট এবং ট্রেডিশনাল কাভার ড্রাইভ। অস্ট্রেলিয়ান পেসার টেড ম্যাকডোনাল্ডের বলে টানা পাঁচটা বাউন্ডারি মেরেছিলেন হুক শটে!

এই ইনিংস দেখে নেভিল কার্ডাস মন্তব্য করেছিলেন, ‘কোন বাইশ বছরের তরুণের খেলা এ যাবতকালের সেরা ইনিংস।’

১৯২৬ সালে এমসিসি একাদশের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিলেন হ্যামন্ড। সেখানে মশার কামড় থেকে এক অজ্ঞাত রহস্যময় ‘জ্বরে’ আক্রান্ত হন তিনি। উন্নত চিকিৎসার অভাবে একসময় তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। দীর্ঘ আট মাস রীতিমতো মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েন তিনি।

অসুস্থতা কাটিয়ে ১৯২৭ সালে আবারও তিনি ফিরে আসেন ক্রিকেটের বাইশ গজে, আগের চেয়ে আরও পরিণত হয়ে। মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত খেলে করেন ৬৯.০৪ গড়ে ২৯৬৯ রান! হাঁকান ১২টি সেঞ্চুরি!

কাউন্টি মৌসুমে তাঁর শুরুটাও হয়েছিল দুর্দান্ত! ডব্লু জি গ্রেসের পর কাউন্টি ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে গড়েছিলেন মে মাসে এক হাজার রান সংগ্রহের কীর্তি! টেস্ট অভিষেকের আগেই জিতে নিয়েছিলেন উইজডেন বর্ষসেরার পুরস্কার।

১৯২৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর, জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হ্যামন্ডের টেস্ট অভিষেক। ব্যাট হাতে ৫১ রান এবং বল হাতে ৩৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে অভিষেকেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। উইজডেনের দৃষ্টিতে, জোহানেসবার্গ টেস্টে ইংল্যান্ডের জয়ের প্রধান ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছিল হ্যামন্ডের বোলিং।

পাঁচ ম্যাচ সিরিজের সবকটি খেলে হ্যামন্ড করেছিলেন ৪০.১২ গড়ে ৩২১ রান। পাশাপাশি বল হাতে ২৬.৬০ গড়ে নিয়েছিলেন ১৫ উইকেট। ১৯২৮ সালের কাউন্টি মৌসুমে হ্যামন্ডের সংগ্রহ ছিল ৬৫.৬৯ গড়ে ২৮২৫ রান, ৩টি ডাবল সেঞ্চুরিসহ! পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ২৩.১০ গড়ে ৮৪ উইকেট।

এছাড়া সেবার বেশ কিছু যুগান্তকারী রেকর্ডেরও জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। ৭৯টি ক্যাচ নিয়ে গড়েছিলেন এক সিজনে সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ড। সারের বিপক্ষে ‘জোড়া’ সেঞ্চুরি হাঁকানোর পাশাপাশি ১০টি ক্যাচ নিয়ে গড়েছিলেন ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ড! যে রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারে নি। উস্টারশায়ারের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ার সেরা ২৩ রানে ৯ উইকেট শিকারের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও নিয়েছিলেন ৬ উইকেট! আবার একই ম্যাচে ব্যাট হাতেও করেছিলেন ৮০ রান!

১৯২৮-২৯ সালে অ্যাশেজ ডেব্যুতেও বাজিমাত করেন ওয়ালি হ্যামন্ড। ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে গড়েন এক সিরিজে নয় শতাধিক রানের বিশ্বরেকর্ড। পাঁচ ম্যাচে চার সেঞ্চুরিসহ তুলে নেন ৯০৫ রান! সিডনি এবং মেলবোর্ন টেস্টে টানা দুই ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরির (২৫১ ও ২০০) পর অ্যাডিলেডে হাঁকান জোড়া সেঞ্চুরি (১১৯* ও ১৭৭)। ওয়ালি হ্যামন্ডের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ইংল্যান্ড সেবার সিরিজ জিতেছিল ৪-১ ব্যবধানে।

১৯২৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চার টেস্টে ৫৮.৬৬ গড়ে ৩৫২ রান করে ইংল্যান্ডের সিরিজ জয়ে (২-০) রেখেছিলেন বড় ভূমিকা। দুটো সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন যার একটি ছিল ম্যাচ উইনিং (১৩৮*) এবং অন্যটি ম্যাচ সেভিং (১০১*)।

১৯৩০ সালের অ্যাশেজকে বলা হয় ‘ব্র্যাডম্যানের অ্যাশেজ’। নিজের প্রথম ইংল্যান্ড সফরেই স্যার ডন করেছিলেন ৯৭৪ রান (১৩৭ গড়ে); হ্যামন্ডের ৯০৫ রানের রেকর্ড ভেঙে গড়েন এক সিরিজে সর্বোচ্চ রানের নতুন বিশ্বরেকর্ড!

ব্র্যাডম্যানের অ্যাশেজে ব্যাট হাতে লক্ষণীয়ভাবে ব্যর্থ ছিলেন হ্যামন্ড। দুটি ফিফটিসহ ৩৪.০ গড়ে করেছিলেন মাত্র ৩০৬ রান! তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছিল লেগ স্পিনার ক্ল্যারি গ্রিমেটের ‘ফ্লিপার’। হ্যামন্ডকে টানা ৫ ইনিংসে আউট করেছিলেন গ্রিমেট। ইংল্যান্ড হেরেছিল ১-২ ব্যবধানে।

১৯৩০-৩১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরে আসে ইংল্যান্ড। তবে ৬৪.৬২ গড়ে ৫১৭ রান করে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ওয়ালি হ্যামন্ড।

১৯৩২-৩৩ সালের ‘কুখ্যাত’ বডিলাইন সিরিজের টপ স্কোরার ছিলেন ওয়ালি হ্যামন্ড। দুটি সেঞ্চুরিসহ ৪৪০ রান করেছিলেন ৫৫ গড়ে; পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। ইংল্যান্ড জিতেছিল ৪-১ ব্যবধানে।

১৯৩৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে হ্যামন্ড করেছিলেন ৫৬৩ রান। ব্যাটিং গড়ও ছিল ৫৬৩! এক সিরিজে সর্বোচ্চ গড়ের যে রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারে নি।

প্রথম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির (২২৭) পর দ্বিতীয় টেস্টে হাঁকিয়েছিলেন অনবদ্য ট্রিপল সেঞ্চুরি (৩৩৬*); ভেঙেছিলেন ১৯৩০ অ্যাশেজে ব্র্যাডম্যানের গড়া ৩৩৪ রানের রেকর্ড। টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস হিসেবে যেটি টিকে ছিল অন্তত পাঁচ বছর।

উল্লেখ্য, সময়ের হিসাবে হ্যামন্ডের ৩৩৬* এখনও টেস্ট ইতিহাসের দ্রুততম ট্রিপল হান্ড্রেড। মাত্র পাঁচ ঘন্টারও কম সময়ে (২৮৮ মিনিট) খেলা বিধ্বংসী ইনিংসটিতে ১০টি ছক্কা মেরেছিলেন হ্যামন্ড যা টেস্টে এক ইনিংসে সর্বাধিক ছক্কার রেকর্ড হিসেবে টিকে ছিল ৬৫ বছর! ১৯৯৭ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ইনিংসে ১২টি ছক্কা মেরে সেই রেকর্ড ভেঙেছিলেন ওয়াসিম আকরাম!

হ্যামন্ড তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় কাটিয়েছেন ১৯৩৩ সালের জুন থেকে ১৯৩৫ সালের জুন পর্যন্ত। এই সময়কালের ভেতরে খেলা ২২ ইনিংসে তাঁর সংগ্রহ ছিল মাত্র ২২.৪০ গড়ে ৪৯৩ রান! পঞ্চাশের কোটা পেরোতে পারেন নি একবারও!

টানা দুই বছরের ভয়ানক রানখরাটা তিনি কাটিয়েছিলেন হেডিংলিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জোড়া ফিফটি (৬৩ ও ৮৭) হাঁকিয়ে। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের আট ইনিংসে চার ফিফটিসহ করেছিলেন ৩৮৯ রান।

১৯৩৬ সালে ভারতের বিপক্ষে পর পর দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির দেখা পান ওয়ালি হ্যামন্ড; ম্যানচেস্টারে ১৬৭ রানের ইনিংস খেলার পর কেনিংটন ওভালে হাঁকান ক্যারিয়ারের পঞ্চম ডাবল সেঞ্চুরি (২১৭)।

ব্যাট হাতে ফিরে পাওয়া দুর্দান্ত ফর্মটা তিনি ধরে রেখেছিলেন ১৯৩৬-৩৭ সালের অ্যাশেজেও। এক সেঞ্চুরিতে ৫৮.৫০ গড়ে করেছিলেন ৪৬৮ রান। এছাড়া বল হাতে ২৫.০৮ গড়ে নিয়েছিলেন ১২ উইকেট।

সিডনি টেস্টে হ্যামন্ডের ‘মহাকাব্যিক’ ২৩১ রানের ইনিংসে ভর করেই ২-০ ব্যবধানে লিড নিয়েছিল সফরকারী ইংল্যান্ড। তবে সিরিজের বাকি অংশটা ছিল কেবলই ব্র্যাডম্যানময়! পরের তিন টেস্টে যিনি উপহার দিয়েছিলেন ২৭০, ২১২ এবং ১৬৯ রানের তিনটি অতিমানবীয় ইনিংস! যার সৌজন্যে ইতিহাসের ‘একমাত্র’ দল হিসেবে প্রথম দুই টেস্ট হেরেও ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

মজার ব্যাপার হল, হ্যামন্ড সম্ভবত তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটা খেলেছিলেন এই সিরিজেই; যেটি ছিল মাত্র ৩২ রানের! মেলবোর্নে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছিল ‘ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত বৃষ্টিভেজা, স্টিকি উইকেটে। রীতিমতো আনপ্লেয়েবল সেই উইকেটের নাম দেয়া হয়েছিল ‘গ্লুপট’!

বিল ও’রাইলি-ক্ল্যারি গ্রিমেট জুটির বিধ্বংসী বোলিংয়ে যথারীতি ইংলিশরা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৭৬ রানে! হ্যামন্ডের ব্যাট থেকে এসেছিল ৩২ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস! অধিকাংশ ক্রীড়া বিশ্লেষকের মতে যেটা হ্যামন্ডের ক্যারিয়ারের সর্বোৎকৃষ্ট ইনিংস। কেবল পরিসংখ্যান দিয়ে যে ইনিংসের মাহাত্ম্য বোঝানো সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, স্যার জ্যাক হবস, জর্জ হেডলি, ভিক্টর ট্রাম্পারদের সাথে স্টিকি উইকেটের অন্যতম মাস্টার ধরা হয় ওয়ালি হ্যামন্ডকেও; যার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন অসংখ্যবার। ১৯৩৭ সালে লর্ডসে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৪০ রানের ইনিংস খেলার পথে হ্যামন্ড ভেঙে দেন স্যার জ্যাক হবসের টেস্ট ক্রিকেটের তৎকালীন সর্বোচ্চ ৫৪১০ রানের রেকর্ড।

১৯৩৩ ও ১৯৩৭ সালের পর ১৯৩৮ সালে তৃতীয়বারের মত এক সিজনে তিন সহস্রাধিক রানের কীর্তি গড়েন হ্যামন্ড।

এদিকে ১৯৩৮ সালের অ্যাশেজের জন্য ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মনোনীত করা হয় ওয়ালি হ্যামন্ডকে। অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক সিরিজে হ্যামন্ডের ব্যাট থেকে আসে ৬৭.১৬ গড়ে ৪০৩ রান। লর্ডস টেস্টে তাঁর খেলা ২৪০ রানের ‘ম্যাচ সেভিং’ ইনিংসটিকে ‘one of the best ever’ বলে স্বীকৃতি দেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, নেভিল কার্ডাস, পেলহাম ওয়ার্নারসহ অনেকেই।

পাঁচ ম্যাচের সিরিজটি শেষ হয়েছিল অমীমাংসিতভাবে (১-১)। উল্লেখ্য, ওভালে সিরিজের শেষ ম্যাচে হ্যামন্ডের ৩৩৬ রানের রেকর্ডটা ভেঙে দেন তাঁরই স্বদেশি লেন হাটন (৩৬৪)। ১৯৩৮-৩৯ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরটা দারুণ কেটেছিল হ্যামন্ডের। পাঁচ টেস্টে তিন সেঞ্চুরিসহ তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৮৭.০ গড়ে ৬০৯ রান।

উল্লেখ্য, এই সিরিজ চলাকালীন টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন ওয়ালি হ্যামন্ড। ভেন্যু ছিল হ্যামন্ডের ‘অভিষেকের ভেন্যু’ জোহানেসবার্গ।

১৯৩৯ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজটা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে হ্যামন্ডের শেষ সিরিজ। টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ সেঞ্চুরিটা (১৩৮) হাঁকিয়েছিলেন এই সিরিজেই। তিন ম্যাচ খেলে করেছিলেন ৫৫.৮০ গড়ে ২৭৯ রান। ইংল্যান্ড জিতেছিল ১-০ ব্যবধানে।

আরও অসংখ্য ক্রিকেটারের মত ওয়ালি হ্যামন্ডকেও অংশ নিতে হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। যোগ দিয়েছিলেন রয়্যাল এয়ার ফোর্সে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হ্যামন্ড খেলেছেন মাত্র ৮টি টেস্ট। এই ৮ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ দুই ফিফটিসহ ৩০.৫ গড়ে ৩৬৬ রান।১৯৪৬-৪৭ সালের অ্যাশেজটা ছিল হ্যামন্ডের ক্যারিয়ারের শেষ অ্যাশেজ। যেটা ইংল্যান্ড হেরেছিল ৩-০ ব্যবধানে।

সিরিজের প্রথম টেস্টটা হয়েছিল ব্রিসবেনে। দুর্ভাগ্যবশত দুই ইনিংসেই ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে হয়েছিল বৃষ্টিভেজা স্টিকি উইকেটে। প্রখ্যাত ধারাভাষ্যকার আর্নেস্ট সোয়ান্টন যে উইকেটের বর্ণনা দিয়েছিলেন এভাবে, ‘England were twice caught on sticky wickets. They stood no chance. On a typical Brisbane sticky the good length ball and the half-volley became almost unplayable. Sometimes it rose chest high. At others it skidded along the ground.’

স্বাভাবিকভাবেই মিলার-লিন্ডওয়াল জুটির বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে টিকতে পারেনি ইংলিশরা। তবে বুক চিতিয়ে লড়েছিলেন একজন; ৪৪ বছরের বুড়ো ওয়ালি হ্যামন্ড! রান করেছিলেন ৩২! মনে আছে, ১৯৩৬-৩৭ অ্যাশেজে ঠিক এরকমই একটা স্টিকি উইকেটে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটা খেলেছিলেন হ্যামন্ড এবং সেটাও ছিল ৩২ রানের!

তো সেদিন কেমন ব্যাটিং করেছিলেন হ্যামন্ড? শুনুন তবে রে লিন্ডওয়ালের মুখ থেকে, ‘He was hit on the body repeatedly. But his concentration never faltered and his skill never waned…This was vintage batting of a kind that probably no Australian could produce.’

ব্রিসবেন টেস্টে ‘বুড়ো’ হ্যামন্ডের ৩২ রানের ইনিংসটার মাহাত্ম্য বোঝাতে সাবেক ওপেনার আর্থার মরিসের একটা মন্তব্যই যথেষ্ট, ‘ক্রিকেট জীবনের সেরা শিক্ষাটা পেয়েছিলাম সেদিন।’

১৯৫১ সালে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট থেকে অবসরের পর দ্বিতীয় স্ত্রী সিবিল নেস-হার্ভিকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান ওয়ালি হ্যামন্ড। সেখানে গিয়ে প্রথমে ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যর্থ হন; তারপর চাকরি নেন একটি অটোমোবাইল কোম্পানিতে। ১৯৫৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে যোগ দেন নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ হিসেবে।

১৯৬০ সালে এক ভয়ানক গাড়ি দুর্ঘটনার কবল থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে ফেরেন তিনি। অবশেষে ১৯৬৫ সালে ৬২ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে তাঁর মৃত্যু হয়।

এবারে চলুন হ্যামন্ডের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যানে একটু চোখ বুলিয়ে আসি।

  • টেস্ট

ম্যাচ- ৮৫। রান- ৭২৪৯। গড়- ৫৮.৪৫। সর্বোচ্চ- ৩৩৬*। সেঞ্চুরি- ২২টি। হাফ সেঞ্চুরি- ২৪টি। উইকেট- ৮৩টি। ক্যাচ- ১১০টি।

  • প্রথম শ্রেণি

ম্যাচ- ৬৩৪। রান- ৫০,৫৫১। গড়- ৫৬.১০। সর্বোচ্চ- ৩৩৬*। সেঞ্চুরি- ১৬৭টি। হাফ সেঞ্চুরি- ১৮৫টি। উইকেট- ৭৩২টি। ক্যাচ- ৮২০টি।

উল্লেখ্য, ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে হ্যামন্ডের চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে শুধুমাত্র স্যার জ্যাক হবস (১৯৯) আর প্যাটসি হেনড্রেনের (১৭০)। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ওয়ালি হ্যামন্ডের ডাবল সেঞ্চুরির সংখ্যা ৩৬টি, ট্রিপল সেঞ্চুরি ৪টি! ডাবল এবং ট্রিপল সেঞ্চুরিতে তাঁর উপরে আছেন শুধুই ব্র্যাডম্যান (৩৭টি ডাবল, ৬টি ট্রিপল)!

একটা লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, হ্যামন্ডের অবিশ্বাস্য কনভার্সন রেট অর্থাৎ ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে কনভার্ট করার ক্ষমতা। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ১৬৭ সেঞ্চুরির পাশে ১৮৫ ফিফটি আর টেস্টে ২২ সেঞ্চুরির পাশে ২৪ ফিফটি। কনভার্সন রেট প্রায় ৫০! সুতরাং বলা যায়, দুটি ফিফটি হাঁকালে তার অন্তত একটিকে সেঞ্চুরিতে রূপান্তর করতে পারতেন তিনি।

ব্যাটসম্যান হিসেবে হোমের তুলনায় অ্যাওয়েতে অধিক সফল ছিলেন হ্যামন্ড। বিদেশের মাটিতে ৪১ টেস্টে তাঁর সংগ্রহ ৬৬.৩২ গড়ে ৪২৪৫ রান। আর দেশের মাটিতে ৪৪ টেস্টে ৫০.০৬ গড়ে ৩০০৪ রান। হ্যামন্ডের প্রিয় প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড। কিউইদের বিপক্ষে ১১২ গড়ে হাঁকিয়েছেন ছয়টি সেঞ্চুরি! এছাড়া ভারতের বিপক্ষে ৭৯, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬২ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রান করেছেন ৫২ গড়ে।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর ৯টি টেস্ট সেঞ্চুরির ৭টিতেই জয় পেয়েছিল ইংল্যান্ড! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এতগুলো ম্যাচ উইনিং হান্ড্রেড ইতিহাসে আর কারও নেই। টেস্টে হ্যামন্ডের পারফরম্যান্স তুলনামূলক বিবর্ণ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ১৩ টেস্টে সেঞ্চুরি মাত্র ১টা! গড় মাত্র ৩৫.৫০!

ওয়ালি হ্যামন্ডের প্রিয় মাঠ ছিল সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড। এখানে মাত্র ৫ টেস্ট খেলে তিনি করেছেন ১৬১.৬০ গড়ে ৮০৮ রান; হাঁকিয়েছেন চারটি শতক এবং একটি অর্ধশতক। উল্লেখ্য, নির্দিষ্ট কোন ভেন্যুতে কমপক্ষে ৫০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ গড় এটাই।

টেস্টে জয়ী ম্যাচে হ্যামন্ডের গড় ৭০। ম্যাচ উইনিং হান্ড্রেড ১০টা। তবে পরাজিত ম্যাচে তাঁর সেঞ্চুরি নেই একটাও। ব্যাটিং গড় মাত্র ২৯! টেস্টের চার ইনিংসেই হ্যামন্ড ছিলেন ধারাবাহিক। ব্যাটিং গড় সবচেয়ে বেশি দ্বিতীয় ইনিংসে (৬৬.০৮), সবচেয়ে কম চতুর্থ ইনিংসে (৪৬.৪৬)।

টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ‘নাম্বার থ্রি’ হলেন ওয়ালি হ্যামন্ড। তিন নম্বর পজিশনে তাঁর ব্যাটিং গড় ৭৪.৭৮! সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ১৪টা। উল্লেখ্য, এই পজিশনে তাঁর চাইতে বেশি গড়ে রান তুলেছেন শুধুমাত্র স্যার ডন ব্র্যাডম্যান (১০৩.৬৩)।

সমসাময়িক ক্রীড়া বিশ্লেষকদের মতে, নতুন বলে সুইংয়ের বিপক্ষে কিছুটা দুর্বল ছিলেন হ্যামন্ড। একটা সময় তো ক্যারিবীয় পেস অলরাউন্ডার লিয়ারি কনটেস্টাইনের ‘বানি’তে পরিণত হয়েছিলেন তিনি; ১০ ইনিংসে আউট হয়েছেন ৮ বার! তবে হ্যামন্ডকে সবচেয়ে বেশিবার আউট করা বোলারের নাম লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইন নয়; সাউথ আফ্রিকার ‘অখ্যাত’ লেফট আর্ম স্পিনার সিরিল ভিনসেন্ট এবং অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিন কিংবদন্তি বিল ও’রাইলি। টেস্টে এঁরা দুজনই হ্যামন্ডকে আউট করেছেন ১০ বার করে।

ব্যাটসম্যান হিসেবে সফলতা পেলেও ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে তেমন একটা সফল হতে পারেন নি হ্যামন্ড। ২০ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জয় পেয়েছেন মাত্র ৪টিতে; তবে হেরেছেন আরও কম, মাত্র ৩টিতে। বাকি ১৩টি টেস্টের ফলাফল ছিল ড্র।

অধিনায়ক হিসেবে হ্যামন্ডের স্মরণীয়তম জয় ১৯৩৮ অ্যাশেজের ‘ঐতিহাসিক’ ওভাল টেস্ট। যে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে এক ইনিংস ও ৫৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়ের কীর্তি গড়েছিল ওয়ালি হ্যামন্ডের ইংল্যান্ড।

শেষ করব একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান দিয়ে। টেস্টে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের বলে আউট হয়েছেন মাত্র ২ জন ব্যাটসম্যান; যাদের একজন ছিলেন ‘দ্য গ্রেট’ ওয়ালি হ্যামন্ড!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...